নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না দিতে শিক্ষা অধিদপ্তর ও দুদকের কড়া নির্দেশনা সম্বলিত চিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রত্যেক স্কুলে স্কুলে পাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সম্যখ অবগত থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: রেজাউল করিম স্কুল পরিচালনা কমিটির যোগসাজশে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একাধিক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদেরকে পাবলিক পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে প্রতিবছর ১০০ থেকে ১২০/৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও ৮ থেকে ১০ জন পাস করে। যার দরুন এই স্বনামধন্য স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের দিন দিন আস্থা উঠে যাচ্ছে।
এইসব ব্যাপারে অভিভাবকেরা দারুন ভাবে ব্যথিত হয়ে পড়েন। তাই অত্র স্কুলের নানা দুর্নীতি অভিভাবকদের নজরে আসলে সামনের (২০২০) এসএসসি পরীক্ষার প্রাক প্রস্তুতি ও টেস্ট পরীক্ষার উপর অভিভাবকেরা গোপনে খবরদারি করে আসছিল। এই অবস্থায় তারা জানতে পারেন পূর্বের ন্যায় এবছরও উক্ত স্কুলের হেডমাস্টার ও পরিচালনা কমিটি অবৈধ আয়ের পায়তারা শুরু করে প্রতি বছরেরমত এবার ও এ স্কুলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে। তাই সরেজমিন তদন্ত করে দুর্নীতির সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য অত্র স্কুলের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বলে অভিযোগকারীরা জানান। অভিযোগটি গত ১৩ নভেম্বর বুধবার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত এবং চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা, সিনিয়র সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা ভবন ঢাকা, উপ পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক চট্টগ্রাম অঞ্চল চট্টগ্রাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কক্সবাজার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদর কক্সবাজার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সদর কক্সবাজারকে সরাসরিও ডাকযোগে অনুলিপি দিয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন অত্র স্কুলের জমি দাতার ছেলে সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার শওকত আলম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্টিত হয়ে অদ্যাবধি গরিব শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে আসছে। অবৈধ নিয়োগে চাকরি পাওয়া প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে অন্যায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন। এমনি তিনি অঢেল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই অতীতে অনেক এই স্কুল থেকে চাকরি হারিয়েছেন। তিনি অনিয়ম ভাবে স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠন করায় ইতিপূর্বে গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ বিভিন্ন অফিসে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় এড হক কমিটি করতে বাধ্য হন। তিনি প্রতি বছর এসএসসির ফরম পূরণের সময় কোচিং ক্লাসের নামে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের কে ফরম পূরণের সুযোগ করে দেন। এই বছর ২০১৯ সালের নির্বাচনী পরীক্ষায় সর্বমোট পরীক্ষার্থী ১০৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে সকল বিষয়ে মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী পাস করে।
মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকা এর স্মারক নম্বর ৩৭০২০০০০, ১০৬.৯৯.০০১,১৫.৪৫০ তারিখ ২১/৪/২০১৬, দুর্নীতি দমন কমিশনের পত্র নম্বর দুদক/প্রতিরোধ/কার্যক্রম/০১( অংশ-২)/১৫/৩৯১০(৪) তারিখ ০৫/২/২০১৮ খ্রি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্র নম্বর ৩৭.০০.০০০০.০৭১.২০৩.১৮.১০৮৭ তারিখ ১৬/৮/২০১৮ খ্রি, এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম, স্বারক নং চশিবো/পরী/মাধ্য/পরি/১(১০)২০১৬/১৯২৯(১৫২০)তারিখ ২৬/৯/২০১৮ ইং এর চিটি মোতাবেক শুধুমাত্র সকল বিষয়ে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের সুযোগের নির্দেশনা থাকলেও তিনি ফেল করা প্রতি বিষয়ে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত ও কোচিং ক্লাসের নামে ১২৫০ টাকা দেওয়ার শর্তে ১ থেকে ৩ বিষয়ে ফেল করা ৭৬ জন সহ সর্বমোট ৮৯ জন শিক্ষার্থীকে ফরম ফিলাপ করিয়েছেন। জন্য নির্বাচিত করলেও ফলাফলের তালিকা এই পর্যন্ত স্কুলের নোটিশ বোর্ডে দেননি। অন্যান্য ফেল করা শিক্ষার্থীরা কোন কোন বিষয়ে ফেল করেছে তাও জানানো হয়নি।”
গোপন সুত্রে জানা যায়, এবারের (২০১৯) টেষ্ট পরীক্ষায় অল বিষয়ে পাস করা ১৩ জন শিক্ষার্থী বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে। কিন্তু উক্ত বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার ও পরিচালনা কমিটির যোগসাজশে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করাদের মধ্যে ৭৭ জন ও পাশ করা ১৩ জন শিক্ষার্থীসহ ৮৫ জনকে বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিদ্যালয় কমিটি গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নীতিমালার আলোকে সরকার যে উদ্দেশ্যে এই পরিপত্র জারি করেছে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মান উন্নয়ন ও প্রশ্নফাঁস রোধের এই সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে ছুটে না। যারা দু`তিন বিষয়ে ফেল করে তারাই আগে থেকে প্রশ্নের পেছনে ছুটে। এছাড়া, অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বর্তমানে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ম্যানেজিং কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর পাবলিক পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক-দুই বিষয়ে ফেল করলে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জরিমানা দিলেই নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস দেখিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি চিঠি পাঠায়। দুদকের চিঠিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। সরেজমিন তদন্ত পূর্বক উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন অভিভাবক।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারীদের একজন মাস্টার রশিদ আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সেও একজন শিক্ষক, নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করা কোন শিক্ষার্থীকে পাবলিক পরীক্ষায় সুযোগ না দেওয়ার জন্য সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরেও প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বিভিন্ন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদেরকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সহ যুগ ধরে নানা দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এমনকি উক্ত স্কুলের শিক্ষকরাও তার হাতে নিত্য হেনস্থা হচ্ছেন। অতীতে অন্যান্য শিক্ষকদের মত প্রতিবাদ করলে চাকরি হারানোর ভয়ে তারাও সবাই মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে। তাই এলাকার একজন সচেতন ব্যক্তি ও অভিভাবক হিসেবে আমার দায়িত্ব ও কর্তব্যের খাতিরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দায়ের করছি। ব্যবস্থা নেওয়া না নেওয়া সরকারের ব্যাপার। সব রকমের ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। এমনকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চাকরি করছে। আমি তাও প্রমাণ করতে পারব।
অভিযুক্ত পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।সরকারি নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু চিহ্নিত লোক অনৈতিক দাবি নিয়ে আমার কাছে আসছিল। আমি সরকারের নিয়ম নীতির বাইরে গিয়ে তাদের খুশি করতে পারিনি। হয়তো তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। প্রশ্নের জবাবে পাস ফেইলের কথা স্বীকার করে হেডমাস্টার বলেন কিছু কিছু মিসটেক হয়েছে। ১০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ জনকে এবার এসএসসির পাবলিক পরীক্ষা দেয়ার জন্য কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা ফরম ফিলাপ করেছি।
এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন খাঁন (সাবেক চেয়ারম্যান) উক্ত স্কুলের ব্যাপারে উঠা অভিযোগের (এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস, ফেইল, ফরম ফিলাপ) কথা স্বীকার করে বলেন সরকারী নীতিমালা অনুসারে যা করার কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হয়েছে।এর বাইরে কিছু করার সুযোগ কারো নাই।