বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

ফিল হিউজ (১৯৮৮-২০১৪)

আপডেট:

তাহমিদ লিয়াম,
শেফিল্ড শিল্ডের সেই ম্যাচে সেদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার কিংবা মিচেল স্টার্কের মতো তারকারাও। এর কয়েকদিন পরই ছিল ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া দলের বিবেচনায় ছিলেন ফিল হিউজ। কথা ছিল যদি ফিল হিউজ ঐ শেফিল্ড শিল্ডে ভালো করেন কেবল তবেই মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ মিলবে তার।

দিনটা ছিল ২৪ নভেম্বর, ২০১৪। নিউ সাউথ ওয়েলসের বোলাররা সেদিন শুরু থেকেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের উপর অনেক আগ্রাসী ছিলেন! কিন্তু হিউজও তো জাতীয় দলে ফিরতে ছিলেন অনেক মরিয়া। তাই যে করেই হোক, ক্রিজে পড়ে থাকতে চেয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

স্টার্ক, বলিঞ্জার, কিংবা শন অ্যাবোটদের একের পর এক ছোড়া বাউন্সার ভালো করেই সামলে নিজের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ৪৬তম অর্ধশতকও তুলে নিয়েছিলেন ততক্ষণে। ১৬০ বলে খেলে ৯টি চারের সাহায্যে ৬৩ রানের ইনিংসটিকে নিশ্চয়ই মনেমনে ২৭ তম ফার্স্ট ক্লাস হান্ড্রেডে রূপ দিতে চাচ্ছিলেন হিউজ।

এই ১৬০ বলের মাঝে তাকে বাউন্সার সামলাতে হয়েছিল ১৯টি। কিন্তু শন অ্যাবোটের ছোড়া ২০তম বাউন্সারটি আর সামলাতে পারেননি। পুল করতে চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ব্যাটটা তখন বেইমানি করে বসলো। ব্যাট-হেলমেটকে ফাঁকি দিয়ে সরাসরি আঘাত হানে মাথার পেছনে হেলমেটের নিচের অংশে৷

বিজ্ঞাপন

বাস! প্রথমে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হারিয়ে ফেললেন জ্ঞানও। মাঠ থেকেই সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে ২ দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর অবশেষে ২৭ নভেম্বর আসলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা৷

ঘোষণাটা ২৪ নভেম্বর মাঠে হারানো সেই জ্ঞান আর কখনো না ফেরার ঘোষণা। কেননা ফিল হিউজ যে ততোক্ষণে সবাইকে কাদিয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়ে ফেলেছিলেন।

ঐ ১৮১ বলে ৬৩ রানের ইনিংসটি শুধু ক্রিকেট ইতিহাসের পাতাতেই নয়, বরং কোটি মানুষের হৃদয়ে অপরাজিত থেকে যাবে আজীবন। নিউ সাউথ ওয়েলস ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি কিন্তু ফিল হিউজ অজ্ঞান হওয়ার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ম্যাচটিকে ড্র ঘোষণা করা হয়।

ফিল হিউজের সেদিন সেঞ্চুরিও করা হয়নি, হয়নি দিন কয়েক পরই মেলবোর্ন টেস্টের মাধ্যমে আবারও জাতীয় দলে ফেরা৷

তার চলে যাওয়া শুধু অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থদেরই চোখে পানি আনেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন বন্ধু কেন উইলিয়ামসন। ম্যাচের আগেরদিন হিউজের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার খবর পেয়ে নাকি কান্না করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনও। সেই ম্যাচে কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম করেছিলেন ডাবল হান্ড্রেড এবং ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়ে যায় কেন উইলিয়ামসনের। কিন্তু দুইজনই হিউজের জন্য তাদের ইনিংসগুলো উৎস্বর্গ করেছিলেন।

২০০৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলা মোট ২৬টি টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিসহ মোট করেছিলেন ১,৫৩৫ রান যেখানে সর্বোচ্চ ১৬০।

২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দশম উইকেটে অ্যাশটন অ্যাগারকে সাথে নিয়ে নটিংহামে ১৬৩ রানের যেই জুটি গড়েছিলেন, সেটা এখানো টেস্টে দশম উইকেটে ২য় সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশীপ হিসেবে টিকে আছে। ‘লিটল ডন’ খ্যাত হিউজ সেদিনও ২২২ বল খেলে ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

২৫ ওয়ানডেতে ৪ হাফসেঞ্চুরি ও ২ সেঞ্চুরিসহ মোট ৮২৬ রান এবং সর্বোচ্চ ১৩৮*। জীবনে খেলা একটি মাত্র টি-টোয়েন্টিতে ৬ রানের বেশী করতে পারেননি হিউজ।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তার। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট ১১৪ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ২৬ সেঞ্চুরি ও ৪৬ হাফসেঞ্চুরিসহ ৪৬.৫১ গড়ে তার মোট রান ছিল ৯,০২৩; সর্বোচ্চ ২৪৩*। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে ২ ইনিংসেই সেঞ্চুরির রেকর্ডটি কিন্তু ‘হিউজি’-এরই দখলে।

খেলার অভিজ্ঞতা আছে মিডেলসেক্স, হ্যাম্পশায়ার ও ওরসেস্টারশায়ারের মতো কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও। এছাড়া ২০১৩-১৪ বিগ ব্যাশে খেলেছিলেন অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের হয়ে, যেখানে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন সাকিব আল-হাসানকে।

অস্ট্রেলিয়ার ৪০৮ তম টেস্ট ক্রিকেটার ফিল হিউজের জন্ম হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বর নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাক্সভিলে। এবং ২৬তম জন্মদিনের ঠিক ৩ দিন আগে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর সিডনিতে নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দারুণ সম্ভাবনাময় তরুণ এই বাহাতি ব্যাটসম্যান যার পুরো নাম ফিলিপ জোয়েল হিউজ৷

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত