সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫

চট্টগ্রামে উদ্বোধন হলো দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চতার ভাস্কর্য “বজ্রকন্ঠ”

আপডেট:

আরিফুল ইসলাম, হালিশহর প্রতিনিধি:

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”
“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”

বিজ্ঞাপন

যে বজ্রকণ্ঠে সমগ্র বাঙালি জাতিকে সেদিন ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সময়ের সাহসী কন্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।সময়ের পরিক্রমায় চলে এলো দীপ্ত কন্ঠের বজ্রধ্বনি কাঁপানো জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী। তার স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে মূর্ত করে রাখার জন্য চট্টগ্রামে আগ্রাবাদের বড়পুল মোড়ে নির্মিত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চতার সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘বজ্রকন্ঠ’।মূলত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের আগ্রহ ও উদ্যোগের কারণে এই ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। সমকালীন ইতিহাসের কালজয়ী এই মহানায়ক যাতে নতুন প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকে সেই লক্ষ্য সু-পরিকল্পনার সাথে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।

আজ(২৯ই জুলাই) বুধবার সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বড়পুল মোড়ে নির্মিত এই ভাস্কর্য ” বজ্রকণ্ঠ” উদ্বোধন করেন নগর পিতা,ও বর্তমান সিটি মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম হালিশহরের ২৫নং রামপুর ওয়ার্ড এর নির্বাচিত কাউন্সিলর জনাব এস.এম.এরশাদ উল্লাহ, নির্মিত ভাস্কর্যের ভাস্কর ওবর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট এর সহকারী অধ্যাপক মোঃআতিকুল ইসলাম,নির্মিত ভাস্কর্যের পরামর্শক ওবিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জনাব আহমেদ ইকবাল হায়দার,হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জনাব রফিকুল আলম,বর্তমান ও সাবেক বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ। এসময় ভাস্কর্য উদ্বোধন শেষে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দোয়া ও মোনাজাত শেষে নির্মিত ভাস্কর্যের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দিন দৃষ্টিনন্দন এই ভাস্কর্যটি ঘুরে দেখেন এবং এটিকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন ৷পরে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এসময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ভাস্কর্য নির্মাণের ভাস্কর ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট এর সহকারী অধ্যাপক মোঃআতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,’বজ্রকন্ঠ’ নামের ভাস্কর্যটি আমাদের জাতির মানষপটে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারবে, দেশবাসীর মধ্যে দৃঢ়তর করতে পারবে ঐক্যের বন্ধন।এসময় তিনি তার বক্তব্যতে নির্মিত ভাস্কর্যের নানান দিক তুলে ধরেন৷এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর বর্তমান মেয়র ও ভাস্কর্য উদ্বোধক জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। এসময় তিনি তার বক্তব্যর শুরুতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন,নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ‘বজ্রকন্ঠ’ শিরোনামে নির্মিত সুবিশাল এই ভাস্কর্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷আমাদের উচিত সকলে মিলেই এই ভাস্কর্য সংরক্ষণে কাজ করা।

নির্মিত ভাস্কর্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন,সাড়ে ২২ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যটির ওজন প্রায় ৩০ টন যা সাদা সিমেন্টের (আর.সি.সি)ঢালাইয়ের মাধ্যমে স্থায়ী রূপপ্রাপ্ত হয়।ভাস্কর্যের জন্য আর সি সি পাইলিং, পাইল কেপসহ ফাউন্ডেশন, ভাস্কর্য নির্মাণ, ভাস্কর্যের চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মান,পার্শ্বস্থ সড়কের উন্নয়ন, সৌন্দর্য্য বর্ধন ও লেন্সকেফিং কাজ সহ আনুষাঙ্গিক নানান কাজে মোট ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছে এই ভাস্কর্যটি৷চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়ন তত্বাবধানে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য্য বর্ধনে লাইটিং সহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে যা পবিত্র ঈদুল আজহার পড়ে সম্পন্ন হবে। দীর্ঘতর সময়কাল স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পানি,অক্সিজেন ও লবণ ঘটিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বিশ্বসেরা কোম্পানি থেকে সংগৃহীত ক্যামিকেল-যৌগ মিশ্রণে সুনির্দিষ্ট অনুপাতে মিশানো হয়েছে। এছাড়া কিউরিং(পানিশোষন প্রক্রিয়া) পর্ব পার করে ভাস্কর্যকে পূর্ণ শুকিয়ে নিয়ে এতে শ্যাওলা প্রতিরোধী ক্যামিকেল স্প্রে( ওয়েদার কোট) ব্যাবহার করা হয়েছে।ভাস্কর্যের সলিডিটির অনুভূতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ” ফেয়ার-ফেস” পদ্ধতিতে এর ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

এসময় তিনি ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে নেপথ্যের কারিগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট এর ততকালীন পরিচালক শিল্পী শায়লা শারমীন,ভাস্কর্যের নকশা প্রনয়ণকারী ও ভাস্কর্য নির্মাণের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনকারী মোঃ আতিকুল ইসলাম, পরামর্শক ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জনাব আহমেদ ইকবাল হায়দার, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে. বি ইন্টারন্যাশনাল পতেঙ্গা চট্টগ্রাম , টেকনিক্যাল সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোঃ তৈয়ব, সহকারী প্রকৌশলী জনাব আনোয়ার জাহান,এছাড়া সিটি করপোরেশন এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা -কর্মচারী সহ সহযোগী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।এ সময় প্রধান অতিথি সিটি মেয়র জনাব আ.জ.নাছির উদ্দিন ভাস্কর্যের সৌন্দর্য রক্ষণে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জনাব রফিকুল আলম সহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল,দায়িত্বরত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ ও জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন এবং তিনি আরো বলেন, এই ভাস্কর্যের আশেপাশে যেনো কোনো হকার না বসে সে বিষয়ে সতর্ক করেন।

এক পর্যায়ে তিনি বলেন,এই ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ থেকে শুরু করে এই ভাস্কর্যটি বাস্তবে রূপ দিতে ১ বছরের ও বেশি সময় লেগেছে৷ ভাস্কর্যটির নামকরণের ক্ষেত্রে বলেন,প্রস্তাবিত অনেকগুলো সুন্দর নামের মধ্যে থেকে সুন্দরতম হিসাবে এই ভাস্কর্যের শিরোনাম ধার্য্য করা হয়েছে ‘বজ্রকণ্ঠ’।এই ভাস্কর্যের অন্যতম একজন সহ-শিল্পী তরুণ ভাস্কর তপন ঘোষ এই নামটি প্রস্তাব করেছিলেন। পরিশেষে বলেন,এমন ভাস্কর্য নিঃসন্দেহে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে এবং দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে ভাস্কর্যটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত