কক্সবাজার প্রতিনিধি,
বার্মার ক্ষমতাসীন সরকারের দমন-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণের ভয়ে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় নেওয়ার কারণে কক্সবাজার জেলায় (চারটি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়ন) জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখেন সরকার। সেই থেকে অদ্যাবধি দুই বছরের অধিক সময় চলে গেলেও সরকার অনলাইন কার্যক্রমের সার্ভার খুলে দিচ্ছিল না। যার কারণে স্থানীয়রা আর্থিক ক্ষতি সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন দৈনন্দিন। জন্ম নিবন্ধন সহ অন্যান্য কাজের সুবিধার্থে অনলাইন সার্ভার খুলে দেয়ার জন্য স্থানীয়রা প্রশাসনের নিকট বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও খুলে দিচ্ছে না। অবশেষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা এই রিটের আবেদন করেন।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়। আবেদনে স্থানীয় সরকার সচিব, স্থানীয় সরকারের বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী নাসরিন কক্সবাজারের একজন বাসিন্দা। রিটে কক্সবাজারের ৪টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধন পুনরায় শুরু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন পুনরায় শুরু করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা জারির আবেদনও জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের স্থানীয় একটি দৈনিকের ‘২০ মাস ধরে বন্ধ জন্ম নিবন্ধন’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট দায়ের করেন তিনি।
আইনজীবী লিনার মতে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভসহ পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য সরকার কক্সবাজারের ৪টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে রাখেন। ফলে কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, বিদ্যালয়ে ভর্তি, পাসপোর্ট গ্রহণ, ভোটার তালিকায় নিজ নাম অন্তর্ভূক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গত মে মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে ‘কক্সবাজার জেলায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। দীর্ঘ সময় ধরে স্থানীয়রা জন্মনিবন্ধন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করলেও বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে অনলাইনের বাধ্যতামূলক জন্ম নিবন্ধন কপি সংযোজন করতে হওয়ায় চরম বিপাকে পড়ছে নতুন ভোটার হতে আগ্রহীরা।স্থানীয়দের অভিযোগ রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের সমস্যার শেষ নেই। তার ওপর দীর্ঘ ২০ মাস ধরে জাতীয় সার্ভার বন্ধ করে রাখা খুবই দুঃখজনক।