মঙ্গলবার, আগস্ট ১৯, ২০২৫

কক্সবাজারে আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা গডফাদাররা জেলে বসেই কলকাঠি নাড়ছে- এড: সিরাজুল মোস্তফা

আপডেট:

কক্সবাজার প্রতিনিধি,
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যারা বিভিন্ন মাদকের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের অধিকাংশ গডফাদার আত্মসমপর্ণ করেছে। আবার কেহ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণে আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর নজরদারির মধ্যেও কোন ভাবেই ইয়াবার গণজোয়ার থামানো যাচ্ছে না। বলতে গেলে শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে।

মাদক পাচারকারীদের নিত্য নতুন কৌশলে অবলম্বন করে মরননেশা ইয়াবা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে দেশের সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। মুলত চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ, উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের গডফাদাররা আত্মসমপর্ণ করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে এই ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক। আর কারাগারে থাকা ইয়াবা গডফাদারদের নিদের্শনায় মূলত মিয়ানমার থেকে এখনো পর্যন্ত ইয়াবা আসা অব্যাহত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার বন্ধ না হওয়ার পেছনে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ ব্যাপারে খোদ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এমনটাই মন্তব্য করেছেন। গত সোমবার অনুষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় তিনি বলেন-যেসব গডফাদার আত্মসমপর্ণ করে কারাগারে রয়েছে সেখানে বসেই আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের ছড়িয়ে থাকা ইয়াবা কারবারীদের।

বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আইন প্রয়োগীকারী সংস্থাকে আহবানও জানান তিনি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মেডিকেলে অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসায়ীর অবস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট সেলে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি’র চার ভাই ও এক আত্মীয় থাকাসহ নানা অভিযোগের কারণে ইতোমধ্যে বদলী করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো: বজলুর রশিদ আখন্দ ও ডেপুটি জেলার অর্পণ চৌধুরীকে। খবর নিয়ে জানা গেছে গত বছরের ৪ মে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অর্ধ শতের উপরে ইয়াবা কারবারী আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ইয়াবার কারবার।

বিজ্ঞাপন

টেকনাফে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা। গেল অক্টোবর মাসেও প্রায় ২২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও মাঠপর্যায়ে ইয়াবার চাহিদা কমেনি। বরং ইয়াবাসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরবরাহ রয়েছে আগের মতই। বেচাকেনা ও বহনে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে কারবারি ও বাহকরা। নানাভাবেই ইয়াবা ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কারা অভ্যন্তরের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে বিশেষ কদর রয়েছে ইয়াবা কারবারীদের। কয়েদিদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেতরে দায়িত্বরত কারারক্ষীদের সহায়তায় অনেক সময় মুঠোফোনে কথা বলেন বন্দীরা। এছাড়াও ইয়াবা কারবারী গডফাদারদের সাথে দেখা করতে আসেন তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটের লোকজন। এতে কারাগারে নিরাপদ পরিবেশে থেকে ইয়াবার কারবার নিয়ন্ত্রনের অবাধ সুযোগ তৈরী হয়েছে। কিন্তু কারান্তরীণ থাকায় বরাবরই সন্দেহের বাইরে থাকছেন ইয়াবা গডফাদাররা।

এদিকে সোমবারের আইনশৃংখলা কমিটির সভায় উপস্থিত জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত। তাদের সাথে স্বাক্ষাৎ করার জন্য প্রতিদিন প্রচুর লোকজন আসেন। এত লোকজনের ভীড়ে ইয়াবা বা মাদক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা কঠিন কাজ। এরপরও যে অভিযোগ এসেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে এবং কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করা হবে। উল্লেখ্য চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় নামভূক্ত মাদক চোরাচালানের ‘গডফাদার রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত