নিজস্ব প্রতিবেদক,
‘সরকারের নিষেধ মতো আরা সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখছি। সরকারি চাইলের আশায় ছিলাম। অনেক জাইল্যা এবারো চাইল পাইছে। আরার জাইল্যা কার্ড থাকলেও চাইল পাই নাই। ইয়ান কেন বিচার ? কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন এর ছনখোলা গ্রামের ষাটোর্ধ জেলে আমির হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন। শুধু তিনি নন, পিএমখালি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক জেলে সরকারি সহায়তা পায়নি। যে কারণে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করাসহ বাড়ছে ক্ষোভ। মা ইলিশ রক্ষা, ইলিশ প্রজনন, জাটকা ইলিশ রক্ষার্থে সাগর,নদ নদীতে মাছ ধরার উপর সরকার বছরে কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসতেছে। বারবার সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার খড়্গের বেড়াজালে পড়ে নিবন্ধনকৃত কার্ডধারী জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে থাকেন। এ অবস্থায় জাটকা শিকার ও ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা বন্ধের সময় মৎস্য বিভাগ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কার্ডধারী ছেলেদেরকে সরকারিভাবে চাল সহায়তা দেওয়ার কথা ।
জানা যায় পিএমখালী ইউনিয়নে প্রায়ই সাত শতের অধিক নিবন্ধনকৃত কার্ডধারী জেলে রয়েছে। তন্মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১১০ জন জেলেকে গত ২৭ অক্টোবর বুধবার চাউল বিতরণ করা হয়। এ চাল বিতরণেও ওয়ার্ড মেম্বারেরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিতরণ করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় জেলেদের। সূত্রে জানা গেছে নিবন্ধিত জেলেরা নিয়মিত সরকারী ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী এসব জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিবারই মাত্র কিছু সংখ্যক জেলে সে ভাতার পায়। তাও আবার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারেরা নানা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিতরণ করে থাকে। এই অবস্থায় এলাকার অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত রয়েছে। শুধু তাই নয় মৎস্য আহরণের সঙ্গে জড়িত মূল শ্রমিকেরাই সে ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম অবহেলা কিংবা রহস্যজনক কারনে দীর্ঘ সময় ধরে কোন ধরনের ভাতা পাচ্ছেনা এসব নিবন্ধনকৃত জেলেরা।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, ৮ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন। তন্মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১২০জন, মহেশখালীতে ১১ হাজার ৪৪২ জন, চকরিয়ায় ৩ হাজার ৮৫৭ জন, টেকনাফে ৭ হাজার ৮৮৩ জন, উখিয়ায় ৩ হাজার ৩৯২ জন, রামুতে ২ হাজার ২৭৩ জন, পেকুয়ায় ৩ হাজার ৯৬৭ জন ও কুতুবদিয়াতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৮ হাজার ৪৫৯ জন। কক্সবাজার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন নিবন্ধনকৃত কার্ডধারি মৎস্য চাষীর বিপরীতে ১০ হাজার ৫০০ জন জেলের জন্য ২১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। আবার কক্সবাজার সদর উপজেলায় কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৭ হাজার ২০০ জন। তন্মধ্যে ১৫৪৫ জন জেলের বিপরীতে বরাদ্দ আসে ৩০.৯০ মেট্রিক টন চাল। যা পৌরসভা সহ ১০ ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা কম বেশি হিসাবে বরাদ্দ দিয়ে গত কয়েকদিন আগে প্রতি জন জেলেকে ২০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। ভাতা বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কিছু নেতাদের ইচ্ছেমত মৎস্য কর্মকর্তারা এই কার্ড বিতরণ করে থাকেন। আর কার্ডের পরিমাণও পর্যাপ্ত না হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে এর আওতার বাইরে রয়েছে। আবার যারা বর্তমানে নিবন্ধিত তালিকায় রয়েছে তাদের সিংহভাগ নিয়মিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলেদের অভিযোগ, স্থানীয় মৎস্য অফিস ও বাছাই কমিটি প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে জেলে নয় এমন ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চাল বিতরণ করেছে। ফলে কার্ডধারী প্রকৃত শত শত জেলে পুনর্বাসনের চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
পিএমখালী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা জেলে কার্ডধারী প্রকৃত মৎস্যজীবী সুরুত আলম, আমির হোসেন, আমান উল্লাহ, নুরুন্নবী, আব্দুল হাকিম, আব্দুল করিম, ইমাম হোছনসহ অর্ধশত লোক জেলে সহায়তা চাউল না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন তাদের ওয়ার্ডে ৮১ জন নিবন্ধনকৃত জেলের মধ্যে মাত্র ১০/১২ লোককে চাউল দেওয়া হয়েছে। তাও ওয়ার্ড মেম্বারদের আত্মীয়-স্বজন ও তাদের আজ্ঞাবহ ছাড়া বাইরের কাউকে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্টদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। নিবন্ধনকৃত জেলে কার্ডধারীদের মধ্যে কেহ ভিজিডি কার্ডের আওতায় এসে চাউল পেয়েছে আবার অধিকাংশ জেলে কার্ডধারী এর আওতায় আসেনি ফলে বঞ্চিত জেলেদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার তারাপদ চৌহান এর সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, জেলেদের পরিচিতির জন্য কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে প্রকৃত কার্ডধারী অনুযায়ী বরাদ্দ নেই। আবার সব জেলে পেশাদার মাছ শিকারি নয়। যে জেলেরা সাগরে নিয়মিত মাছ শিকার করে বিশেষ করে ইলিশ মাছ মূলত তাদেরকে এ ভিজিডি চাউলের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রকল্প কেবল তাদের জন্য। তবে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে সব জেলেকে এই সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে ভালো হতো।