আসাদ আজিম,
ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চট্টগ্রামের ফাহমিদা কামাল(২৫) আর নেই। ২১ শে মার্চ সোমবার নগরীর মেডিকেল সেন্টারে মারা যান ফাহমিদা এমনটাই জানিয়েছে তার পারিবারিক সুত্র।
সাবেক সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকী জানান, ভারতেও ফাহমিদার চিকিৎসা করার চেস্টা চালানো হয় সেখানকার ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দেয়ায় তাকে দেশে আনা হয়। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই হাসপাতালে মাহমুদুল হাসানের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর ফাহমিদা হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যেতে অস্থির হয়ে উঠেছিল। তার জোরাজুরিতে কয়েকদিন আগে দক্ষিণ বাকলিয়ার বাসায় নেয়া হয়। সেখানে থেকে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখানেই আজ সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ফাহমিদাকে মৃত ঘোষণা করেন। উল্ল্যেখ্য ফাহমিদা জনাব সাইফুদ্দীন সাকির আপন নাতনি।
তিনি আরও জানান, বাদ আছর ফাহমিদার নিজবাড়ি দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত ৯ মার্চ নগরের মেডিকেল সেন্টারে ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন ও শিউলি আক্তারের মেজ সন্তান ফাহমিদা আক্তারকে মাত্র ১ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হাসান।
জানা যায়, শিক্ষাজীবনে পরিচয় দুজনার, প্রথমে ভালোলাগা, তারপর ফাহমিদাকে অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন মাহমুদুল, ফাহমিদার প্রতি প্রনয় আরও গাঢ় হয় মাহমুদুলের তারপর তা পরিনত হয় দুজনার ভালোবাসায়। দুজনের ইচ্ছে ছিল একসাথে কাটাবেন বাকি জীবন। একই ছাদের নিচে বৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারা। কিন্তু বিধি বাম, মাহমুদুল ও ফাহমিদার সাজানো মনের সংসারে ঘনিয়ে আসে আমাবস্যার রাত ঢেকে যায় পুর্নিমার জোৎস্না বিলানো চাঁদ। আর হয়ে উঠলো না দুজনার জোৎস্না বিলাস। ফাহমিদার শরীরে বাসা বাঁধলো মরণব্যাধি ক্যান্সার
মরণব্যাধি ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দেন, জানান ফাহমিদার জীবন প্রদীপ নিভু নিভু প্রায়। তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাহাড় সম কষ্ট নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ২৫ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান । সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারিরীক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে।
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সকল চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে নেন স্বামী মাহমুদুল হাসান। ফাহমিদার মরনপণ লড়াইয়ে সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন মাহমুদুল।
অবশেষে উভয় পরিবার সম্মতিতে গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল বেডে বউ সাজিয়ে ১ টাকা কাবিনে বিয়ের আয়োজন হয় তাদের। কিন্তু বিয়ের ১১ দিনের মাথায় সবাইকে কাঁদিয়ে, প্রিয় স্বামী মাহমুদলকে একা করে দিয়ে পরপারে চলে গেলেন ফাহমিদা কামাল।
উল্ল্যেখ্য, মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে।