মুহাম্মদ দিদার হোসাইন,
(চট্টগ্রাম) বাঁশখালীঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্লাবিত।
২৬ মে(বুধবার)বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, ছনুয়া, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি, শিলকূপ সরল, খানখানাবাদ, প্রেমাশিয়া সহ বেশকিছু এলাকার লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে জোয়ারের পানি।এতে নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়।
উপকূলীয় এলাকা ও জলকদর খালে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ উপড়ে লোকালয়ে প্লাবিত হচ্ছে জোয়ারের পানি। উপকূলীয় খানখানাবাদ প্রেমাশিয়া, সরল,ছনুয়া,পু্ঁইছুড়ি, গন্ডামারা এলাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি শেখেরখীল গুইল্যাখালি ও ফাঁড়ির মুখ এলাকায় বেড়িবাঁধ উপড়ে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ফলে আতংকে রয়েছে উপকুলীয় অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ।
অরক্ষিত বেঁড়িবাধের ফলে উপকুলীয় অঞ্চলে বসবাসরত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা একধরনের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে অমাবস্যা-পূর্ণীমার জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়তই প্লাবিত হয় উল্লেখিত নিম্নাঞ্চল। চিংড়ি ঘের, পুকুর,ক্ষেতখোলা প্লাবিত হয়ে প্রতি বছরই লাখ লাখ টাকার লোকসানের স্বীকার হচ্ছে উপজেলাধীন উপকুলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
খানখানাবাদের,আলী আহমদ,শের আলী, নুরুল করিম, আহমদ নবী, গণ্ডামারার কাটাখালীর নুরুল ইসলাম, মুহাম্মদ করিম সওদাগর, ইউনুস, মুহাম্মদ ফরিদুল আলম,সুফি আলম,মাহবুব আলম সহ অনেকে বলেন, বর্ষার মৌসুমে এই এলাকার মানুষ প্রতি বছরই লাখ লাখ টাকার লোকসানের স্বীকার হয়। তাঁরা কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্যে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান,বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্পটে বেড়িবাঁধ উপড়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, শুধু তা নয় বরং কয়েক শতাধিক বাড়ি ঘর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তাঁরা।সকাল থেকে বিভিন্ন স্পটে তাঁরা পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তাঁরা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের উত্তাল পরিস্থিতি ও বেশ কয়েকটি এলাকায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষের যান মাল নিরাপত্তার জন্যে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার দৃশ্য পরিদর্শনকালে দেখা গেছে।
শেখেরখীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াছিন জানান- সকালে বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জোয়ারের পানির ফাঁড়ির মুখ ও গুইল্যাখালী এলাকায় আংশিক অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ডুকেছে। তবে জোয়ারের পানিতে তেমন কোন বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি উপকূলীয় ইউনিয়নে জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ উপড়ে লোকালয়ে ডুকেছে। তবে জোয়ার ভাটার সাথে সাথে পানি উঠা নামা করবে। তেমন কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি,এবং বিভিন্ন চেয়ারম্যানদের কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোথায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে জানানোর জন্য। ইতিমধ্যে ১০৫ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতি রয়েছে।
এব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুজ্জামান চৌধুরী প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে বলেন,ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানি লোকালয়়ে ঢুকে পড়ছে বেশ কয়েকটি এলাকায়।উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি আরো জানান, উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার প্রস্তুতিও রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য উপজেলা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালু, উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রস্তুতিসহ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলার ১০৫ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ ও গবাদিপশু আশ্রয়ের জন্যে প্রস্তুত রাখতেও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি। তবে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বড়় ধরনের কোন দূর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।