সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫

কক্সবাজারে পুলিশ পরিচয়ে বন্দির পরিবার থেকে টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র

আপডেট:

এম.এ সাত্তার, কক্সবাজার:
কারাগারে বন্দি বা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিভিন্ন মামলার আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। তারা নিজেদের কখনও কারারক্ষী,পুলিশ আবার কখনো সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

কারাগারে আসামির জামিন, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ঝামেলার কথা বলে অথবা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে কৌশলে টাকা দাবি করছেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। অনেকেই এদের ফাঁদে পড়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকাও দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি পুলিশ পরিচয়ে একটি প্রতারক চক্র পাহাড়তলী এলাকার বন্দি রফিককে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার পরিবার থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড পাহাড়তলী এলাকার ভুক্তভোগী বন্দি রফিকের আম্মা আবদুল হামিদ এর স্ত্রী নুরবানু’ অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে কারাগারে বন্দি রয়েছে। দুটি মামলার মধ্যে একটি জামিন হয়েছে।অন্য একটি মামলায় কারাগারে রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিকেলে আমার বাড়ির মোবাইল ফোনে একটি অজানা নম্বর (০১৮৭৩১৮৮১৭২) থেকে কল করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি জানান, আপনার ছেলে রফিকুল ইসলাম জেলখানায় বন্দি আছেন। রাষ্ট্রপতি নিরাপরাধ কিছু বন্দিদেরকে মুক্তি দিচ্ছে। তাই বন্দিদের তালিকা করা হচ্ছে। আমি আপনার ছেলের নাম ওই তালিকায় এন্টি করে দিতে পারব। উকিল, মুন্সি, কোর্টে গিয়ে টাকা খরচ না করে এই সুযোগ কাজে লাগার কথা বলে বিনিময়ে কিছু টাকা হাত খরচ দিতে হবে।এই বলে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে দিতে বলেন ফোনে কথা বলা ব্যক্তি। এই মুহূর্তে এত টাকা নেই বললে সে আপাতত: ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে দিতে বলেন।টাকার জন্য প্রতারক চক্রের সদস্যরা বারবার ফোন করে চাপ দিতে থাকেন উল্লেখ করে রফিকের আম্মা নুরবানু জানান, টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশ নং (০১৮৩৪২৩১০৪৭) দেন । ছেলে মুক্তি পাওয়ার আশায় তার কথা শুনে এ সময় আমি ইমোশনাল হয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। তাই ছেলেকে সহজে বন্দী জীবন থেকে ফিরে পাওয়ার আশায় তার দেওয়া বিকাশ নাম্বারে ৩০ হাজার টাকা ঢুকিয়ে দেয়। বিকাশে টাকা দেয়ার পর আমরা তার নাম্বারে ফোন করলে রিং হলেও ফোন রিসিভ করে না।পরে বিষয়টি কয়েকজনের সাথে শেয়ার করে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলছে, চক্রটির সদস্যরা প্রথমে কারাগারে অথবা রিমান্ডে থাকা আসামিদের পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। পরে ওই নম্বরে কল করে কারাগারে থাকা আসামির অসুস্থতা বা কোনো ঝামেলার কথা বলে অথবা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। এই চক্র অনেক আসামির পরিবারের কাছ থেকে এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের সদস্যদের কে ধরা হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ওইসব অপকর্মে জড়িয়ে যায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রত্যেক এলাকায় পেশাদার প্রতারক চক্র সক্রিয় আছে । তাদের রয়েছে নিজস্ব সিন্ডিকেট।তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের টার্গেট করেন। প্রথমে আসামির পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। গ্রেফতারের পর আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠালে তারা পুলিশ বা কারারক্ষী পরিচয় দিয়ে আসামির পরিবারের সদস্যদের ফোন করেন। তাদের বলেন, ‘কারাগারে গিয়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে গণ্ডগোল করেছেন আপনার স্বজন, টাকা না দিলে এই অপরাধে তার বড় ধরনের শাস্তি হয়ে যাবে।

আবার আসামি গ্রেফতার করে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে গেলে ধৃত আসামির বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে বলে একাধিক নতুন মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে, রিমান্ডে গেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিচয় দিয়ে তার পরিবারকে বলেন, ‘টাকা দিলে রিমান্ডে মারধর করা হবে না। না হলে মেরে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়া হবে।’
এভাবে গ্রেফতার আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন চক্রের সদস্যরা। বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন টার্গেট করা পরিবারকে।

এ ব্যাপারে সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, যেসব নম্বর থেকে টার্গেট করা পরিবারে কল করা হয় তার একটিও চক্রের কোনো সদস্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা না। তারা একটি সিমকার্ড বেশিদিন ব্যবহারও করেন না। যারা ফুটপাতে বসে সিমকার্ড বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে সিম কিনে ওই প্রতারক চক্র। এছাড়া তাদের সাথে সম্পর্কিত কিছু সিম বিক্রয়কেন্দ্র অন্যদের কাছে বিক্রি করা সিমকার্ডের তথ্য ও এনআইডি নম্বর দিয়ে জালিয়াতি করে সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করে রাখেন। সেসব সিমকার্ড বেশি দামে প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করেন। এইসব সিমকার্ড দিয়ে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (নাম) মোঃ মুনীর উল গিয়াস বলেন, এরকম কোন অভিযোগ সে পায়নি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত