বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

সমসাময়িক নিবন্ধ- ‘স্হবির জনপদ’

আপডেট:

মো সাঈদী আলম,
নিত্যদিনের কোলাহল হৈ হল্লোড়, হৈ চৈ নজরে পড়ে না। মনে হয় এই জনপদে বহুলোকের বসাবাস ছিল হঠাৎ কোন ঝড়ে তারা হারিয়ে গেছে তাদের গড়া সে অট্টালিকা, দোকান,শপিং মলগুলো সাক্ষ্য দেয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় এ যেন এক ভূতুড়ে নিকষ কালো অন্ধকার নগরী।

কালের নিমিষে তারা হারিয়ে গেছে অজানা এক পথে। সবাই আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। জানে না কেউ কোন সময় কেউ আক্রান্ত হয়ে লকডাউন নামক নিষিদ্ধের কবলে পড়ে। এ যেন এক আতঙ্ক বিরাজ করছে জনপদে, লোকালয় গুলোতে। যে সময় আপনজনগুলো কাছে জড়িয়ে নিতো, করতো হ্যান্ডশেক,করতো করমর্দন। এখন বলে আপন আপন দুরত্ব বজায় রেখো চলো। প্রবাদের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ আতিথেয়তা খানিকটা নিরৎসাহিত করা হচ্ছে।কোথাও যাবেনও না কোথাও আসবেনও না। যেখানে আছেন,সেখানে থাকুন, ভালো থাকুন।যা আছে তা নিয়ে থাকুন প্রয়োজনে আলুসিদ্ধ খেয়ে দিনাতিপাত করুন। সবাই মাস্ক পরে আছে, কতজনে কত কথন। বয়স্করা হাসাহাসি,কেউ করে কানাকানি। সবার ভিতর এক অজানা অাতঙ্ক দিব্যি খেলছে। গণপরিবহন বন্ধ করার পূর্বে শুরু হয়ে গেছে পরিবহন নৈরাজ্য।একটা গাড়িতে যেখানে আপডাউন সেখানে ৫/৬ এর অধিক গাড়ি চেঞ্চ করে গন্তব্যে পৌছতে হয় ডাবল ভাড়া দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

গ্রামের যারা দিন মজুর তারা পড়ে গেছে বিড়ম্বনায়। এভাবে চলবে কতদিন কি হবে তাদের ফ্যামিলির অার্থিক যোগান কে দেবে? এ প্রশ্নের সমাধান এখনো মিলেনি। এতো কর্মযজ্ঞতা এতটুকু নিঃশ্বাস পাওয়া যায় না। তারা আজ বেকার, অলস ঘুমিয়ে চুকিয়ে দিনাতিপাত করছে।হতাশা আর উদ্বিগ্নতা তাদের ভিতর কাজ করছে।

বাচ্চারা আজ স্কুল, মাদরাসা থেকে ছুটি পেয়ে বাড়িতে একেকটা জ্বালাতন শুরু করে দিছে । মসজিদে দেখা মিলে মুসল্লিদের তাদের আকুতি মিনতি খোদার দুয়ারে যেন মহাবিপদ থেকে তারা রক্ষা পেতে চায়।রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যস্ত তাদের কর্মযজ্ঞ নিয়ে, সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে; মনে হয় অজানা,অচেনা এক শক্তির বিরুদ্ধে রণাঙ্গনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধিনতার এই মাসে। ২৬ শে মার্চ প্রতিবছর ঝাকঝমকভাবে জাতীয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবছর নিরবতায় কেটে যাবে স্বাধিনতা দিবসটা। হয়তো বাঙালি জাতিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হবে এই দিবসে।

বিজ্ঞাপন

আবার কোন যুদ্ধে নেশায় জাতি পড়তে হচ্ছে। হঠাৎ পুরো বিশ্ব নিস্তব্ধ,নিরব। কোন লকডাউনের ব্রেকিং নিউজে পড়ে মনে হয় একেকটা অঞ্চল যেন একেকটা কারাগার।ইতালি স্পেন,চাইনা,ইরান ইত্যাদি দেশগুলোতে লাশের মিছিল। কোন কোন ছবি দেখে মনে হয় শিকারীর গুলিবিদ্ধ হয়ে যেন পাখি পড়ে আছে।আরো অনেক পাখি হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। দেড় শতাধিক দেশে আজ প্রায় স্হবিরতা।দেশের আউটডোর ও ইনডোর সব বন্ধ। কোন কোন গুজব নিউজ শুনে সাধারণ পাবলিক আজিব হয়ে যাচ্ছে। গ্লোবালাইজেইশনের যুগের সবকিছু যেন অকেজো হয়ে গেছে।হতাশার ঝলকানি চোখে মুখে ভেসে উঠছে।

আজকের বিজ্ঞান প্রতিষেধক খুঁজতে খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠছে। এতকিছু এতো এতো অাধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি সবকিছু মনে হয় ব্যর্থ। কোন কোন দেশে এমন পুরো দেশজুড়ে কোথায় স্কান্যার নেই পরিক্ষা করার মতো। কোন কোন দেশের রাষ্ট্রনায়কগণ বলতে বাধ্য ‘আমাদের শক্তি এখানে শেষ।

আকাশের দিকে থাকিয়ে তাকা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই’।পৃথিবীর পরাশক্তি দেশগুলো একদেশ অন্যদেশকে নিমিষেই উড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু অতি ক্ষুদ্র এই জীবাণুকে ধ্বংস করার শক্তি বা সাহস তাদের আদৌ হয় নি। আজকের বিজ্ঞান বিশ্ব ধ্বংস করার প্রযুক্তি আবিস্কার করে ফেললো। অথচ অণুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে ও ভালো করে দেখা যায় না। এরকম একটা করোনা ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস করতে অক্ষম। কোন কোন মৃত্যুর মিছিল থামানোই যাচ্ছে না। নিজের প্রিয়জন মরে যাচ্ছে দেখে শেষ বিদায় দেয়াটাও সম্ভব হচ্ছে না।মৃত্যু যেন সবাইকে ঘিরে ধরেছে। মনে হচ্ছে একেকটা জনপদ বিরানভূমি বানানো হচ্ছে। কফিনের পেরেক যেন শেষের দিকে মাইলের পর মাইল গোরস্হান বানাবে। গণকবর প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এটা শেষ হতে না হতে ধেয়ে আসছে আরেক ত্রাস পঙ্গপাল। যেখানে ডুকছে সেখানে নিমিষেই সাবাড় করে ফেলছে।দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো কি দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত হতে যাচ্ছে। জানিনা নতুন প্রজন্মের মানুষগুলো বিশ্বে আরো কতো কি দেখতে যাচ্ছে। তবে সবকিছুর পেছনে কোন কারিগর কাজ করছে? কার ইশারায় উঁচু নিচু টলটলায়মান তা মানুষ বুঝতে পারছে। কেউ জানে না কবে তারা এ মহাদুর্ভোগ বা দুর্যোগ থেকে নিস্তার পাবে। হয়তো শেষ পর্যন্ত পরিস্হিতি কোন দিকে গড়ায় তা অপেক্ষা করতে হবে।
লেখকঃ শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত