শনিবার, মে ৩১, ২০২৫

বাবুনগরীর জানাযায় জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিয়ে ক্ষোভ কওমি অঙ্গনে!

আপডেট:

নিজস্ব প্রতিবেদক,
গেলো বৃহস্পতিবার লাখো মানুষের অংশগ্রহণে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। তবে জানাজায় জামায়াত ইসলামীর সভাপতি ও তাদের ছাত্রসংগঠন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমলোচনা।

কেননা, হেফাজতের আরেক প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি বারবার এই সংগঠনটির বিরোধী ছিলেন। এমনকি তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জামায়াতের রাজনীতিকে ইসলামবিরোধী বলে বক্তব্য দিতেন। তাই তার শিষ্য আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে জামাত শিবিরের উপস্থিতিকে মানতে পারছেন না হেফাজতের নেতাকর্মীরা। আর তার পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বিজ্ঞাপন

গেলো বৃহস্পতিবার হাটহাজারী মঈনুল উলুম ( বড় মাদ্রাসা মাঠে) আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন তার মামা ও হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত নতুন আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

তবে শুরু থেকে মাদরাসা মাঠে বাবুনগরীর মরদেহ রাখার কথা থাকলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় রাখা হয় উপজেলার ডাকবাংলো চত্বরে। তাই এই সুযোগটা হাতছাড়া করে নি জামায়াত শিবিরের নেতারা। বাবুনগরীর মরদেহের আশেপাশে ও জানাযার সামনের সারিতে হেফাজতের কোন কেন্দ্রীয় নেতার জায়গা না হলেও সবকিছুইতে সরব উপস্থিতির জানান দিয়েছে জামাত শিবিরের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা । যা রীতিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। আর তাতেই ক্ষোভে বেসামাল কওমি অঙ্গনের অনেকেই। আবার অনেকে বলছেন কওমির একটা অংশের সহযোগিতায় এসব করতে পেরেছেন জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, জামাত নেতাদের দেখে আমাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ আমাদের সাবেক আমীর আল্লামা শফী জামায়াতের রাজনৈতিক মতবাদকে বাতিল বলেই মনে করতেন। কিন্তু আহমেদ শফীর লাশের খাঁটিয়ে ধরে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল ধর্মভিত্তিক এ সংগঠনটি। সেই ঘটনায় আলোচনায় আসার পর হেফাজত ইস্যুতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। তাকে হেফাজতের মামলায় উস্কানিদাতা হিসাবে গত ইদুল ফিতরের দিন নিজ বাড়ি সাতকানিয়া থেকে আটক করে পুলিশের বিশেষ টিম। তাই আহমদ শফীর জানাযার দৃশ্য বাবুনগরীর জানাযায় সংগঠিত হওয়াতে তাদের সাথে জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ততার কথা বলছেন অনেকেই।

যদিও এসব বিষয় বারবার অস্বীকার করে আসছেন দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা।
ফেসবুকে এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, বাবুনগরীর জানাজা সম্পন্ন হওয়ার সময় প্রথম সারিতেই অবস্থান করছিলেন জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। বাবুনগরীর লাশ বহন করার সময় সামনে ছিলেন জামায়াত সভাপতি আমীর ডা. শফিকুর রহমান , জামাত ও যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনালের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ ও শিবিরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

সোশ্যাল মিডিয়াই প্রকাশিত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, জানাজা পূর্ববর্তী জামায়াত সভাপতি ও শিবির সভাপতিকে ঘিরে রেখেছে জামায়াত শিবিরের অসংখ্য নেতা কর্মীরা । জানাজা শেষে জামায়াত তাদের নেতৃত্বে হাটহাজারী উপজেলা ডাকবাংলো থেকে বাস স্টেশন পর্যন্ত ব্যাপক শোডাউন করে দলটি। তবে, পুলিশের কঠোর অবস্থানে শোডাউনটি দীর্ঘ করতে পারেনি দলটি।

সার্বিক বিষয়ে হেফাজত ও জামাতের কোন নেতা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হওয়াতে এ প্রসঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য জানা যায়নি। অপরদিকে, ফেসবুকে থেকে পাওয়া বাবুনগরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিবিরের সভাপতির একটি ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, হেফাজতের আমিরের মৃত্যু দেশ ও ইসলামের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছে দলটি। পাশাপাশি আল্লামা বাবুনগরীকে একজন সাহসী, সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন ও নাস্তিক মুরতাদদের জম ছিলেন বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন শিবির সভাপতি।

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মূলত বাংলাদেশের কওমি মাদ্রসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। যা ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ইসলাম বিরোধী ইস্যু ও ধর্মবিরোধিতাকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত