সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫

পিএমখালীর মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তারের ঘুষদুর্নীতি, অভিযোগের তদন্ত চান সবাই

আপডেট:

কক্সবাজার প্রতিনিধি,
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলামেম্বার খালেদা আক্তারের (অনিয়ম দুর্নীতির) বিরুদ্ধে প্রকাশিত নিউজের সত্যতা মিলেছে। সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুষ দুর্নীতি করার অভিযোগে ভুক্তভোগীরা সরাসরি পত্রিকা অফিসে অভিযোগ করার পর সরেজমিনে তদন্ত করে এ অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পান এ প্রতিবেদক। এ ব্যাপারে জানার জন্য মেম্বার খালেদা আক্তারের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে নিউজ না করার অনুরুদ করে আমি আপনাদের অফিসে এসে কথা বলব বলে ঘন্টা দেড়েক পরে তার স্বামীসহ আরো ৫/৬ জন বাইরের লোক নিয়ে এসে জানান সে স্থানীয় এমপি কমলের বোন ও উপজেলা চেয়ারম্যান জুয়েলের আত্মীয়। আমার বিরুদ্ধে নিউজ করলে আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে দ্রুত চলে যান।

গত মাসে মহিলামেম্বারের নানান অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানিয় জাতীয় দৈনিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় সরেজমিন তথ্য বহুল একাধিক বার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ নিউজ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ ভাইরাল হওয়া সংবাদটিতে আশানুরূপ রেকর্ড সংখ্যাক লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি করছেন কেহ কেহ। এ তালিকায় রয়েছে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ আমজনতা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এলাকার নীতি নির্দ্ধারনী পর্যায়ে এমন কেলেঙ্কারির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধির এমন কেলেংকারির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে তাদেরকে জরুরি ভিক্তিতে আইনের আওতায় আনার জোরদাবি করছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। উক্ত মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তার এবার স্থানীয় এমপির বোন, উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলের আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে বলেও একটি সূত্র জানান।

সেই ধারাবাহিকতায় পিএমখালীর আরেক স্থানীয় চিহ্নিত মহিলা দালাল আঞ্জুমান আরাসহ তার স্বামী পিএমখালীর ত্রাস একাধিক মামলার জেল ফেরত আসামি ডাকাত লাল বাহাদুর ও মহিলামেম্বারের স্বামি ফরিদুল আলমের সাথে একটি বয়স্ক ভাতার বইকে কেন্দ্র করে স্থানীয় চেরাংঘর বাজারে ব্যাপক হাতাহাতি হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এ মহিলা মেম্বার দম্পতির সংবাদে মন্তব্য করে মোহাম্মদ আলম নামে একজন লিখছেন তদন্ত করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

শাহেদুল ইসলাম নামে আরেকজন দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন জুতা গুলা দিয়ে দাও এখন, আগে তো ফুলের মালা দিয়েছিলাম এখন জুতা ছাড়া আর কিছু নাই।

এমডি তোফাইল কমেন্টে লিখেছেন সুনিদৃষ্ট তথ্য জানার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি এবং অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় আইনের আওতায় এনে দোষিদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। মুমিনুল হক এলিটও একই কথা লিখে শাস্তির দাবি করছেন।

মোহাম্মদ আলী লিখেছেন বিষয়টা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত। আবার আবির সাদিন লিখেছেন তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। আমিন উল্লাহ আমিন কমেন্টে লিখেছেন দেশে মহিলা মেম্বারের দরকার নেই। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নুরুল আবচার তার এলাকায় উক্ত মহিলা মেম্বার কি রকম দুর্নীতি করছে তার চিত্র তুলে ধরে কমেন্টে লিখেন আমাদের এলাকায় একটি ড্রেইনের কাজ করে রাস্তার মাটি খুঁড়ে নষ্ট করে তা ঠিক করে দেয়নি। এখন এ রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল করতে অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি হচ্ছে। সামান্য কাজে এতো দুর্নীতি? কী বলবো ভাই, দোষতো আমাদেরই , আমরাতো ভালো মানুষদের মুল্যায়ন করিনা। সমাজ কখন নষ্ট হচ্ছে যখন অযোগ্য মুর্খরা ক্ষমতার চেয়ারে বসে বাঁশি বাজাবে তখন।

নীতি নির্ধারকদের প্রতি ইঙ্গিত করে কায়সার হামিদ লিখছেন ওকে বহিস্কার করা হউক। এরই মধ্য আবার পিএমখালীর ৩ নং ওয়ার্ড তোতকখালীর সবচেয়ে বিতর্কিত দুর্নীতিগ্রস্থ তাজ মহল নামে আরেক দুর্নীতিবাজ মেম্বারের যাবতীয় কুকর্মের প্রতি ইঙ্গিত করে “দুঃখ ভরা মন” নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে একজন খুবই দুঃখের সহিত কমেন্টে লিখেছেন তোতকখালীর বিচারকেরা মদখোর, জমি দখলবাজ, মানুষের টাকা মেরে খায়, সন্ত্রাসীমুলক কর্মকান্ড করে তা সবাই জানে।

সে আরো লিখছে তোতকখালীতে সুষ্ট বিচার পেতে হলে ঘরের স্ত্রীকে বিচারকের সাথে রাতে থাকতে দিতে হয়। তা না হলে বিচার পাইনা। উক্ত কমেন্টকারী বিচার প্রার্থীদের সাথে ওই বিচারকের এরকম অন্যায় আবদার করে কথা বলার ভয়েস কলরেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলে উল্লেখ করেন তার কাছে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার নেপথ্যে অনেক কাঠখর পোড়ানো বিষয় উল্লেখ করে এমডি নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তি খুবই হতাশার সাথে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ হলো এদেশের সাধারণ মানুষের শীর্ষ বিচারালয়। এছাড়া এই ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারি যে কোন সেবা আমজনতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। যে কারণে এই ইউনিয়ন পরিষদ থাকতে হবে একদম কলংকমুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহির উর্ধে। যেখানে থাকবেনা কোন সন্দেহের লেশমাত্র। অথচ এই পুতপবিত্র প্রতিষ্টান আজ কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ।

এটি সরকারের কলংক উল্লেখ করে সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন এদেশের মানুষের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে উঠছে অতিগুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্টান রুপে। দরিদ্র, অতিদরিদ্র মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়ও বঠে। তাছাড়া এখন সরকারি যাবতীয় সেবামুলক কাজ এই প্রতিষ্টানের মাধ্যমে আমজনতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। যে সেবা বা কাজ সাধারণ মানুষেরা হাজার হাজার টাকা খরচ করলেও সহজে পেতনা। কিন্তু এসব সরকারি বিনামুল্য সেবার কাজে জনপ্রতিনিধিরা মানুষের নিকট থেকে টাকা নেওয়া অত্যন্ত দুঃখ জনক। আশাকরি এরকম জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। স্থানিয় জসিম উদ্দিন বলেন যাকে নির্বাচিত করার জন্য যার সমর্থনে কর্মী হয়ে মাঠে নেমেছি, মিছিলে গেছি শ্রদ্ধা ভালোবাসা বুকে ধারণ করেছি। সেই মেম্বার আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সেই জনপ্রতিনিধি আজ কলঙ্কিত।

উল্লেখ্য যে মেম্বার দম্পতির বিরুদ্ধে মিডি, য়ায় ফলো করে একাধিকবার দুর্নীতির নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। তার সর্বশেষ ফলোআপ নিউজ এর চুম্বক অংশ ছিল যে, যদি এই মহিলা মেম্বার কর্তৃক বাস্তবায়িত কোন প্রকল্প খতিয়ে দেখা হয় তাহলে কোথাও স্বচ্ছতা পাওয়া যাবেনা।এমন কোন প্রকল্প বা খাত নেই সে দুর্নীতি করেনি। এমনকি যেকোন কার্ড বিতরণের সময় জনপ্রতি নিচ্ছে ঘুষের টাকা। যেকোন ভাতার বই করে দেয়ার নামে নিচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতিবার বয়স্কভাতা দেয়ার সময় পুরাতন বই ধারীদের নিকট থেকে জনপ্রতি নিচ্ছে ২০০ শত টাকা করে।(এটা আবার ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রত্যেক মেম্বারেরা নাকি নিতেছে)।

গর্ভবর্তী ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমে নিয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা করে। এরপর যতবার ভাতা দেওয়া হয় ততবারই ব্যাংকে গিয়ে জোর করে নিতেছে ১১০০ টাকা টাকা করে (অফিসের বাবত ১০০ টাকা + নিজের জন্য ১০০০ টাকা)। গত কুরবানি ঈদের ৩/৪ দিন আগে গর্ভবর্তী মহিলারা ভাতা উত্তোলন করার পর ব্যাংকে গিয়ে প্রত্যক মহিলার কাছ থেকে ১১শত টাকা করে নিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ভিত্তিত ভাতার বই, সরকারি ঘর, গর্ভবর্তী ভাতা, ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার প্রলোভনে ফেলে এলাকার সহজ সরল গরীব দুস্থ বিধবা পঙ্গুসহ সহায়সম্বলহীন মানুষের নিকট থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার শতঅভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। সরেজমিন জানার জন্য ছনখোলা এলাকায় গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তার ও স্বামী ফরিদুল আলমের ব্যাপারে জানতে চাইলে মধ্য বয়সি এক ভদ্রলোক বলেন সে তার মাকে নিয়ে বয়স্কভাতা তোলার জন্য ব্যাংকে গিয়ে দেখেন তার এলাকার কয়েকজন পুরুষ/মহিলা ভাতার টাকার জন্য লাইন ধরিয়ে আছে অথচ তারা সবাই বিত্তশালী। তাদের নিকট থেকে জনপ্রতি বার হাজার টাকা করে নিয়ে বই দিয়েছে মহিলা মেম্বার। তন্মধ্য দেখা যায় ছনখোলা নয়াপাড়া এলাকার গুল বাহার স্বামী নুরুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম নুরুল হক। একই পাড়ার রহিমা বেগম ও আবদুর রহিম দম্পতি। মাদলিয়া পাড়ার দিনমজুর মৃত কালুর পুত্র ছবুর থেকে নিয়েছে ৩ হাজার টাকা।

ছনখোলা পশ্চিমপাড়ার আনজুরু ঘোনা এলাকার অহায় বিধবা মহিলা তাহামিনার কাছ থেকে (বিধবা ভাতার বই) নিয়েছে ৩ বছর আগে ৫ হাজার টাকা,পশ্চিম পাড়ার রখম আলীর ছেলে কবির আহাম্মদের কাছ থেকে ২ বছর আগে নিয়েছে ২ হাজার টাকা। খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে পঙ্গু বদিউল আলম বস্তা বদি থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। নয়াপাড়ার মৃত ছফর হাজীর স্ত্রী থেকে নিয়েছে ৪ হাজার টাকা। মাজের পাড়ার মৃত মুফিজুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে তিন বছর আগে নিয়েছে (বিধবা ভাতার বই) ৩ হাজার টাকা। পশ্চিমপাড়ার মৃত আবদুস ছোবহান এর মেয়ে স্বামী পরিত্যত্ত মহিলা বীর কমলার কাছ থেকে তিন বছর অাগে ৩ হাজার টাকা নিয়ে এবছর ভিজিডি কার্ড দিয়েছে। আবার ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন ভাতার বই করে দিলেও নানান জাল জালিয়তি করে অনেকের বই থেকে ৬ মাসের টাকা গোপনে উত্তোলন করেছে বলেও গুরুতর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। এমন প্রতারণার স্বীকার হয়েছে সদ্য নতুন বই পাওয়া ছবুরসহ অনেকে।

এ ব্যাপারে ছবুর জানান সে অশিক্ষিত মানুষ, নতুন বই নিয়ে টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে সে পেয়েছে ৩ হাজার টাকা। অন্য মানুষ কিন্তু ৬ হাজার টাকা করে তুলছে। আমাকে ৩ হাজার টাকা কেন? বলে ব্যাংকের এক অফিসারকে জানালে কে বা কারা আগে ৬ মাসের টাকা তুলে নিয়েগেছে বলে সে জানতে পারেন। তিনি বলেন যাগ্গে লাভ না হলেও আজ আসল টাকা পেয়েছে সে। অর্থাৎ বই নিতে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিল, সে টাকা হলেও পেয়েছে। না হয় পরের বার থেকে লাভ হবে। এই মেম্বার দম্পতির বিরুদ্ধে এরকম শতঅভিযোগ এলাকার মানুষের।এ ব্যাপারে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুব্রত বিশ্বাসের নিকট জানতে চাইলে বলেন আমার অফিসের কথা বলে কে কার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে তা আমাদের জানার বিষয় না। অফিসের কোন লোকতো টাকা নিচ্ছেনা। বাইরের কেউ গোপনে নিলে আমার কি করার আছে। তারপরও তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত