বুধবার, আগস্ট ১৩, ২০২৫

পটিয়ায় বুদবুদি ছড়ার প্রাকৃতিক গ্যাস কেবল জ্বলছে আর জ্বলছেই।

আপডেট:

কাউছার আলম, পটিয়াঃ
পটিয়ার “বুদবুদি ছড়া”র প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেই জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছে ,আজ অবধি সম্ভব হয়নি গ্যাস উত্তোলন, সরকার উদ্যোগ নিলে গড়ে তোলা সম্ভব দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাবেক মহকুমা পটিয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে হাইদগাঁও গ্রামের পাহাড়ী এলাকায় ৬০ বছর পূর্বে প্রাকৃতিক সম্পদের (গ্যাসের) সন্ধান পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত গ্যাস
কুপের আশেপাশের খালসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অনবরত দাউ দাউ করে আগুন জ্বলা ও বুদবুদ করে গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণে এর নাম দেওয়া হয় “বুদবুদি ছড়া”।

প্রায় ৬০ বছর আগে আবিস্কৃত অবহেলিত এ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের জন্য
কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও আজও হেলায় পড়ে রয়েছে বিশাল এ ভূ-সম্পদ।
দীর্ঘ ৬০ বছরেও সরকারীভাবে চট্টগ্রামের পটিয়ার
বুদবুদি ছড়ার প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস
ক্ষেত্র থেকে সংরক্ষিত খনিজ সম্পদ
উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। বুদবুদি ছড়ার
নয়নাভিরাম পাহাড়ি এলাকায়
রয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা খাল ও ছোট ছোট
লেক।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, রয়েছে নানা প্রজাতির পাহাড়ি বৃক্ষ।
যা ওই এলাকাকে দৃষ্টিনন্দন স্পটে পরিণত
করেছে। আর পর্যকটরাও শীত
মৌসুমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ওই
এলাকায়। পর্যটন কর্পোরেশন এ
ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিলে বুদবুদি ছড়া এলাকাটি চট্টগ্রামের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

এতে একদিকে সরকারি রাজস্ব খাতে আয়
বৃদ্ধি অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন ও ছুটির দিনে সাধারন মানুষের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
জানা যায়, ১৯৫১ সালে তৎকালীন
পাকিস্তান সরকার প্রথম বারের মত
বার্মা অয়েল কোম্পানি (বিওসি)
কে বুদবুদি ছড়ার এ খনিজ সম্পদ
অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগ করে।
সে সাথে পটিয়া সদর থেকে বুদবুদিছড়া পর্যন্ত একটি সড়ক (যা বর্তমান বিওসি রোড
হিসেবে পরিচিত), গ্যাস ফিল্ড এলাকায় হেলিপ্যাড, সুইমিং পুল ও বাসস্থান গড়ে তোলা হয়, যা কালের
আবর্তনে ইতিহাস হয়ে আছে।
পরবর্তীতে বহির্বিশ্বের কয়েকটি দেশের ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্তের কারণে উল্লেখিত কোম্পানি সাফল্যের শেষ প্রান্তে এসে ১৯৫৩ সালে এ খনির
উত্তোলনমুখে সীসা ঢালাই করে। এ ঘটনায় পাকিস্তান সরকার বার্মা অয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। যার ফলাফল দেশবাসী আজও
জানতে পারেনি। এরপর তৎকালীন সরকার নিজস্ব
উদ্যোগে বুদবুদিছড়া এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশত একর জমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য তৎকালীন
সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। ওই সংস্থা ঘটনাস্থলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তেল
ও গ্যাস সম্পদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। ১৯৭৩
সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার
বুদবুদিছড়ার মাটির গভীরের তরল
পদার্থের নমুনা পূণঃ পরীক্ষার জন্য পাশ্ববর্তী ভারতের আসাম রাজ্যে পাঠায়। তারাও দীর্ঘ
পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বুদবুদিছড়ায় প্রচুর
পরিমাণ খনিজ সম্পদ পাওয়ার
নিশ্চয়তা দেন।

বিজ্ঞাপন

তথ্যানুসারে অারো জানা যায়, ১৯৯৯ সালের
মার্চে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও
বিদেশী তেল গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানির যৌথ
উদ্যোগে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে প্রচুর
পরিমাণ গ্যাস ও তেল পাওয়ার সর্বশেষ
চূড়ান্ত বিপোর্ট দেয়। তাছাড়া স্বাধীনতাত্তোর
বাংলাদেশ মিনারেল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ গ্যাস এন্ড অয়েল
কোম্পানি লিমিটেডের পৃথক বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের আমলে ওই এলাকার খনিজ সম্পদের ওপর অনুসন্ধান চালায়। তারাও সেখানে গ্যাস ও তেল পাওয়ার প্রচুর
সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। কিন্তু
কেউ এখনো পাকিস্তান আমলে ঢালাইকৃত সীসা কুপকে পাশ কাটিয়ে গ্যাস উত্তোলনে কার্যকর
পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বুদবুদি ছড়ার গ্যাস
উত্তোলন করা সম্ভব হলে পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় শিল্পজোন গড়ে তোলা সম্ভব ।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের
ফেব্রুয়ারী মাসে পটিয়া বুদবুদিছড়ার
তেল-গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক
জরিপের কাজ পুনরায় শুরু করে সরকারি তেল গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্স। তাদের বিশেষজ্ঞ দল
বুদবুদিছড়ার তেল-গ্যাস প্রাপ্তির আশায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, পদুয়া, রাজারহাট কর্ণফুলী থেকে পটিয়ার
হাইদগাঁও বুদবুদিছড়া পর্যন্ত জরিপ কাজ চালায়।
উল্লেখ্য, গ্যাস সংকটের কারণে পটিয়াসহ সারা দেশের বিভিন্ন মিল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি কর্মসংস্থান সংকটসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনের পর দিন পটিয়ার বুদবুদি ছড়ার প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেই জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছে। জাতি হারাচ্ছে হাজার
কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকারিভাবে এ খনিজ সম্পদ উত্তোলনের উদ্যোগ নিলে গ্যাস সংকট
দূরীভূত করার পাশাপাশি গ্যাস চালিত যানবাহনসহ শত শত মিল কারখানা চালু করা সম্ভব হতো। অন্যদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের
শিল্পক্ষেত্রে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ
হারিয়ে ফেলছে দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
বুদবুদি ছড়াকে নিয়ে পটিয়াসহ দেশের
মানুষের যে স্বপ্ন ছিল তা সংশ্লিষ্টদের
অবহেলায় ভেস্তে যাচ্ছে। তাই এই অমূল্য
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান পটিয়াবাসীর।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত