তাহমিদ লিয়াম,
ডেভ হোয়াটমোরকে বাংলার ক্রিকেট কখনো ভুলবে না। যদি বলা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন কোন কোচ? তাহলে বেশিরভাগই চোখ বন্ধ করে ডেভ হোয়াটমোরের নামটি বলে দিবেন।
সময়টা ১৯৯৬। শ্রীলঙ্কা তখন ছিল ‘আন্ডারডগ’। কিন্তু সেই আন্ডারডগ শ্রীলঙ্কাকেই ১৯৯৬ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করাতে ভূমিকা রাখেন এই ডেভ হোয়াটমোর। শুধু তাই নয়, এই ডেভের হাত ধরেই দুনিয়ায় অন্যতম শক্তিশালী একটি ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দ্বিপ দেশটি।
এরপর আসে ২০০৩ সাল। ততোদিনে কানাডা কিংবা কেনিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে হেরে যাওয়ার স্বাদ পাওয়া হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। এছাড়াও টেস্ট ক্রিকেটে জেতা তো দূরের কথা, দাড়াতেই পারতো না বাংলাদেশ। মোটমাট জয় পাওয়াটাই তখন ছিল সোনার হরিণ বাংলাদেশের জন্য।
আবার ওদিকে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া কিংবা ক্রিকেট খেলা নিয়েই সমালোচনা জোরেসোরে চলছিল। এমন সময়ে সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ। আবার এদিকে জাতীয় দলের হেডকোচের পদটিও ছিল খালি।
২০০৩ সালের মাঝামাঝি সেই দ্বায়িত্বটা পেয়ে যান ডেভ হোয়াটমোর। এরপর থেকেই যেন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। নাহ, স্টিভ ওহার অস্ট্রেলিয়াকে সেবার তাদের মাটিতে হারায়নি বাংলাদেশ। তবে মাঠের পারফর্মেন্সে একটু লড়াকু মনোভাব দেখা গেছিল ঠিকই। দেশ ছাড়ার আগে ঠিক এই জিনিসটারই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন ডেভ।
তারপর পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্ট জিততে জিততে হেরে যাওয়া, ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, একই বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জেতা, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে ওঠা, এর সবই কিন্তু এই ডেভ হোয়াটমোরে জাদুতে সম্ভব হয়েছিল।
২০০৭ বিশ্বকাপের পর আর লাল-সবুজদের দ্বায়িত্বে আর না থাকা লঙ্কান বংশোদ্ভূত এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের আমলেই কিন্তু সাকিব, মুশফিক, তামিম, নাফিসদের মতো ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে আগমন ঘটে।
বাংলাদেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে, কলকাতা নাইট রাইডার্স কিংবা ভারতের কেরালা রাজ্যে ক্রিকেট দলের দ্বায়িত্ব পালন করা এই কোচের কাছ থেকে ঠিক এমনটাই আশা করছে হিমালয় কন্যার দেশ নেপালও।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও এরপর আইসিসির আর কোন ইভেন্টে সুযোগ না পাওয়া নেপালিদের দেখা যাবে না ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও৷ তাই ডেভ হোয়াটমোরের সামনে এখন সন্দীপ লামিচানে-পড়শ খড়কাদের ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ নিতে অবশ্য বেশ আগ্রহীই ডেভ হোয়াটমোর। আগ্রহী থাকারই কথা। হোয়াটমোরের জন্য এই চ্যালেঞ্জটা কোন চ্যালেঞ্জই না অবশ্য। এখন তার আমলে নেপাল কতদূর যায় সেটাই দেখার অপেক্ষা৷