বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা যেভাবে কাটাচ্ছে হোম কোয়ারেন্টাইন

আপডেট:

আব্দুল কাইয়ুম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চারিদিকে আতঙ্ক। হঠাৎ এক ভাইরাসের আক্রমণে টালমাটাল বিশ্ব। পরিবার–পরিজন নিয়ে সবাইকে নিরাপদে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার এই সময়টাতে চাই শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক শক্তি। এ সময়টিতে নগরীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কে কি করছে? কিভাবে কাটাচ্ছে???

এই প্রতিবেদকের সাথে কয়েকজনের কথোপকথন তুলে ধরা হল:

বিজ্ঞাপন

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়’এর শিক্ষার্থী মইনুল হক বলেন ” বন্ধে একটু বোরিং লাগছে।তারপরও মা বাবা ভাই বোন সবার সাথে সময় কাটানোর জন্য এরকম সুযোগ হয়তো আর পাবোনা…

আর ইবাদাত বন্দেগি করার গুরুত্বপূর্ণ সময়ও বটে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছি।”

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়’র শিক্ষার্থী ফয়জুল আবেদীন শিবলি বলেন ” হোম কোয়ারেন্টাইন একদিকে মজার আরেকদিকের বিরক্তিকর।
মজার এই জন্য যে শুধু খাওয়া, ঘুম,আড্ডা,পরিবারের সাথে মজা করা।
আর বিরক্তিকর এজন্য যে একই কাজ গুলা বারবার করতে হচ্ছে,বাইরে যেতে পারতেছিনা।
বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতেও যাইতে পারছি না।। এই ত! ”

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ’র আব্দুল্লাহ তাহসিন বলেন ” খুব খারাপ।সকালে বাহির হইলাম এক বোঁদা শাঁক আনতে। গিয়ে দেখি ১০টাকা করমু শাঁকের বোঁদা ৩০টাকা।
দুপুরে বাইর হইলাম নামায পরতে,গিয়ে দেখি মুসল্লী নাই।
বিকালে গেছি বন্ধুূদের সাথে খেলতে, আড্ডা দিতে সুখদুঃখ এর কথা বলতে,
কিন্তু মাঠে দেখি কেউ নাই।সবাই আছে আতঙ্কে।
৫মিনিট পরপর হাত ধুইতে ধুইতে হাতটা রঙ্গিন ঢেউটিন হইগেছে।
তারউপর দিনে দুইবার করে গোসল।
এই সব একেবারে জীবণটা অতিষ্ট করে তুলছে।অবশেষে একটাই কথা বলব আমি গৃহবন্দী।”

চট্টগ্রাম কলেজ’র সাকিবুর রহমান বলেন ” সারাদিন মোবাইল ল্যাপটপ, নামাজের সময় নামাজ, খাওয়ার সময় খাওয়া,,সবসময় শুয়ে থাকি।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’র ইমন কায়সার বলেন “ব্যক্তিগতভাবে কিছু আমল করার চেষ্টা করি, বই পড়ি। তাছাড়া বড় ভাইয়া একজন আলেম, উনার কাছ থেকে ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেয়ার চেষ্টা করি।”

হাজেরা তজু বিশ্ববিদ্যালয়’র সাখাওয়াত হোসেন ফরহাদ বলেন ” আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটছে হোম কোয়ারেন্টাইন।বলতে গেলে একপ্রকার অচল এক জীবন।কোথাও যাওয়া যাচ্ছেনা,কিছু করা যাচ্ছেনা।তারপরও চেষ্টা করছি প্রতিটা দিনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর।কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই বাছাই করেছি এই কোয়ারেন্টাইনে অধ্যায়নের জন্য।সেগুলো হচ্ছে,পাশাপাশি কোরান হাদিস অধ্যায়ন বাড়িয়েছি।।বাড়ির ছোটবড় সবার সাথে দিন অতিবাহিত করছি।
এই তো সবমিলিয়ে ভালোই কাটছে যদিও একটু বিরক্তবোধ হয় মাঝেমধ্যে।

সানসাইন কলেজে’র আসিফ ইকবাল বলেন ” গেইম খেলছি, সামনে এইচ.এস.সি পরীক্ষা সেটার প্রস্তুতি ও চলছে।”

ইসলামিয়া কলেজ’র মেহরাব হোসেন বলেন ” দেশের অবস্থা খারাপ, কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না। তাই খুব টেনসনে আছি।”

আইডিয়াল স্কুল’র আসাদ আজিম বলেন ” শিক্ষামূলক কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করছি।
তবে মোবাইলটা ভাল হলে
আর মোবাইল ভরা এম্বি থাকলে জমে ক্ষীর হত।”

এমইএস কলেজ’র কাজি শহিদুল মারুফ বলেন ” পেইনে আছি এক ধরনের। অন্যরকম লাগছে সবকিছু। ”

আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ’র আবরার আসলাম হাসিব বলেন ” নফল নামায,
কোরআন অধ্যয়ন,
ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়ন এইতো এইসব,,।
আর একটু গেইমস খেলি।”

শাহ ওয়ালিউল্লাহ স্কুল’র সায়েম উল্লাহ বলেন ” এইত ঘুমাচ্ছি, নামাজ পড়ছি, ছাদে একটু ঘোরাঘুরি করি আর বাকিসময় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ”

হাজী মহসিন স্কুল ‘র মাইনুদ্দিন খালিদ বলেন ” খুব ইবাদাতময়, ঘুম যাওয়া, নামাজ পড়া, খাওয়া আর মুভি দেখা। ”

কলেজিয়েট স্কুল’র আরমান মাহমুদ অন্তর বলেন ” আমার ভালোই কাটতেসে কারণ আমি ২৪ ঘন্টা মোবাইল টিপলেও আর মুভি দেখলেও বোর হইনা।”

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’র জায়নুর রহমান বলেন” তেমন খারাপ না। কারন আমি অন্তর্মুখী টাইপসের।তেমন বেসি আগেও বের হতাম না। তবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে এইভাবে ঘরে থাকব সেটার প্ল্যান ছিলো না।””

কাজেম আলী স্কুল’র শিহাব উদ্দীন বলেন, ” খাচ্ছি, ১০/১২ ঘন্টা পড়াশোনা করছি।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়’র হাসানুল বান্না বলেন ” সারাদিন অনলাইনে। ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে ল্যাপটপ, তারপর আবার ফোন।”

মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়’র রাহাত রিজভী বলেন ” পড়াশোনা করছি নিয়মিত। ভালোই কাটছে। ”

নুর মোহাম্মদ হৃদয় ও মোহাম্মদ কায়সার বলেন ” সামাজিক কাজ ও গরিবের মধ্যে খাবার বিতরন করছি। ”

চন্দন দেব বলেন ” নিজেকে ফিল্টারিং করছি”।

আবু বকর বলেন ” মোবাইলে ক্রিকেট,ফুটবল,ফেসবুক। কোরআন তেলাওয়াত,নন একাডেমিক বইপত্র ইত্যাদি পড়ে সময় যাচ্ছে।”

মোহাম্মদ জিসান বলেন ” ৯০% মেয়েরাতো সারা বছর লকডাউনে থাকে। তাই এই পরিস্থিতিতে তাদের সম্পর্কে একটু ধারনা নিচ্ছি।”

দূর্জয় ঘোষ বলেন ” বাসার ইট গুনে গুনে সময় কাটাচ্ছি। ”

ইশতিয়াক বলেন ” গেমস খেলে খেলে সময় কাটাচ্ছি। ”

মোহাম্মদ আলমগির বলেন ” অনলাইন, চ্যাটিং ফ্যাটিং করছি।”

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ’র রিফাহ তাসনিয়া তারান্নুম বলেন ” ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটাচ্ছি।

উল্লেখ্য, সবার একটিই প্রার্থনা সুখ এবং সুস্বাস্থ্য কামনা। সবাই ভালো থাকি। একে অপরের জন্য বাঁচি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত