- ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’: সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এখন সাধারণ ঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের মেহেরপুর, চুড়াডাঙ্গা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোয় অবস্থান করছে। এটি আজ বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। এরপর ভারতের হিমালয় বা তৎসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দুর্বল হয়ে পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে।
‘ফণী’ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ সকাল ১০টার দিকে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন।
শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন ফণী খুলনা-সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে সরে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার এবং এটি উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে।’
‘অগ্রসর হয়ে চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে। এটি অবস্থান করবে আরো পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এই সময়ে এসব অঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে। তারপর এটি ভারতের দিকে চলে যাবে।’
বিপদ সংকেত বহাল
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা থেকে কিছুটা শঙ্কামুক্ত বলেও জানান আবাহওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ। তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছি। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং কক্সবাজারকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছি।’
বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কমে গেছে
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে যে ধরনের আশঙ্কা করা হয়েছিল সেই অবস্থা এখন নেই। এছাড়া পূর্বাভাস অনুযায়ী যথাযথ প্রস্তুতি ও উপকূলের সকল মানুষকে সাইক্লোন সেন্টারে সরিয়ে নেয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সহনশীল মাত্রায় নিয়ে আসা গেছে।
অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাতাস এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। যদি বাতাসের তীব্রতা অধিক হতো তাহলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হতো। তারপরও আবহাওয়া যেহেতু সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা যায় না, সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে আমাদের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে না যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা এখনো কিছুটা আছে। ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, অনেক সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এবং জোয়ার-ভাটাতেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
সারাদেশে বজ্রপাত ও ঘূর্ণিঝড়ে ১৪ জন নিহত
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত ও বজ্রপাতে গতকাল ও আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, ভোলা, বরগুনা, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ভারতের ওডিশা রাজ্যে ‘ফণী’র তাণ্ডব শুরু হয়। সেখানকার পুরি উপকূলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে। সেখানে আটজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এরপর সেটি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত আনে। মধ্যরাতের পর ভারতের এই রাজ্যে প্রবেশ করে ‘ফণী’। ৯০ কিলোমিটার বেগে খড়গপুরে এটি আঘাত হানে। পরে আরামবাগ, কাটোয়া, নদীয়া হয়ে গেছে মুর্শিদাবাদে। তারপর সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।