কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
একজন ইউপি চেয়ারম্যানের যে এত ক্ষমতা আগে জানত না কেউ। এখন স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসন হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে আসছে। আহাম্মকের মত নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি পেশীশক্তিতে বলিয়ান হয়ে এলাকার সহজ সরল গরিব মানুষ ও প্রাকৃতি উপর জোর জুলুম করে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে আসা সরকারদলীয় চেয়ারম্যান ইউনুস ভূট্রোর এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আবার এসবের কারণে একের পর এক আইনের মারপ্যাঁচে পরে তাকে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। তারপরেও সে পূর্বের চাইতে দিন দিন আরো বেপরোয়া জীবন যাপন করছে ।
পাহাড় কাটা ও পরিবেশ নষ্টের দায়ে এবার তাকে গুনতে হচ্ছে ৬ লাখ টাকা জরিমানা। সূত্রে জানা গেছে কক্সবাজার রামু উপজেলার মিঠাছড়ি এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী সরকারী সংরক্ষিত এমন কোন পাহাড় পাবেন না যেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টুর কুদালের আঘাত লাগেনি। প্রায় ডজনাধিক পাহাড়ের মাটি পাচার করে সম্পূর্ন নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় একাধিকবার অভিযান, মামলাসহ প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের পরও তাকে থামানো যাচ্ছে না। গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) পাহাড় ধ্বংস করার অপরাধে ভুট্টু চেয়ারম্যানকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন। তিনি বলেন পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ ধ্বংস করার অপরাধে রামুর মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টুকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন পরিবেশ অধিদপ্তর এর আগেও তাকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ করেননি। সরেজমিন অভিযান করে পাহাড় কাটার যথেষ্ট প্রমাণও পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনুছ ভুট্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়। তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ভয়ংকর রূপে পাহাড় কেটে আসছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের পানেরছড়া, বনতলা, নিজেরপাড়া, বলীপাড়া, বসুন্ধরা, চেইন্দাসহ অন্তত ১০টি এলাকার ২০টি’র বেশি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে চেয়ারম্যান ভুট্টু বাহিনী। বর্তমানেও ওইসব এলাকায় সমানতালে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে।জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ব্যাপকহারে পাহাড় কাটা হয়েছে। এই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অনেকবার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে পাহাড় কাটার দায়ে চেয়ারম্যান ভুট্টু ও তার বাহিনীর লোকজনকে মামলা এবং জরিমানা করা হয়েছে। একাধিকবার জব্দ করা হয় পাহাড় কাটার সরঞ্জাম। তারপরও ‘ক্ষমতারধর’ পাহাড়খেকো চেয়ারম্যান ভুট্টুকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কয়েক মাস আগে বনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পাহাড় কাটার দায়ে জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। কিন্তু এরপর এক মাসের ব্যবধানে সেখানে কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এভাবে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ওই পাহাড়গুলো কেটে সাবাড় করে ফেলেছেন চেয়ারম্যান ভুট্টু বাহিনী।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ইউনুছ ভুট্টুর বাহিনী ছিলো। এই বাহিনীতে রয়েছে- চেয়ারম্যান ভুট্টুর ভাই সরওয়ার আলম ও নূরুল আজিম, চাচাতো ভাই মুফিজুর রহমান, দক্ষিণ মিঠাছড়ির পানেরছড়া বলিপাড়ার মোঃ আলমের পুত্র মোঃ শহীদুল্লাহ, পানেরছড়া পূর্বকূল পাড়ার আবদুল গফুরের পুত্র ফরিদ আলম, সিকদার পাড়ার মৃত আবু বক্করে পুত্র পূর্বপানের ছড়ার নূর আহামদের পুত্র জসিম উদ্দীন, মোঃ হোছেনের পুত্র জসিম উদ্দীন, পশ্চিম পানেরছড়ার নবী হোছেনের পুত্র নাছির উদ্দীন, আবদুস সালামের পুত্র মোঃ মিজান এবং বলীপাড়ার মৃত আবদুল মজিদের পুত্র মোঃ আলমসহ অন্তত ৫০ জন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই ইউনুছ ভুট্টু তার বাহিনী নিয়ে শুরু করে পাহাড় কাটার মিশন। তিনি এই বাহিনী স্কেভেটর ও ডাম্পারসহ আধুনিক যন্ত্র দিয়ে একে একে কেটে সাবাড় করে আসছে পুরো ইউনিয়নের পাহাড়গুলো। অভিযোগ রয়েছে, বড় নেতাদের নাম ব্যবহার করে ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইউনুছ ভুট্টো তার বাহিনী দিয়ে একচেটিয়াভাবে পাহাড়গুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এভাবে তিনি একে একে কেটে ফেলছে দুই-তিন’শ ফুট উঁচু পাহাড়গুলো। এসব পাহাড়ের অধিকাংশই ছিলো সামাজিক বনায়ন। পাহাড় কাটতে ধ্বংস করা হয়েছে অগণিত সামাজিক বনায়নের সৃজিত গাছও। কিন্তু ইউনুছ ভুট্টু ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতার কাছে সামাজিক বনায়নের অংশীদাররা ছিলো বরাবরই অসহায়। তাই সৃজিত বনায়নসহ অসংখ্য পাহাড় কেটে ফেললেও ভয়ে কেউ মুখও খুলেনি। এমনকি বনবিভাগের লোকজনও ভুট্টু বাহিনীর কাছে অসহায়। বর্তমানেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই সমানতালে পাহাড় কেটে সাবাড় করেই চলছে দক্ষিণ মিঠাছড়ির অঘোষিত ‘রাজা’ চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু।আরো অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান ভুট্টু বাহিনীর এই ভয়ংকর পাহাড় কাটার সংবাদ তুলে আনতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক তার বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আবদুল মালেক সিকদার নামে এক স্থানীয় সাংবাদিককে কুপিয়ে গুরুতর জখমও করা হয়েছিল। এছাড়া আরো কয়েকজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভুট্টু বাহিনীর সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বারবার পার পেয়ে যায় ইউনুুছ ভুট্টু। সর্বশেষ গত (১৮ জুলাই) ভুট্টু বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন খোদ রামু উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শহীদুল হাসান।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, গত তিন বছরে দক্ষিণ মিঠাছড়িতে যে হারে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে তা জেলার আর কোথাও হয়নি। এতে ওইসব পাহাড়ে থাকা হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আবাসস্থল মারাত্মকভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে সামগ্রিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে এর আশোপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে। এখন যে পাহাড়গুলো অবশিষ্ট তাও যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তাই অতিদ্রুত ভয়ংকর পাহাড়খেকো চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু ও তার বাহিনীর লোকজনের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবে