শনিবার, আগস্ট ১৬, ২০২৫

কলেজছাত্রের হাত বিচ্ছিন্ন

আপডেট:

কলেজছাত্রের হাত বিচ্ছিন্ন

রাজশাহীর কাটাখালীতে ট্রাক ও বাসের প্রতিযোগিতায় কলেজছাত্র ফিরোজ সরকারের ডান হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় বাসচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে পুঠিয়া বাজার থেকে ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। এদিন দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) সদরদফতরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান কমিশনার হুমায়ুন কবির।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার বাসচালকের নাম ফারুক হোসেন সরকার (৩৯)। পুঠিয়া উপজেলার গোপালহাটি গ্রামে তার বাড়ি। ফারুকের বাবার নাম আতাহার আলী সরকার।

পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির জানান, যে ট্রাকের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লেগেছিল, বুধবার (৩ জুলাই) দিনগত রাত ১১টার দিকে সে ট্রাক জব্দ করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগরীর উপরভদ্রা এলাকার একটি ওয়ার্কশপ থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এর আগে গত শনিবার দিনগত রাতে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে ‘মোহাম্মদ পরিবহন’ নামের ওই বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-০৪৬২) জব্দ করা হয়। তবে সেদিন বাসের সঙ্গে চালককে পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার আদা নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছিল ‘ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৮৭৯৬’ নম্বরের ওই ট্রাক। আর বগুড়া থেকে রাজশাহী আসছিল মোহাম্মদ পরিবহনের ওই বাস। দু’টি যানই চলছিল বেপরোয়া গতিতে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ও ট্রাকের ঘর্ষণ লাগে। এতেই চাপা পড়ে ফিরোজের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়।’

পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আরও জানান, ঘটনার পর বাসযাত্রী ফিরোজ শুধু বলতে পেরেছিলেন, তিনি যে বাসের যাত্রী ছিলেন তার নামের প্রথম দুই ইংরেজি অক্ষর ‘এম’ এবং ‘ও’। এর ভিত্তিতেই তদন্ত করে পুলিশ বাসটিকে জব্দ করে। কিন্তু কোনও গাড়ির সঙ্গে চাপা লেগেছিল তা কেউ বলতে পারছিলেন না। অবশেষে গোয়েন্দা তথ্য এবং ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে ট্রাকটিকে শনাক্ত করা হয়েছে।’

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর আটক হওয়ার ভয়ে ট্রাকচালক ঢাকা না গিয়ে বেলপুকুর থেকে ঘুরে বাইপাস সড়ক হয়ে আবার রাজশাহী চলে আসেন। এরপর ছন্দা পেট্রোল পাম্পে ট্রাকটিকে রাখা হয়। পরে শনিবার (২৯ জুন) সকালে তিনি আবার ঢাকা যান। এরপর ঢাকা থেকে ফিরে আবার ছন্দা পেট্রোল পাম্পে ট্রাক রেখে চালক আত্মগোপন করেন। পরে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক মেরামতের জন্য বুধবার নগরীর উপরভদ্রা এলাকার একটি ওয়ার্কশপে নিয়ে যান হেলপার। সেখান থেকেই সেটি জব্দ করে নগর পুলিশের সদর দফতরে আনা হয়।

হুমায়ুন কবীর জানান, ট্রাকের চালককেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার নাম মো. ওয়াহিদুজ্জামান (২৪)। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পাটিয়াকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম আবদুল কাদের। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রাকে হেলপার ছিলেন না। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। আর গ্রেফতার বাসচালক দুর্ঘটনার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।

ওই দুর্ঘটনার পর ফিরোজ সরদারের বাবা মাহফুজ আর রহমান বাদী হয়ে দুই গাড়ির চালককে আসামি করে নগরীর কাটাখালি থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাসচালক ফারুক হোসেন সরকারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হাত হারানো ফিরোজ সরকার রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষা দিতে তিনি বগুড়া গিয়েছিলেন। সেখান থেকে যান গ্রামের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামুইট মহল্লায়। বাড়ি থেকে গত শুক্রবার (২৮ জুন) তিনি বাসে চড়ে রাজশাহী ফিরছিলেন।

ফিরোজের ভাষ্য, তিনি বাসের একেবারে শেষের সিটে বসে ছিলেন। আর ডান হাতে জানালার ভেতর দিয়েই সামনের সিট ধরে ছিলেন। হঠাৎ ঝাঁকুনিতে তার হাত জানালার বাইরে চলে যায়। তখনই পাশের গাড়ির সঙ্গে বাসটি ধাক্কা খায়। এতে চাপা পড়ে তার ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে পড়ে যায়। কিন্তু তখন তিনি পাশের গাড়িটিকে খেয়াল করতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, তার মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। দুর্ঘটনার আগে তিনি দুটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পরেরগুলো আর দেওয়া হয়নি। তিনি এখনও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীর তাকে দেখতে যান। এসময় তিনি ফিরোজের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত