বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

“কথ্য কার্টুন: গরীব বান্ধব সাংবাদিকতা”

আপডেট:

“কথ্য কার্টুন: গরীব বান্ধব সাংবাদিকতা”

হাত দিয়ে না লিখেও কবিতা রচনা করা যায়,কবি হওয়া যায়। দশ আংগুলে অর্থাৎ কম্পিউটারে না লিখলেও কবি হয়। মুখে না বলেও কবিতা হয়,কবি হয় । সেই কবিতা আবার দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও মিলে। তা হল “ক্যামেরার কবি”। ক্যামেরা অনেক শক্তিশালী মাধ্যম যা সহজেই বিবেকের কড়া নাড়িয়ে দিতে পারে। ক্যামেরার কবি আছে, নাম নাসির আল মামুন। যাকে কবি সামসুর রহমান ক্যামেরা কবি বলেছেন এবং কবি ” গোরস্থানে কোকিলের করুন আহবান” কাব্যগ্রন্থটি ক্যামেরা কবি নাসির আল মামুনের নামেই উৎসর্গ করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

দৈনক প্রথমআলো ভারতের আলোকচিত্রী “রাঘু রাই” -কে ক্যামেরা কবি বলেছেন (সূত্র: ১৫/১২/২০১২ ইং তারিখের সংখ্যায়)। কালিও কলম ম্যাগাজিন আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনকেও ক্যমেরা কবি বলেছিলেন। এ রকম অনেক তথ্য দেওয়া যায় যে ক্যামেরার কবি আছেন। তাই বলা চলে, ক্যামেরার একটি শক্তিশালী ভাষা আছে। বহু পূর্বে ১০২১ সালে আরবি ভাষায় ইরাকের বিজ্ঞানী ইবন-আল-হাইতাম আলোক বিজ্ঞানের ওপর সাত খণ্ডের একটি বই লিখেছিলেন , এর নাম ছিল কিতাব আল মানাজির। সেখান থেকেইই ক্যামেরার উদ্ভাবনের প্রথম সূত্রপাত। আর সেই থেকে আজ অবদি ২০২০ সালে এসে বাংলাদেশের ১২ কোটি প্রায় মানুষের হাতে মোবাইল ক্যামেরা আছে। কারো কারো হাতে দু’টিও আছে। কিন্তু সাংবাদিকের হাতের একটি ক্যামেরার শক্তি ১২ কোটি মানুষের সাথে টপকিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে। একজন সাংবাদিকের কলম ও ক্যামেরা একটি আস্থা ও ভক্তির জায়গা।

একবার এক ফটোসাংবাদিক একটি লঞ্চে চড়ে নদী পথে যাচ্ছিলেন। লঞ্চের প্রায় সকল সহজ সরল যাত্রীরা সাংবাদিকের ক্যামেরার দিকে দেখছে আর একটু আদটু কথাবার্তা বলতে চাচ্ছে, যেমনটা সাধারনত মানুষ চায়। হঠাৎ একটি ডাকাত দল লঞ্চের মধ্যে ঢুকে এবং মোটামুটি সবার মালামাল একে একে তাদের বোটের মধ্যে তুলে নেয়। লঞ্চের তিন তলা থেকে বুঝতে পেরে সাংবাদিক ডাকাত দলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ডাকাত দল একটু ভেবাচেকা খেয়ে সাংবাদিকের দিকে তাকালো। সাংবাদিক বলল,তোমরা যে জিনিস গুলো নিয়ে যাচ্ছ সেই জিনিস গুলোতো আমি আর এই লঞ্চের সবাই মিলে রম্মন (ছদ্মনাম) ডাকাতের জাহাজ থেকে ডাকাতি করে এনেছি এবং আমাদের ডাকাতি করা সকল ছবি আমার এই ক্যামেরায় আছে, তুমি চাইলে আমি দেখাতে পারি। লঞ্চের সকল যাত্রী সাংবাদিকের উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহস দেখে অবাক হয়ে গেল! তখন তিন তলা লঞ্চের সকল যাত্রীর মনোবল বেড়ে গেল এবং সকল যাত্রী সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে ” ওস্তাদ!” ওস্তাদ! ” “ওস্তাদ ঠিক কইসে!! ” এই বলে চিৎকার করতে থাকে। শেষমেশ সাংবাদিক আবার উপস্থিত ডাকাত সর্দারকে বলল, কিন্তু চিন্তা করলাম আমরা এত বড় ডাকাত দল আর ডাকাতি করবো না। আমাদের অঞ্চলে একটি পেট মাজার আছে সেই মাজারে আমরা সকল লুট করে আনা মালামাল দান করে দিব। উপস্থিত ডাকাত সর্দার ভাবতে লাগল,এরা এত বড় ডাকাত দল যদি আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে জীবনটাই যবে তাছাড়া ওদের লুট করে আনা এতসব মালামাল যদি পেট মাজারে দান করে দিতে পারে, আমরা এগার জনজন কেন পারব না? ডাকাত দল লঞ্চের সকল যাত্রীর মালামাল ফেরৎ দিয়ে দেয় এবং অন্য জায়গা থেকে ডাকাতি করে আনা মালামাল গুলোও সাংবাদিকের হাতে তুলে দেয় এবং বলে ” আমাদের মালামাল গুলোও পেট মাজারে দান করে দিবেন। আর বাবার কাছে আমাদের এই এগার জনের জন্যও দোয়া করবেন, যেন আমরাও ডাকাতির পেশায় আর না আসি “।

বিজ্ঞাপন

একজন সাংবাদিক জাতির জাগ্রত চোখ।জাতির একটি আস্থার নাম। তিনি পারেন সময়ের সাথে সময়ের, মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের বন্ধন রচনা করতে। এবং তা’ টেনে নিয়ে যান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। এ কারণে সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা। আবার মহান পেশাও!

কিন্তু দূঃখ পাই যখন দেখি দেশের কিছু দুঃসময়ে মিডিয়াতে আসে ” রমাজানে দ্রব্যমূলের উর্ধগতি” বা ” করোনা আতংকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বেড়ছে” তখন ব্যবসায়ী মহল স্থির থাকা পন্যের দাম সত্যিই বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ আয়ের মানুষ নিজ ঘরে প্রয়োজনাতিরিক্ত পন্য কিনে রখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এদের উভয়ের পিশাপিশিতে দরিদ্র ও হতদরিদ্র শ্রেণী পিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনিতেই দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ জন্মের পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী একজন মানুষের প্রতিদিনের ২২৬০ কিলোক্যালরি খাদ্য পায় না। একজন মানুষের চাল,ডাল,আলু,তেল,নুন কিনে খাওয়ার অধিকার আছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব ষ্ট্যাটিষ্টিক্স -২০১১, রিপোর্ট অভ হাউসহোল্ড ইনকাম এক্সপেন্ডিচার সার্ভে-২০১০, পৃষ্ঠা-৫১ – এ দেওয়া আছে যে বাংলাদেশের জাতীয় ভিত্তিতে দৈনিক খাদ্য থেকে ক্যালরি গ্রহনের তালিকা, যা প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন। গরীব কেন বাদ যাবে? গরীব বাদ যাওয়ার কনো বিধান বাংলাদেশের মহান সংবিধানে নেই। অন্যদিকে, মিডিয়া যদি এই বলে নিউজ কভার করে যে, ” অযথা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে অসাধু ব্যবসায়ীর জরিমানা” অথবা এমন টাইপের নিউজ,তাহলে হতদরিদ্র শ্রেণী দেশের বিপদের সময় অথবা পৌষ পর্বনে ভালমন্দ কিছু খেতে পারবে। এমন একটি নিউজ হবে সময়েরর দলিল, হতে পারে গরীবের জন্য একটি ইতিহাস!

আমি সাংবাদিক নই,শুধুমাত্র কিছু দিক-বেদিকের খবর হাত্রাই। হাত্রাইয়া বুঝলাম গরীব বান্ধব সাংবাদিক ও সংবাদ আজ খুবই প্রয়োজন, যা মূলধারার সংবাদ ও সাংবাদিকরাই হবেন। যাতে নৈতিকতার ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তি ও ফেব্রিকেশন থাকবে না। এস.পি.জে অর্থাৎ সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিজম এর মারফত হয়ে সকল মান্যবর সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ গরীববান্ধব সংবাদ প্রকাশের জন্য।

আমরা চাই গরীব বান্ধব শক্তিশালী ” ক্যামেরা কবি ” , আমরা চাই না ” দারিদ্রতার কবি”। আর তা না হলে ১৯৫০ সালের তৎকালীন তরুন কবির কবিতা আবারও বাতাসে ধ্বনিত হব :
“একটা ছেঁড়া গামছা ছিল
তাই দিয়ে দিল ফাঁস
মরেও মেয়ে দায় ঠেকিলো
ঢাকবো কি দিয়ে লাশ?”

স্বাধীন দেশে এমন কবিতা কে শুনতে চায়?

লেখকঃ মো: মুশফিকুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত