এম. এ. সাত্তার, কক্সবাজারঃ
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত জেলা কক্সবাজার। আর পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের তীরজুড়ে কক্সবাজার পৌরশহর। আবার কক্সবাজারের প্রধান টাউনটি পৌরসভার মানচিত্রের ভিতরেই রয়েছে। এ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও দীর্ঘদিন যাবত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে পৌরবাসী।
টেকপাড়া, কালোর দোকান, হাঙ্গর পাড়া, মাঝের ঘাট, বার্মিজ স্কুল রোড, বাজারঘাটা, পৌরসভা মার্কেট এর পার্শ্ববর্তী রোডসহ অধিকাংশ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। দীর্ঘদিন মেরামত কিংবা সংস্কার না করায় দুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। কিন্তু এই বেহাল রাস্তাগুলো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
গত দুদিন আগে রাজশাহী থেকে নাজমুল হোসেন চৌধুরী নামে এক কলেজ শিক্ষক দম্পতি কক্সবাজারে ভ্রমণে এসে কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তারা দুজন চৌরাস্তার মোড় ভোলাবাবু পেট্রোল পাম্পের বিপরীতে রাস্তার উত্তর পাশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে ব্যর্থ হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় পেট্রোল পাম্পের দক্ষিণ পাশে তাদের সাথে কথা হলে কলেজ শিক্ষক বলেন একটি পৌরসভার রাস্তাঘাট এত অনুন্নত যে হবে তা কল্পনাও করা যায় না। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পর্যটন এলাকার পৌরসভা এত পিছিয়ে থাকার কোন যুক্তি দেখি না, নিশ্চয়ই এই পৌরসভা সতীনের পেটে বাচ্চা হওয়ার মত তীব্র প্রসব বেদনায় ছটফট করছে। এসব দেখে দেখে অন্যরা মজা নিচ্ছে। এই অবস্থায় মনে হচ্ছে যারা নীতিনির্ধারকের দায়িত্ব পালন করছে ওইসব ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বড় অভাব রয়েছে। মনে হচ্ছে একটি পক্ষ দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি নিয়ে গোপন ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে আছে। নতুবা এই পর্যটন এলাকা এরকম গুরুত্বহীন থাকার প্রশ্নই আসেনা। এভাবে আর কয়েক বছর থাকলে বিদেশি নয় দেশীয় পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিবে।
জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে স্থাপিত হয় কক্সবাজার পৌরসভা। ৩২.৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৭৭ জন। সর্বমোট রাস্তা ১১৪ কি: মি:। তন্মধ্যে কার্পেটিং ২৭ কি: মি:, এইচ বি বি ২০ কি: মি:, সিসি/আরসিসি ১২ কি: মি: ডবিস্নউবিএম ৬ কি: মি: , কাঁচা ৪৯ কি: মি: হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব কাঁচাপাকা রাস্তা এখন এক পাতিলে রান্না করা খিচুড়ি পরিণত হয়েছে। যার কারণে এ রাস্তা ক্যাটাগরি ভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস করে জানার বোঝার কোন উপায় নেই। পৌরশহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলির অধিকাংশ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা।এ সকল রাস্তাগুলো বছরের পর বছর সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় এই বেহাল অবস্থায় খুবই বিপজ্জনক সড়কে পরিণত হয়েছে। এসব রাস্তার অধিকাংশ স্থানের পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আর কতগূলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ফলে পূর্বে রাস্তা কোথায় ছিল তার ম্যাপ ধরে সার্ভিয়ার নিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
এই শুষ্ক মৌসুমে ভাঙ্গাচুরা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে মানুষকে কথক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ আরো ৪/৫ গূণ বৃদ্ধি পেয়ে এ রাস্তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে ধারণা করেন কেহ কেহ। প্রতিনিয়তই এই ব্যস্ততম রাস্তার গর্তে ছোট-বড় যানবাহন উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শুধু স্থানীয়রা নয় দেশ-বিদেশ থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা এই পৌর শহরের রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পোহাচ্ছে নানা দুর্ভোগ। এছাড়াও শহরের প্রধান অংশে অবস্থিত বড় বাজার রোড, মাছ বাজার রোড, কসাইখানা,বাঁশ বাজার, পান বাজার রোড, কাঁচাবাজার রোড, হাসপাতাল রোডসহ পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। বর্তমানে এই রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই রাস্তাগুলো আপাতত জুরাতালি দিয়ে হলেও চলাচলের জন্য মেরামত করার দাবি পৌরবাসীর।
শহরের হাঙ্গর পাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ দাশ , আশিষ কুমার ঘোষসহ আরও অনেকেই বলেন, শহরের এই সব রাস্তা দেখে মনে হয় যে এখনও আমরা বর্বর ও আদিযুগে বসবাস করছি, যে যুগে রাস্তা-ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। কিন্তু একটি দেশের রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার কর্তৃপক্ষের কোনও নজর নেই দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটন শহর কক্সবাজার পৌরসভাস্থ রাস্তা সমূহের। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে কিন্তু রাস্তার যে বেহাল অবস্থা তাতে এই রাস্তা ব্যবহারে দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যদি এই রাস্তাগুলো আপাতত চলাচলের জন্য মেরামত করা যেত তাহলে দেশবিদেশ থেকে আগত পর্যটকরা সহ স্থানীয় পথচারীরা একটু হলেও স্বস্তি পেত।
জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার পৌরশহরের প্রধান সড়ক পৌরসভার আওতায় পড়েনি। তবে উপ-সড়কগুলোর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এ জন্য টেন্ডার আহবান করা হবে। আগামী দুই/এক বছরে কক্সবাজার পৌরসভার চেহারা পাল্টে যাবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ (অব:) জানান, প্রধান সড়ককে চার লেইনে করে সংস্কার করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে শীঘ্রই টেন্ডার আহবান করবেন। আপাতত সাময়িকভাবে প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।