সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫

কক্সবাজারে নিজ অর্থায়নে রাস্তা সংস্কার করে দিলেন সাবেক মেম্বার শাহিনা

আপডেট:

এম এ সাত্তার, ককসবাজার:
কক্সবাজার সদরস্থ পিএমখালী ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ অর্থায়নে একেরপর এক নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরাতন রাস্তা সংস্কার করে অবশেষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সাবেক মেম্বার শাহিনা আক্তার।

ইউনিয়নের অন্যান্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও এখনো উন্নয়ন হয়নি এই রাস্তাটির। গ্রাম থেকে বাজারে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এই রাস্তাটি নিয়ে বিপাকে পড়েছিলো স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। রাস্তাটি গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এক হাটু কাদা জমে। তখন যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাচলও বিপদজ্জনক হয়ে পড়ে। যা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে জনদুর্ভোগের।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে অনেকবার। সরকারি দপ্তরগুলোও ঘোরা বাকি নেই। কিন্তু রাস্তা সংস্কার করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিশেষে সাবেক মেম্বার শাহিনা আক্তারের শরণাপন্ন হন এলাকার মানবেতর জীবন যাপন করা কিছু ভুক্তভোগী মানুষ। অভিযোগ ও আবেদন পাওয়ার সাথে সাথে ভুক্তভোগীদের নির্দেশনা অনুযায়ী মেম্বার শাহিনা কালক্ষেপণ না করে নিজের অর্থায়নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরাতন রাস্তা সংস্কার করে দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।

পিএমখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড ছনখোলা দক্ষিণ নয়াপাড়া গ্রামে রাস্তায় গতকাল সকাল ১১টায় দেখা যায়, একাধিক শ্রমিকের কারও হাতে টুকরি, কারও হাতে কোদাল। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে টুকরিতে ভরা হচ্ছে। আর এসব টুকরি মাথায় করে নিয়ে রাস্তার ভাঙাচোরা অংশে ফেলা হচ্ছে।রাস্তার অধিকাংশ স্থান মাটি ভরাট করে দুই-তিন ফুট উঁচু করা হয়ে গেছে। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নিজ উদ্যোগে কাজ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ছবি তুলতে গেলে সংস্কার কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিক আজিজ উল্লাহ বলেন, ‘ছবি তুইলেন না। ছবি তুইলা প্রচার করলে বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কাছে এইটারে তাদের কাম হিসাবে দেখাইবেন। সরকার কিন্তু এক টাকাও দিচ্ছে না। আমরাই সাবেক মেম্বার শাহিনা আক্তারের কাম করতাছি।

গ্রামবাসীরা বলেন, ছনখোলা পশ্চিম নয়াপাড়ার দক্ষিণ পাশ থেকে উত্তর ইন্দ্রঘোনা আইনাঘোনা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা আছে। এ রাস্তার পাশ্ববর্তী এলাকায় প্রায় তিন/চার হাজার মানুষের বসবাস। এটাই ছনখোলার প্রধান সড়কের সঙ্গে গ্রামবাসীর যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। দিনকি রাতে এই রাস্তা দিয়ে মানুষ তাদের বাড়িঘরে যাতায়াত করে থাকে।বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ওই সংস্কার করা রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায়। এখন ভেঙেচুরে রাস্তার কোন অস্তিত্ব নেই। রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে এ রাস্তা চলাচল অযোগ্য হয়েছে অনেক সময় হতেই।

পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির সংস্কার হচ্ছে না।সংস্কারের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি ‘সম্ভাবনার’; সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী সাবেক মেম্বার শাহীন আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাস্তাটি সংস্কারের সম্মতি জ্ঞাপন করেন এই জনদরদি।

দক্ষিণ নয়াপাড়া সমাজ কমিটির সদস্য মোঃ সালামত উল্লাহ বলেন, বেহাল রাস্তার কারণে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে আসা পানির ঢলে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা দেয়াল দরকার। সরকারিভাবে যদি এ কাজটা করা হয়, তা হলে রাস্তাটি সহজে ভাঙবে না।

স্থানীয় শিক্ষানুরাগী পিএমখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, সাবেক ইউপি সদস্যা শাহিনা আক্তার নিজ টাকায় একাধিক সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন। এ সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্যা শাহিনা আক্তার বলেন,
গ্রামের মানুষের চলাচলের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমি এ গ্রামের সন্তান হিসেবে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব মেরামত করে দিয়েছি।এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এখন খুব সহজেই ওই সড়ক ব্যবহার করতে পারবেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বলেন, রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে বিত্তবানরা এভাবে এগিয়ে এলে এদেশ আরও উন্নত হতো। আমি ইউপি সদস্যের এ মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য প্রকল্প আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।ইউনিয়নের কোন রাস্তার উন্নয়ন বাদ পড়বেনা। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এমনকি প্রধান সড়ক থেকে দূরবর্তী ২/৩ টি বাড়ি থাকলেও তাদের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় সাময়িক সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এগিয়ে আসে সেক্ষেত্রে আমরা এমন মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত