এম এ সাত্তার,
দেশব্যাপী ১০০৭ ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপ আপাতত শেষ। দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। এ ধাপের ভোট হবে ১১ নভেম্বর। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের ইউপিল ভোটের মনোয়নপত্র দাখিল চলছে। আগামী ২ নভেম্বর এ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হবে।
৪ নভেম্বর যাচাই বাছাই হবে এবং ১১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। এ ধাপের ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। এই দুই ধাপের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক চলছে। মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে মিছিল-শোডাউন করছে। সরকারি বিধি নিষেধ তোয়াক্কা না করে
গভীর রাত অবধি প্রচার-প্রচারণা মিছিল-মিটিং সহ উচ্চস্বরে গান বাজানো চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থী ও প্রার্থীর সমর্থকরা।
এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনকে মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার চরম অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন ইউপিতে। তৃতীয় ধাপের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার-লিফলেট দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কোনো প্রার্থী পোস্টার টাঙালেও তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেও নিচ্ছে কোন ব্যবস্থা নেই ।জেলায় ২১ ইউপি নির্বাচনের ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।
ঝিলংজা ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক সদস্য প্রার্থীর হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন অন্য প্রার্থীর লোকজন। পিএমখালীর ৩ নং ওয়ার্ড তোতকখালী এলাকাতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক প্রার্থী ও চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কর্মিদের ক্যাম্পিং ও মাইকিংয়ের বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব ঘটনায় অভিযুক্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সমাজকর্মী কেফায়েত উল্লাহ বলেন, ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা বা হস্তক্ষেপ করতে দেখিনি। আসলে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কিনা, তাদের সদিচ্ছা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখনই যদি প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা না যায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যার ফলে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আচরণবিধির ৭-এর ‘খ’ ধারায় রয়েছে, কোনো প্রার্থী পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগে তাহার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আচরণবিধির ৮-এ উল্লেখ আছে, প্রার্থীদের পোস্টার সাদাকালো হতে হবে এবং এর আয়তন ৬০ বাই ৪০ সেন্টিমিটারের অধিক হতে পারবে না। কিন্তু অনেক প্রার্থীই এ বিধি মানছেন না।
আচরণবিধির ২০-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ বিধিও মানছেন না প্রার্থীরা। শুক্রবার জুমার নামাজের শেষে প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীই মসজিদেরর ভেতরে প্রচার চালান। ভোটারদের সঙ্গে কোলাকুলিসহ তাদের কাছে ভোট চান।
আচরণবিধিতে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, রাত ৮টার পর কোনো প্রার্থী গণসংযোগও চালাতে পারবেন না। অনেক্ ইউপিতে দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রচারও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এছাড়া প্রচারে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তাও মানছেন না অনেকে।
এ বিষয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া একধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেছেন, আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে গণসংযোগ করছি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কোনোরকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। নেতাকর্মী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে বলে দিয়েছি, তারা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন।
জানা গেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। কোনো প্রার্থী তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য কক্সবাজার সদর নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার শিমুল শর্মা’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে মোবাইলে রিং হলে কল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।