চট্টগ্রাম ট্রিবিউন ডেস্কঃ
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه، أما بعد:
মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়াবি জীবনের প্রতিটি ক্ষণে রয়েছে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য মহান শিক্ষা। প্রিয় হাবিবের সম্মানীত সাহাবায়ে কিরামরাও তাঁদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের (দরুদ শরীফ পাঠ করবেন ) অনুকরণ অনুসরণ করে গেছেন। তাঁরা রহমাতুল্লীল আলামীনের কওলী-ফেয়লী প্রতিটা নির্দেশাদি বা মৌন সম্মতির বাস্তবায়ন করেছেন নিজেদের মহা মূল্যবান জীবনে। তাঁরা আমার রাসুলের খুশীতে, খুশী যেমন হয়েছিলেন তেমনিভাবে দুখেও দুখী হয়েছিলেন। আজ তেমনি একটি দিনের কথা লিখছি যেদিনে দয়াল নবীজি দুনিয়াবি জীবনের অন্তিম সময়ে অসুস্থতা থেকে সাময়িক সুস্থতা অনুভব করে নিজ উম্মতের শিক্ষার্থে ইসলামের মূল স্তম্ভ সালাতের গুরুত্ব অত্যধিক অনুধাবন করিয়েছিলেন।
এটা ছিল সফর মাসের শেষের দিকে অথবা রাবিউল আওয়ালের প্রথমে যা আখেরী চাহার শোম্বা নামে ভারতীয় উপমহাদেশে পরিচিত। চাহার শোম্বা এটি আরবী ও ফার্সি শব্দ-যুগল। এর আরবী অংশ আখেরী, যার অর্থ শেষ এবং ফার্সি অংশ চাহার শোম্বা, যার অর্থ চতুর্থ বুধবার। আমাদের দেশে সফর মাসের শেষ বুধবারকেই শেষ বুধবার ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে সেটা ছিলো আমার দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়াবি জীবনের শেষ দিকের একটি দিন।
◾ প্রখ্যাত তাবঈ ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক বলেন:
اُبْتُدِئَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِشَكْوَاهُ الَّذِيْ قَبَضَهُ اللهُ فِيْهِ . فِيْ لَيَالٍ بَقِيْنَ مِنْ صَفَرٍ
অর্থাৎ ; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, সে অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষে কয়েক রাত থাকতে।(ইবনু হিশাম, আস-সীরাহ আন-নববিয়্যাহ ৪/২৮৯)
উল্লেখ সফর মাসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে গোটা মদিনাবাসী নিরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো। অবশ্য এর আগে বিদায় হজ্জের ভাষণদানকালেও আল্লাহর হাবিব ইংগিত দিয়েছিল যে আমি আগামী বছর হজ্ব করতে নাও আসতে পারি। তখন অবশ্য প্রখ্যাত সাহাবীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে এটিই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজ্ব। আল্লাহর হাবিব দুনিয়াবি তেষট্টি বছর হায়াতে তেমন বড় কোন অসুস্থতায় পড়েনি। কাফির মুশরিকদের হাজারো অত্যাচারেও তিনি এতোটা ক্লান্ত হয়নি। অসুস্থতা থেকে সেদিন কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলে তিনি গোসল করেছিলেন। সেদিন প্রিয় নবীর সুস্থতা দেখে মদিনাবাসী আনন্দে আত্নহারা হয়েছিলো।
◾ উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন,
إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ لَمَّا دَخَلَ بَيْتِي وَاشْتَدَّ بِهِ وَجَعُهُ قَالَ هَرِيقُوا عَلَيَّ مِنْ سَبْعِ قِرَبٍ. لَعَلِّي أَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ (لَعَلِّى أَسْتَرِيحُ فَأَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ). ثُمَّ خَرَجَ إِلَى النَّاسِ، فَصَلَّى لَهُمْ وَخَطَبَهُمْ
অর্থাৎ ; রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল, যেন আমি আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে যেয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুৎবা প্রদান করলেন। (সহীহ বুখারী ১/৮৩,৪/১৬১৪, ৫/২১৬০)
আর এখানেই স্পষ্ট যে, আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই জামায়াত ছাড়া নামাজ আদায় করেননি। আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার অসুস্থতার মধ্যেই মসজিদে যেয়ে নামাজ আদায় করে সবাইকে প্রয়োজনীয় নসীহত করেন। এখানে আরো অনেক ঘটনাবলি রয়েছে যার অন্যতম সিদ্দিকে আকবরের (হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইমামতি করা যা দেখে আল্লাহর হাবিব শেষ সময়ে আনন্দিত হয়েছিলো। শুধু তাই নয় ইহজগৎ ত্যাগকালেও আস্-সলাত! আস্-সলাত!! বলে সালাতের গুরুত্ন বুঝিয়েছেন।
➡ এভাবে একজন মুসাফির যেমন দূরবর্তী সফরে বের হওয়ার আগে সবার নিকট বিদায় নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নেয়। ঠিক তদ্রূপ হায়াতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উনার পরদা করার আগেই বিদায় যাত্রার প্রস্তুতি দেখে সম্মানীত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আজমাইনরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, রাসুলেপাক সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোধ হয় আমাদের মাঝে আর বেশিদিন থাকবেন না।
👉আসুন এবারের আখেরি চাহার সোম্বা হতে শপথ নিয়ে আমার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখিয়ে দেয়া পথে নিজেকে পরিচালনা করে খাটি উম্মত হওয়ার লক্ষে উনার প্রতিটি সুন্নাহ বা আদর্শকে আকড়ে ধরি ও সে অনুপাতে আমলকরে নিজের মূল্যবান জীবনকে গড়ে তুলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন।—আমিন।