বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন: ঝুঁকিতে ঝিলংজার চাঁন্দের পাড়া রাবার ড্যাম

আপডেট:

এম এ সাত্তার, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার সদর ঝিলংজা চাঁন্দেরপাড়ার উত্তর পূর্বে বাঁকখালী নদীতে স্থাপিত রাবার ড্যামটি অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত ২/১ বছর ধরে বাঁকখালী নদীর গভীরতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এরই অংশ হিসেবে রাবার ড্যামের উভয় পাশ থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে নিয়মবহির্ভুতভাবে একটি চক্র কৌশলে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বেচাবিক্রি করে এরইমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

এই অবস্থায় এলাকার সচেতন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রাবার ড্যামটি আশেপাশের স্থান থেকে শক্তিশালী মেশিন দিয়ে মাটি বালি সরিয়ে নেওয়ার কারণে রাবার ড্যামটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ড্যামের উভয় পাশে নদী প্রায় ৪/৫ ফুট নিচু আবার রাবার ড্যামের স্থানটি উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণে পানি চলাচলে প্রবল বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে এলাকাবাসী এ বিষয়ে বিভিন্ন শংকা প্রকাশ করছে। কেউ কেউ সামনে বর্ষায় রাবার ড্যামটি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছে। এব্যাপারে স্থানীয়দের মন্তব্যকে হালকা করে দেখার সুযোগ নাই বলেছে নীতিনির্ধারকেরা।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের সাথে তিনি বলেন, অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে রাবার ড্যামের পাশ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মাটি-বালি উত্তোলন করায় নীচের মাটি হালকা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। যার কারণে কারণে ড্যামটি ক্ষতির সম্ভাবনা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই রাবার ড্যামটির কিছু একটা হয়ে গেলে রাবার ড্যাম নির্ভর মানুষের জীবন নির্বাহ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। যার প্রভাব এলাকার অসহায় সাধারণ মানুষের উপর পড়বে বৈকি। আশংকা দুর করতে রাবার ড্যামের সঠিক আছে কীনা পরিচর্যা করা দরকার বলে মনে করেন।
এই বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন মোহনা থেকে পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েক লাখ মানুষ। প্রতি মৌসুমে এখানকার চাষিরা জোগান দেন কোটি টাকার বেশি শীতকালীন সবজি ও খাদ্যশস্য। নদীর পাশে আছে শতকোটি টাকার চিংড়ি ও মৎস্য খামার।

একটা সময় বাঁকখালী চাষিদের কাছে আশীর্বাদ হলেও এখন ভর করছে আতঙ্ক। কারণ, নদীতে যত্রতত্র মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এতে নদীর দুই তীরের প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে বসতি। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ওপর তৈরি সেতু ও রাবার ড্যাম ঝুঁকিতে পড়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করে যোগাযোগ স্থাপনা রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনকে তাগাদা দিয়ে আসলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বর্তমানে এডহক কমিটি নির্ভর হয়ে পড়ছে কয়েক হাজার চাষীদের সংগঠন রাবার ড্যামের কার্যক্রম। একবার নয় দুইবার নয় এই পর্যন্ত চার, চার বার এডহক কমিটি শাসন করছে প্রতিষ্ঠানটি। গুরুত্বপূর্ণ অতি লাভবান প্রতিষ্ঠানটি শনির দশা কেটে উঠতে না পেরে কিছুতেই আলোর মুখ দেখছে না।

১৯৯২ সালে বাকঁখালী নদীর উপর নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় শুস্ক মওসুমে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষাবাদের জন্য রাবার ড্যামটি স্থাপন করা হয়। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডি ড্যামটি রক্ষনাবেক্ষণ ও পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। ড্যামটি স্থাপন হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার ৬ ইউনিয়নের কৃষকরা শুষ্ক মওসুমে রাবার ড্যামের পানির সাহায্যে চাষাবাদ করে আসছে। দুই উপজেলায় প্রায় ৯০ টির মত সেচ স্কীম বাকঁখালী নদীতে বসিয়ে সরকারি সেচ কর দিয়ে কৃষকরা চাষাবাদ করে আসছে প্রায় ২৫ বছর।

অন্যদিকে কৃষকদের স্বার্থে পানি ব্যবস্থাপনার জন্য কৃষকদের নিয়ে বাকঁখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় গঠন করে সমিতির মাধ্যমে ড্যামটি পরিচালিত হলেও বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি দিয়ে চলছে ড্যামটি। ফলে সদস্যদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে অধিকাংশ সদস্যরা এ সমিতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছেই।

একটি সূত্র জানায় বার বার এডহক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে বাকঁখালী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি।
ড্যামটি পরিচালনার জন্য সরাসরি একটি নির্বাচিত কমিটি পানি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করলেও ২০১০ সালের ১৬ জানুয়ারি এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযাযি একটি কমিটি করার কথা থাকলেও এডহক কমিটি দিয়ে অদ্যাবধি আর নির্বাচন না দিয়ে চালানো হচ্ছে উক্ত রাবার ড্যাম।

এদিকে এক এক করে ৪ বার এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও গত বছর অক্টোবর পুনরায় এডহক কমিটি করা হয় ড্যাম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ।

এদিকে পানি ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রামু উপজেলার চাকমারকুলের গুইল্লাছড়ি গুদা এবং সদরের পিএমখালীর মুহসিনিয়াপাড়ার মন্তারগুদার গেইট দিয়ে পানি চলে যাওয়ার কারনে বাঁকখালীতে পানি কমে যাচ্ছে। এডহক কমিটির অবহেলার কারনে কৃষকদের প্রাণখ্যাত রাবারড্যামটির পানি যথাসময়ে পাওয়া যায়না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে স্কীম ম্যানেজার ,৩ হাজার কৃষক, সংশ্লিষ্ট সকলের দাবি দেশের প্রথম স্থাপিত রাবার ড্যামটি জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেন অবদান রাখে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন,কে বা কারা বালি উত্তোলন করছে খোঁজ নিবেন এবং এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত