এম.এ. সাত্তার:
কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পিএমখালী (পাতলীমাছুয়াখালী)। শতাব্দি পেরিয়ে প্রবাহমান নদী বাঁকখালীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ বিহীন জনগণের একটি বসতিস্থল। পিএমখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ছনখোলা জনবহুল এলাকায় বড় সড়ক ও আবার একটি। এ মাটির রাস্তাটি শোভা পাচ্ছে সংযোগ সড়ক (ছনখোলা বাজার হইতে খুরুস্কুল কুলিয়াপাড়া হয়ে কক্সবাজার) নামে। প্রায় ১০ বছর আগে পিএমখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাষ্টার আবদুর রহিম এর প্রচেষ্টায় কয়েকটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্তে ছনখোলা বাজার থেকে খুরুস্কুল ইউনিয়নের কুলিয়া পাড়ার পিচ রাস্তার মাথা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তাটি নির্মাণ করেন। এরপর প্রায় হয়ে গেলো এক দশকের কাছাকাছি কিন্তু রাস্তাটি সেই আগের মতই রয়ে গেলো।
সরেজমিন দেখা যায়, এই এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা একমাত্র এই রাস্তাটিই ব্যবহার করেন যোগাযোগের সুবিধার্থে সময় বাঁচানোর জন্য। আর রাস্তাটি মাটি বালির তৈরী জরাজীর্ণ, ধুলায় ধুসরিত রাস্তা ফলে পথ ব্যবহারে পথচারীরা অতিষ্ঠ। ছনখোলা ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ ও স্থানীয় সদ্য বিদেশ ফেরত আলহাজ মোস্তাক আহাম্মদসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা এ রাস্তার ব্যাপারে স্থানীয় এমপি মহোদয় বরাবর শুরু থেকেই জোরালো আবেদন করে আসছি। আর সদ্য নব নির্বাচিত বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুলহক জুয়েলকে নির্বাচন পরবর্তী সম্বর্ধনা অনুষ্টানে মৌখিকভাবে জানানো হলে উক্ত প্রিয় নেতা শপথ গ্রহনের পর রাস্তাটি অগ্রাধিকার ভিক্তিতে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। আর পরবর্তী উপজেলা নেতারা আজ ৭/৮ বছর যাবত বলতেছে টেন্ডার হল, কাজ হচ্ছে, ফাইল প্রক্রিয়াধীন আছে। কিন্তু আমরা এ আশায় থাকলেও এখনো সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার ও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) বরাবরই দুই কিলোমিটার এ সড়কটির প্রতি অবিচার করে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ বিগত একযুগ ধরেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নুন্যতম উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায়নি উক্ত সংযোগ দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে। যে কারনে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহন ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ সইবার সীমা হারিয়ে ফেলেছে। তাই বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে অনুধাবন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তৎসংশ্লিষ্টদেরপ্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। যদিও এ সড়কটির শহরের সাথে সংযুক্ত অংশ।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের আন্তরিকতায় বর্তমান সরকারের আমলে পিএমখালী এলাকা অনেকটা চলাচলের উপযোগী করেছেন বলে স্বীকার করেন স্থানীয় অনেকে। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৮/২০১৯ অর্থ বছরে উপজেলা উন্নয়ন তহবিল (রাজস্ব) এডিপি, এলজিএসপি৩, ওয়ান পার্চেন্ট এর আওতায় এ ইউনিয়নে কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে আর হচ্ছে। অতিদ্রুত এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পাশাপাশি ছনখোলা সংযোগ সড়কের দুই কিলোমিটার সড়ক যদি সংস্কার করা হয় তবে আগামী ১০ বছরেও এ সড়কে হাত দিতে হবেনা বলে আশা করেন স্থানীয়রা।
সুত্রমতে, পিএমখালী ইউনিয়নসহ পাশ্বর্বর্তী অন্য ইউনিয়নের মানুষের ছনখোলার সংযোগ সড়কটি বিকল্প হিসেবে বেশ দরকার রয়েছে। খুরুস্কুল ইউনিয়নের একাংশসহ পিএমখালীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস ওখানে। এ এলাকায় অনেক উচ্চবিত্ত পরিবার থাকলেও তারা সময়ে অসময়ে শহরে বসবাস করছে। আর এখন এ এলাকায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া সাধারণ পরিবারগুলো বসবাস করে আসলেও যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ন এ সড়কটিতে নুন্যতম উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এক সময় মাটি ভরাট করে ইট আর বালু দিয়ে সড়কটির উন্নয়ন করেছিলেন। ওই উন্নয়নই শেষ উন্নয়ন।
এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সড়কটির উন্নয়নে জানপ্রাণ দিলেও এখনও পর্যন্ত বড় নেতাদের সু’নজর ও সড়ক উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে প্রতি বর্ষামৌসুমে এ পথ দিয়ে সর্বসাধারনের চলাচলের উপায় থাকেনা। সড়কটির বিভিন্ন অংশে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত হয়ে যানচলাচল করতে পারেনা। এসব গর্তের কারণে যানবাহন চালকদের বোঝার উপায় থাকেনা, যে কারনে প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ছোটখাট যানবাহনগুলো। আর এসব দুর্ঘটনার কারনে যাত্রীরা আহত হয়ে এলাকায় পঙ্গুত্বের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। তাছাড়া বর্ষাকালে সড়কটির পুরো অংশ জুড়ে গর্ত, পানি আর কাঁদা মাটি থাকায় এ পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোন উপায় থাকেনা।
এলাকাবাসীরা জানান, গ্রামের মানুষ কক্সবাজার শহরসহ অন্য এলাকায় যাওয়া আশা করতে সহজ পথ হিসেবে এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু স্থানীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কোন তদবির করার লোক না থাকায় দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত রাস্তাটির জন্য মোটা অংকের বরাদ্ধ আসেনি। সরকারি অনুদান ২/১ লাখ টাকা এলেও তা দিয়ে এ রাস্তার গর্ত ভরাটের কাজও শেষ করা যায় না।
রাস্তার প্রয়োজন অনুসারে অনুদানের টাকা অপ্রতুল হওয়ায় তা দিয়ে (নুন আনতে গিয়ে পান্থা ফুরায়মত) রাস্তা সংস্কার করে অচল রাস্তাকে কিছু দিন সচল করা হয়। এরপর কদিন ব্যবহারে এ কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গেচুরে পূর্বের চেহারায় ফুটে উঠে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।সকালে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় এই সড়ক পথে। এসময় ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে ইকরা হোসেন (১৩) ও রোকেয়া বেগম (১২) নামে দুজন ছাত্র-ছাত্রী। এসব রাস্তায় দীর্ঘদিন যাবৎ কোন সংস্কার কিংবা নির্মানের কাজ করা হয়নি বলেও জানান তারা। আলাপকালে পিএমখালীর ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার আবদুর রহিম জানান ইউপি পরিষদে দুই লাখ টাকার উপরে বাজেট বরাদ্ধ হইনা। কোটি টাকার প্রকল্প হওয়ার কারণে আমাদের আয়ত্তের বাইরে। তাই এ রোডের ব্যাপারে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। শীঘ্রই এ রোডের বাজেট বরাদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।