শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে নানামুখী বিপর্যয়, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা!

চট্টগ্রাম ট্রিবিউন ডেস্ক,
করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে মফস্বল ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও ইন্টারনেট অপ্রতুলতার কারণে অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ গ্রামের শিক্ষার্থীরা।

শহুরে শিক্ষার্থীদের বাবা-মা কিছুটা সচেতন ও সুযোগ-সুবিধা ভালো থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত রাখলেও গ্রামাঞ্চলে পড়াশোনার বাইরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।

বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে। যাদের বেশিরভাগই মফস্বল ও দরিদ্র শিক্ষার্থী।গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিন আরও দীর্ঘ হলে মাধ্যমিকের প্রায় ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ নারী শিক্ষার্থীরা। কারণ করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে গ্রামাঞ্চলে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বাল্যবিয়ে।

শুধু তাই নয়,পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশুশ্রম। পরিবারে আর্থিক সংকটের ফলে অনেক শিক্ষার্থীকেই বেছে নিতে হচ্ছে আয়-রোজগারের পথ। পড়াশোনার বাইরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখন চরম হতাশা ও মানসিক বিপর্যয়ের মুখে।

গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষার্থীর বাসায় পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নাই। সেইসাথে পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ না থাকায় কেউ কেউ পড়াশোনার হাল ছেড়ে দিচ্ছে।এছাড়া অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সহ নানান সমস্যার ফলে সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও প্রাত্যহিক জীবনের উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।এমতাবস্থায় গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে চরম শঙ্কা।

এ ব্যপারে একাধিক শহুরে স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চারা পড়াশোনা করতে চায় না। শহরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও পড়াশোনা বিমুখ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।গ্রামাঞ্চলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ তাই কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন ও ঝড়ে পড়া রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

এমনিতেই শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা নানান ক্ষেত্রে পিছিয়ে। করোনার প্রকোপে গ্রামীণ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা আরো বেড়েছে।বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষায় একধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার নতুন ভেন্নাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো.বেলাল হোসেন জানান, গ্রামের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পিছিয়ে, তার উপর দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ,পড়াশোনা ও পরীক্ষার চাপ না থাকায় পড়াশোনা বিমুখ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্কুল নির্ভর, তাই স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভেতর রাখা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর খুললে শিক্ষার্থীদের কীভাবে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করা যাবে সে নিয়ে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ( চবি) ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মুসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সময় কখনো আসবে না। যেহেতু এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি তাই এটি আজ- কালের মধ্যে চলে যাবে ব্যপারটি এমন না।এটিকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে এমন চিন্তায় যদি আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারি তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন নয়?

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেও সুরক্ষা ব্যপারটা তো আর থাকছে না। যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না তারা কি আর বের হচ্ছেনা?স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খোলা রাখা হয়েছে এবং আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করছি। একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি যেন সবাই মানে সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা উচিত। আমি মনে করি এ প্রজন্মকে ধরে রাখতে হলে ও শিক্ষার গতিপথ ফিরিয়ে আনতে সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here