“মিয়ানমারকে রোহিংগাদের ফিরিয়ে নিতে হবে”
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
রোহিংগারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী। সুদীর্ঘ সময় ধরে তারা মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিংগাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে আসছে। তাদের সেই মানসিকতার চরম বলি হয়েছে রোহিংগা মুসলমানরা। বিভিন্নভাবে নৃশংস নির্যাতনের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ও সেদেশের সেনাবাহিনী তাদের উপর স্টীম রোলার চালায় যে কারণে প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিংগা মুসলমান টেকনাফসহ সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে।বাংলাদেশের এক বিশাল এলাকাজুড়ে তারা দিনযাপন করছে।এখানে দীর্ঘদিন থাকার কারণে রোহিংগারা বিভিন্ন অপরাধের সাথেও নিজেদের জড়াচ্ছে।হয়ে উঠছে বেপরোয়া।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তাদেরকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য কয়েকবার চেষ্টা হলেও প্রাণভয়ে তারা সেখানে যেতে চাচ্ছেনা।গতকালও (২৫ আগন্ট) তারা ক্যাম্পে সমাবেশ করে নাগরিকত্ব ছাড়া না ফেরার কথা পুণর্ব্যক্ত করেছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার
সরকার তাদের নাগরিক রোহিংগাদের সেদেশে ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছিল যা কার্যকর করেনি।চুক্তির কথা বললেও রোহিংগা মুসলমানরা তাদের ভিটেমাটি ফেরত ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে আশান্বিত হতে পারেনি। তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কথা ভুলতে পারছে না। হাজার বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিংগাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করার কোন সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক নেতারা রোহিংগা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেও আশার কোন বাণী শোনাতে পারেননি।নির্যাতনের মুখে, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিংগাকে সেদেশে অবশ্যই ফেরত নিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।বাংলাদেশ সহ অন্য যে সব দেশে রোহিংগারা পালিয়ে গেছে সেসব স্থান থেকে মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে।দ্রুততার সাথে সেদেশে ফিরিয়ে নিয়ে রোহিংগদের হারানো ভিটেমাটিতে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। লুট করা সব সম্পদ ফেরত দিতে হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ তাদের জীবন জীবিকার গ্যারান্টি দিতে হবে।
বিশ্ব সম্প্রদায় দেখেছে বাংলাদেশ কীভাবে মজলুম রোহিংগা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। লাখ লাখ রোহিংগাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল সংস্থা ও দেশের মানুষ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।
বাংলদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের জনসংখ্যা এমনিতেই অনেক। তার উপর রোহিংগাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে বাড়তি বড় ধরনের চাপ সামলাতে হচ্ছে সরকারকে।ক্ষুদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে সবল নয় এমন একটি দেশ কীভাবে এই চাপ সামলাচ্ছে তা বলা মুশকিল। এ জন্য যেভাবেই হোক সব রোহিংগাকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি প্রয়োজনে কঠোর ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মিয়ানমারকে
বাধ্য করতে হবে তাদের নাগরিকদের সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নিতে।বাংলাদেশ কতদিন লাখ লাখ রোহিংগার ভার সহ্য করবে? সরকার এবং এদেশের মানুষের তো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।রয়েছে নানা সমস্যা। তার উপর এটি সত্যিই বোঝার মতো!আমরা রোহিংগাদের আশ্রয় দিয়েছি,সাহায্য করছি।
আমাদের আতিথেয়তায় তারা মুগ্ধ। এখানে তাদের কোন ভয় নেই। এ ধরনের একটি ভয়হীন, নিরাপদ পরিবেশ মায়ানমার সরকারকে তৈরী করতে হবে।রোহিংগাদের ফিরিয়ে নিয়ে উপযুক্ত পুনর্বাসন ও তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিংগাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।বাংলাদেশ সরকারকেও বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিংগাদের মিয়ানমারে কীভাবে ফেরত নেওয়া যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। পৃথিবীর একমাত্র অধিকারহীন জাতি রোহিংগা মুসলমানরা নিজভূমি মায়ানমারে ফিরে যাক – এই প্রত্যাশা রইল।
★লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।