বাবা নেই, এ যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা!

মুহাম্মদ সাইফুল হাকিম:
এক জোড়া স্যান্ডেল কিনতে খুব ইচ্ছে করছে। বেশ কয়েক বছর যাবত রমজানের এই সময়ে খুব ইচ্ছে করে এক জোড়া স্যান্ডেল কিনব। আমার জন্য নয়, বাবার জন্য। কিন্তু সেই ২০১৪ ইং থেকে বাবার জন্য এক জোড়া স্যান্ডেল আর কিনা হলো না। বাবা ছাড়া এতোগুলো দিন, মাস, বছর কাটানো মোটেইও সহজ ছিল না। খুব মিস করি বাবা তোমাকে।

বাবা তুমি ২০ রমজানের পর সবাইকে ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা ভাগ করে দিতে। প্রতিবার আমি সবার চেয়ে ভাগে একটু বেশি পেতাম। ছোট ছেলে বলেই হয়তো আমাকে একটু বেশি ভালোবাসতে। কেন এতো ভালোবাসতে ? ভালোবাসার সেই প্রতিদান দেয়ার একটু সুযোগও দিলে না।

প্রতি ঈদে আমার কেনাকাটায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল মা’র জন্য শাড়ি, আর বাবার জন্য এক জোড়া স্যান্ডেল। বাসায় আনার পর মা স্যান্ডেল জোড়া বাবাতে দেখাতো। সাইফুল তোমার জন্য এক জোড়া স্যান্ডেল এনেছে। এরপর বাবা কতো কি যে বলতেন। খালেদার মা (খালেদা আমার বড় বোন) দেখ তোমার ছেলে কতো টাকা দিয়ে স্যান্ডেল কিনেছে। কি দরকার ছিল এতো দাম দিয়ে স্যান্ডেল কিনার। এতো টাকা দিয়ে আমি ৩ জোড়া স্যান্ডেল পেতাম। আড়াল থেকে বাবার কথা শুনে মনে খুব সুখ সুখ অনুভব করতাম। কারণ আমি বুঝতে পারতাম স্যান্ডেল জোড়া বাবার পছন্দ হয়েছে। বাবা তুমি নেই আজ অনেক বছর হলো। তোমার ওই আনন্দিত মুহুর্তের কথাগুলো আর শুনিনা। আর আগ্রহ নিয়ে তোমার জন্য স্যান্ডেলও কেনা হয় না। রমজান আসলেই তোমার কথা বেশী মনে পড়ে। তখন শুন্যবুক হাহাকার করে উঠে।

সেই কতোদিন হয়ে গেলে বাবা দেখি না। স্পর্শ করতে পারি না। তোমার ভালোবাসা পাই না। শাসন করো না। প্রতিটি মুহুর্ত তোমাকে খুব মিস করছি। ওপারে নিশ্চয় ভালো আছে। ভালো থেকো বাবা।

বাবা তুমি সবসময় এমন কেন ছিলে। তোমার চলে যাওয়ার দিন মন খুলে একটু কান্নাও করতে দিলে না। মৃত্যুর আগে তুমি সবাইকে কান্নায় বাঁধ সেধেছিলে। তারজন্য সারা জীবন বোবা কান্না করে যাচ্ছি। বাবা বিশ্বাস করো, তোমাকে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি। বাবা তুমি ছিলে আমার ভালোবাসার সবকিছু। আমার সংগ্রাম, পথচলা, জীবনে অনেক বড় হতে চাওয়া সবকিছুর মূলেই ছিলে বাবা তুমি। শুধু তুমি। আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাদের মাঝে বেঁচে আছো, তোমার কর্ম ও ভালোবাসায়। তুমি হারিয়ে যেতে পারো না। যদি আর একটি বার তোমাকে বাবা বলে ডাকার সুযোগ পেতাম। বাবা!

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই (১৭ রমজান) বাবা ও মা ওমরাহ পালন শেষে বিমানে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here