বাংলাবাজার টু ককসবাজার রুটে সিএনজি চালকদের নৈরাজ্য

এম এ সাত্তার, কক্সবাজারঃ
এই রুটে (বাংলাবাজার টু কক্সবাজার) গাড়ি ‘সিএনজি’ চালালে দুই/তিন মাসের মাথায় সব যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর কোন স্ক্রাব বিক্রেতাও এই গাড়ি ক্রয় করবে না। রাস্তা খুবই ভাঙ্গাচুরা , গাড়ি চালাতে গেলে অসহ্য লাগে,

এই রুটে গাড়ি চালায়ে আমাদের আর ভাত খাইয়া বাঁচতে হবেনা। অন্যদিকে জ্যামের ঠ্যালায় গাড়ি ভাড়া উঠাইতেই দিন শ্যাষ হয়ে যায়। আগের ভাড়ার কথা ভুইল্যা যান। সিএনজি অটোরিকশাচালক নুরুল কাদের অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন বাংলা বাজার কাজী অফিস এর বিপরীতে সিএনজি স্টেশনে কক্সবাজার আসার অপেক্ষারত কয়েকজন যাত্রীকে। এই রাস্তায় চলাচলরত সিএনজিচালকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা বলে নুরুল কাদেরের মতো একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে অনেকের কাছে।

এখন কক্সবাজারে চালকদের ইচ্ছে অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশা চলছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ড্রাইভার এই রোডে গণযাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও অধিকাংশ চালক রিজার্ভ ভাড়া যাওয়ার বাহানা দিয়ে মোটা অংকের ভাড়া হাঁকিয়ে বসে থাকেন। এই অবস্থায় জরুরী যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এসব সিএনজি গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই রোডে অবৈধ চালকদের যাত্রী হয়রানি করা তাদের একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নেওয়া তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে লাইনম্যান আবদুস শুক্কুরের সাথে কথা বললে সে জানান, বাংলা বাজার থেকে কক্সবাজার ভাড়া ২০ টাকা। এর বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।একটি নির্বাচিত সমিটির নেতাদের কথা অমান্য করে বিভিন্ন অজুহাতে চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। এসব তাদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি সমিতির নেতাদের নির্দেশনা মতে পার্কিংয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী একেকটি সিএনজিতে যাত্রী উঠিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।

গণপরিবহনের অন্যতম এই বাহনের নৈরাজ্য এখন চরমে। কিন্তু এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই। পুলিশ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় রয়েছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষও চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধিরের ভূমিকায় রয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো সিএনজিচালকই এখন নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেন না। কোথাও যেতে চাইলে সরাসরি ইচ্ছে অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসে থাকেন।

চালকদের সাফ জবাব ‘সিএনজি এখন আর নির্ধারিত ভাড়ায় চলবে না।’ রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সামনেই সিএনজি চালকরা এই নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ পুলিশ এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে দিন যত যাচ্ছে, অটোরিকশা যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে সব সময় মুখিয়ে থাকেন।

প্রাইভেট অটোরিকশাগুলোও বাণিজ্যিক অটোরিকশার মতো একইভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন। গণপরিবহনে সংকট দেখা দিলে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। অর্থাৎ যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশার কাছে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার কোর্টে বাড়ি থেকে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী জানান, তাকে প্রতিদিন সকালে কক্সবাজার কোর্টে আসা যাওয়া করতে হয়। দ্রুত যাতায়াতের জন্য তিনি সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করেন। কিন্তু প্রতিদিন সিএনজি চালকদের নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। যার কারণে কোন দিন ঠিক মতো কোর্টে যেতে পারেন না। ন্যায্য ভাড়া দিলে এ রুটে চলাচল কারি চালকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পিএমখালীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্সবাজার থেকে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে শিক্ষকতা করেন একশিক্ষক। তিনি বলেন হাতেগোনা টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। রাস্তার মধ্যে যে কোন গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হলে তাহাকে চা-পানি না খেয়ে থাকতে হয়। না বলে, পুর্ব কোন ঘোষণা ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রকাশ্য অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্চে সিএনজি চালকেরা অথচ তা সবাই দেখেও কেউ কিছু বলছে না। এ ব্যাপারে কারো কোন জবাবদিহি নেই। ভাড়ার এই নৈরাজ্য নিয়ে বেশ কয়েকবার রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন। কিন্তু সার্জেন্ট কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রাস্তায় সিএনজি অটোরকিশার অনিয়মের ব্যাপারে বাজার ঘাটায় কর্মরত এক ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যাত্রীরা অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। অনেক সময় চালকরাও যুক্তিসংগত কারণ দেখায়। তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।

সিএনজি চালক শহীদ জানান, একবার সিএনজি নিয়ে বের হতে গ্যাস ও নিজের খাওয়াসহ অনেক টাকা খরচ আছে। এরপর আবার বিভিন্ন ষ্টেশনে ষ্টেশনে নানান বাহানায় পুলিশ টাকা চাইলে তাও দিতে হয়। একশ টাকার এক খ্যাপ মারতে যানজটের কারণে রাস্তায় ২/১ ঘণ্টাও বসে থাকতে হয়।এই খরচ উঠিয়ে তারপরে পরিবার চালানোর খরচ তুলতে হবে। কিন্তু যানজটের কারণে দিনের খরচ উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়। তাই আমাদের বাড়তি চাহিদা থাকে একটু বেশি।

যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন বাংলা বাজার কাজী অফিস এর বিপরীতে সিএনজি ষ্টেশনে গিয়ে দেখা যায়,পরপর ৫/৬ টি সিএনজি গাড়ি জড়ো করা রয়েছে। অসংখ্য যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। আবার কোনো কোনো যাত্রী গাড়িতে উঠার জন্য গাড়ির পাশে যেতেই পিছনে চলে আসছেন। দাঁড়ানো গাড়ি গুলোতে কোন পেসেঞ্জার উঠছে না।এর রহস্য উন্মোচন করতে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক চালককে কক্সবাজার যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করার আগে সে আগেভাগে বলে দিলেন ভাড়া ৩০ টাকা। ২০ টাকার স্থলে হঠাৎ ৩০ টাকা চাওয়ার ব্যাপারে জানান রাস্তা ভাঙ্গাচুরা, তাছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থাকতে হয়। তাই জন প্রতি ২০ টাকা আমাদের পোষায় না। তাই আমরা যাত্রীদেরকে আগে বলে দিয়ে জন প্রতি ৩০ টাকা, রিজার্ভ হলে যাত্রীদের সাথে দরদাম করে নিতেছি।

বাংলা বাজার সিএনজি সমিতির সভাপতি আনছারুল হক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে তিনি প্রতিদিন একাধিক চালককে সতর্ক করে আসছেন। কেহ তার আদেশ-নিষেধ মেনে ন্যায্য ভাড়ায় সিএনজি চালাচ্ছেন। আর কেহ তার কথার কোনো কর্ণপাত না করে যাত্রীদেরকে হয়রানির মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। বিশেষ করে মালিক সমিতির সাথে জড়িত চালকেরা যাত্রীদেরকে বেশি হয়রানি করছে বলে গুরুতর অভিযোগ করেন সে। যার কারণে সমিতির মারাত্মক বদনাম হচ্ছে। তাই তিনি এ বিষয়ে সমিতির উপদেষ্টা দেলোয়ার সহ জিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ‘টিপু’ কে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ সহ সমিতির নেতাদের কমান্ড অমান্যকারী চালকদের ব্যাপারে জরুরি বৈঠক করে ব্যবস্থা নিবেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের এক সদস্য বলেন, সিএনজি অটোরিকশা অন্যতম গণপরিবহনের ভূমিকা পালন করে। অনেক দিন থেকেই অটোরিকশার নৈরাজ্য চলছে। কিন্তু পুলিশের ভুমিকা দুর্বল হওয়ার কারণে নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না।বিআরটিএর তৎপরতা নেই বললেই চলে। সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্য দূর করতে হলে পুলিশ ও বিআরটিএকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here