সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫

বাঁশখালীতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত

আপডেট:

মুহাম্মদ দিদার হোসাইন,
বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আওয়ামীলীগের উদ্যোগে জাতির বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন উদযাপিত।

বিজ্ঞাপন

১০ জানুয়ারি ২১ ইং-রোজ(রবিবার) বিকেলে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ মাঠে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালীব সাদলী,বাঁশখালী পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মুহাম্মদ শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী,  পৌর কাউন্সিলর মুহাম্মদ আজগর হোসেন, রোজিয়া সোলতানা রুজি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নাঈম উদ্দিন মাহফুজ, ওলামালীগের নেতা, মাওলানা আকতার হোছাইন, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন চৌধুরী খোকা, সরল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ চৌধুরী, শেখেরখীল ইউনিয়ান পরিষদের চেয়ারম্যান, মুহাম্মদ ইয়াছিন, শীলকুপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজা ম্মেল হক শিকদার, ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, পৌর আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকট তোফাইল বিন হোসাইন, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আনছুর আলীসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওলামালীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও মহিলা আওয়ামীলীগ ও বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অতিথিরা বলেন, ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন বন্দী শালা  থেকে আজকের এই দিনে(১০ জানুয়ারি) মুক্তি লাভ করে তাঁর দীর্ঘ ত্যাগের ফসল স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

এদেশের স্বাধীনকামী আপমর জনতা জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সেই বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ ফিরে আসার এইদিন স্বাধীন বাংলার আকাশে- বাতাসে স্বাধীনতার সুফল সূর্যোদয়ের মতো   উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।

স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগাফ্লুত হয়েছিলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নেমেছিল তাঁর দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে ‘’জয় বাংলা,, ”জয় বঙ্গবন্ধু’’ স্লোগানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল পুরো বাংলার আকাশ-বাতাস।

জননন্দিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক হৃৃৃদয়স্পর্শী বক্তব্যে বলেন, আমর প্রাণের স্বাধীন বাংলা মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, এদেশের মানুষকে আমি এত ভালোবাসি,  জাতিকে  ভালোবাসা সত্যেও আমি জানতাম না যে পাকিস্তানী অন্ধকার কারাগার থেকে বাংলায়  পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মা-বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বপ্ন, এদেশের মানুষ আজ স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।এ দেশের জন্যে আমি জীবন উৎসর্গ করতে পারি।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সদ্যস্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। তার এই প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে’। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাঙালির ইতিহাসের বরপুত্র শেখ মুজিবুর রহমান। সেই থেকে প্রতি বছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানান আয়োজনে পালন করে থাকেন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কয়েক সপ্তাহ পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে লাখো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সেদিনকার সে ঘটনাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিশ্বের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে সম্প্রচার করে। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করার দৃশ্যটিকে এনবিসি টেলিভিশনের ভাষ্যকার ‘আজ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো, হিসেবে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশের জর্জ ওয়াশিংটন’হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং জনগণের এই স্বাগত জানানোর ঘটনাটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আবেগঘন ঘটনা’হিসেবে অভিহিত করা হয়। একই সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর যে টাস্কফোর্স পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সমর্থনে বঙ্গোপসাগরে এসেছিল, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের ঠিক ওই মুহূর্তে সেই মার্কিন নৌবাহিনীর টাস্কফোর্সের বঙ্গোপসাগর ত্যাগের খবরটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অন্য একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেল এবিসি টিভি একই দিনে সম্প্রচার করে, শেখের বিমানটি ঢাকায় অবতরণের আগে আকাশ থেকেই তিনি তাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ আনুমানিক ১০ লাখ লোককে দেখতে পান।অসংখ্য উল্লসিত মানুষ বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে তার দিকে ছুটে যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত