মুহাম্মদ দিদার হোসাইন,
বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের টমেটো চাষে লাভের মূখ দেখার আগেই চাষিদের কপালে হাত।
উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের গণ্ডামারা, বড়ঘোনা,সরল ও শীলকূপ সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেলো টমেটো চাষিদের করুন পরিস্থিতির দৃশ্য।
গেলো কয়েক বছর ধরে টমেটো চাষে মোটামুটি ফলন হওয়াতে এবছরও জীবনের সব উপার্জন ঢেলে দিয়ে আগাম টমেটো চাষে উপড়ে পড়েছিলো উপকূলীয় ক্ষেইত্যালারা।
অধিক লাভের আশায় বর্ষার মৌসুমে রাত-দিন বিরতিহীন ভাবে পরিশ্রম করে টমেটো চাষে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিলো চাষিরা।লাভের আশায় ক্ষেতে লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেননি তাঁরা। কিন্তু লাভের মূখ দেখার আগেই বিভিন্ন মরণ রোগে যেন কেঁড়ে নিলো সব আশা।নিজস্ব জমি না থাকায় কানি প্রতি বাৎসরিক পনের থেকে বিশ হাজার টাকা করে লাগিয়ত হিসেবে টাকার বিনিময়ে জমি মালিকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে টমেটো চাষে নেমেছে অনেক চাষি পরিবারের সদস্যরা।তাছাড়া ভালো ফলনযোগ্য অধিক মূল্যের বীজ সংগ্রহ করতে ছোটাছুটির দৃশ্যটা ছিলো চোখের মতো।বর্ষার মৌসুমে অতিবৃষ্টির দিনে ক্ষেত-খোলা সুরক্ষিত রাখতে নির্ঘুম রাত কাটানোর সময়ও পার করেছে তাঁরা।
পরিদর্শনকালে গণ্ডামারা,বড়ঘোনা,
সরল,শীলকূপ সহ বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের।এসময় গণ্ডামারা এলাকার নুর মুহাম্মদ(মৌদু),আমির হোসাইন,ইউনূস,নুরুল কবির,মোহাম্মদ করিম, ইলিয়াস,জসিম উদ্দিন, মোজাম্মেল, শরীফুল্লাহ,আবুল কালাম,আব্দুর রহিম,ইলিয়াস, শফিকুল আলম,বজলুল হক,আজিজ, মোহছেন ,সরল এলাকা মোহাম্মদ লেদু, হারুন,ছৈয়দ নুর, নুরুল হক,মোহাম্মদ আমিন ও বড়ঘোনা এলাকার ওবায়দুর রহমান,বাদশা মিয়া,সুলতান আহমদ সহ আরো অনেক ক্ষেইত্যালেদের সাথে সাক্ষাৎ কালে তাঁরা বলেন,আমরা জীবনের সব উপার্জন ঢেলে দিয়ে অধিক লাভের আশায় রাত-দিন কষ্ট করে টমেটো চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি।চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভালো বীজ সংগ্রহ করে এনেছি শুধু তা নয় বর্ষার মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে ক্ষেত সংরক্ষণের জন্যে নির্ঘুম রাত কাটানোর সময়ও কম নয়।
তাছাড়া হাজার হাজার টাকার অধিক মূল্যের কীটনাশক ঔষধও ব্যবহার করেছি।বড় আশা করেছিলাম অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর টমেটো চাষে ভালো বাম্পার ফলনের।কিন্তু সব আশাই যেন দিনদিন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।বিভিন্ন কোম্পানি গুলোর কীটনাশক জাতীয় হাজার হাজার টাকার ঔষধ ব্যবহার করেও লাল বেয়ারাম ও পঁচা বেয়ারামের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা ক্ষেত-খোলা।
মনে হয় নামি দামি কোম্পানি গুলোর কীটনাশক ঔষধেও নেই কোন গুণাগুণ।নামে বড় কোম্পানি কিন্তু কামে জিরো।
নিজের তেমন পুজি না থাকায় অনেকে স্থানীয় বৃত্তশালীদের কাছ থেকে ধার কর্জসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েও টমেটো চাষে নেমেছে অনেক চাষি পরিবার।কিন্তু ফলন না হলে তাঁরা ওই সব ঋণের বোঝা শুধ করার উপায় কি?তা নিয়েও চিন্তিত অনেক চাষি পরিবার।হতাশার অন্ত নেই চাষিদের।লাভ গুনে কপালে হাত এমন করুন পরিস্থিতি ক্ষেইত্যালেদের।আবার অনেকেই বলেন,আমরা ক্ষেত করি নিজেস্ব উপার্জনের অর্থ ও কর্জ ধার করে,কিন্তু সরকারি কোন সহযোগিতা পাইনা।সরকারি সহযোগিতা পেলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেতো বলেও জানান তাঁরা।
তবে এব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(অফিসার) মুহাম্মদ আবু ছালেক দৈনিক সকালের সময় ও চট্টগ্রাম ট্রিবিউন প্রতিবেদককে জানান,গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, সরলের বেশ কয়েকটি এলাকায় আমি নিজেই পরিদর্শন করেছি,কিছু জায়গাতে টমেটো চাষে একধরনের পঁচন রোগ ধরেছে যা আমি চোখ দেখেছি,এতে করে কৃষি পরিবার গুলো ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে।যেহেতু টমেটো চাষে খরচ হয় খুব বেশি।ভালো ফসল ফলাতে না পারলে লোকসান পোহাতে হয় তাদের।ওইসব এলাকায় আমাদের লোক আছে যারা বিভিন্ন এলাকায় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকে।তাছাড়া এক জাতের বীজ নিয়ে যখন একাধিক বার চাষ করে তখন অনেক সময় ওইসব পুরানো বীজ গুলো মূলত ফলন ক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে তাই চাষিদের পরামর্শ দিয়েছিলাম এক জাতের বীজ দিয়ে যেন একাধিক বার চাষ না করেন।
আর প্রতি গণ্ডা(২ শতক)জমিতে নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ২/৩ কেজি হিসেবে স্যার ব্যবহার করতে পারবে সেখানে কৃষকরা বেশি ফলন হবে মনে করে(২ শতক)গণ্ডা প্রতি ১২-১৫ কেজি পর্যন্ত স্যার ব্যবহার করছে তাঁরা।এবছর বর্ষার মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় সময় মাটি ভিজে থাকায় মাটি(তসানো) থেকে গেছে।মাটি তসানো থাকলে অনেক সময় পঁচন(ফুটিং)রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ক্ষেত-খোলা।তাই তাঁদেরকে মাটি গুলো পরিক্ষা করার জন্যে কৃষি অফিসে আনতে বলেছিলাম অনেককে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ আনেননি বলে জানান তিনি।
কীটনাশক ঔষধের গুনাগুন নিয়ে চাষিদের করা মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু ছালেক বলেন,কৃষকদের ধারণাটা হয়তো ভুল।তবে একুই বীজ একাধিক ব্যবহার করা ও মাটি দূষণে কারণে অনেক সময় কীটনাশক ঔষধ গুলো যথাযথ ক্রিয়া ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এধরণের কিছু হতে পারে বলে মন্তব্য করেন কৃষি কর্মকর্তার আবু ছালেক।
ক্ষতিগ্রস্থ চাষি পরিবারের জন্যে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হবে কিনা?তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,কৃষকদের জন্যে সহজ উপায়ে ব্যাংক লোন(ঋণ)গ্রহণের অনেক সুযোগ রয়েছে,চাইলে তারা তা গ্রহণ করতে পারেন। এতে প্রয়োজন হলে কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিতে পারেন কৃষকরা।