মুহাম্মদ মুহিব্বুর রহমান হীরন, বাঁশখালীঃ
বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মোহাম্মদ ছাবের আহমদ (৪০)। পেশা হিসেবে নির্দিষ্ট কিছুই নেই। তবু সংসার চলছে বহাল তবিয়তে। মূলত তার বউয়ের মাধ্যমে মানুষের নামে মামলা দিয়ে হয়রানিতে ফেলে টাকা আদায় করাই তার প্রধান পেশা। তার হাতে হয়রানির শিকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
জানা যায়, মোহাম্মদ ছাবের আহমদ বাঁশখালী থানার ১২ নং ছনুয়া ইউনিয়ন এর শুকলাল পাড়া ৫নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা। তার পিতার নাম আমিনুল হক। তার বর্তমানে তিনটি বউ রয়েছে। প্রথম বিয়ে করেন নিজ এলাকা থেকে। তার ঘরে চার সন্তান রয়েছে, তার সাথে এখনো পর্যন্ত ডিভোর্স না হলেও আলাদা থাকেন প্রথম স্ত্রী। বর্তমানে জোহনা বিবির সাথে সংসার করছে, তার সঙ্গে সংসার করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বিয়ের কোন কাবিন নেই। এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গেও অনেকবার কথা কাটাকাটি হয়েছে। এমনকি ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তাদের সম্পর্ক অবৈধ বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ভূক্তভোগী ব্যাবসায়ী জাগের হোসেন, আহম্মদ শফি, ছৈয়দ নুর, মোহাম্মদ রিদুয়ান, মন্জুর আলমসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন ছাবের একজন মামলাবাজ। সে নিজের বউ-বোনকে দিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এলাকার সাধারণ মানুষের নামে একের পর এক দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে থাকে। সেই সাথে একের পর এক নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে সে ওই এলাকার মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব মামলায় সে সাধারণত নিরীহ প্রকৃতির মানুষদের জড়ায়। ওইসব সাধারণ লোককে কোর্টের আশপাশে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে। এ অবস্থায় এক সময় বাধ্য হয়েই তাকে টাকা পয়সা দিয়ে তারা মামলা নিস্পত্তি করতে বাধ্য হয়। এমনি একটি মামলায় আসামী করা হয়েছে আমির হোসেন নামে এক ভ্যানগাড়ি চালককে, মামলার কথা বলে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়েরও অভিযোগ করেন তারা। গত ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আহমদ শফি, শাহাবুদ্দিন, মোঃ বেলাল, শহর মল্লুক নামে কয়েকজনকে আসামী করে বাঁশখালী কোর্টে নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে-১ চট্টগ্রামে একটি মামলা করেন ছাবেরের বোন রাবেয়া বেগম। পরে সেটি তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্ত শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হলে পুলিশ তাদের সতর্ক করে। এ মামলার তদন্তকারী এসআই নাজমুল হাসান জানান, তদন্তকালে বাদীর অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমান মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধ থেকে সৃষ্ট আক্রোশমূলক ভাবে বিবাদীদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
আরেক ভূক্তভোগী মোহাম্মদ হোছাইন জানান, মোহাম্মদ ছাবের হোছেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে নারী নির্যাতন মামলা করে হয়রানি করে আসছে এবং মামলা নিষ্পত্তির কথা বলে টাকা চেয়ে আসছে। সে আমাকে মিথ্যা মামলা দিলে আমি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাই তখন আমাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরন করা হয়। ১১ দিন কারাগারে থাকার পর আমি নির্দোষ হওয়ার প্রমান আদালতে তুলে ধরলে আমার জামিন মন্জুর করা হয়। এরকম মিথ্যা মামলা দিয়ে শুধু আমাকে নয় আরো অনেককে হয়রানি করছে এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার পত্রিকায় নিউজ ও এসেছে বলে জানায়।
অভিযুক্ত ছাবেরের সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, আমি কারো বিরুদ্ধে মামলা করিনি, আমার বউকে নির্যাতন করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে ৫নং ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াসেফ এ বিষয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে, চুরি করার অপরাধে জনসম্মুখে তার বিচার হয়েছিল তারপর দীর্ঘ পলাতক ছিল। রোহিঙ্গা একটি মেয়েকে বিয়ে করে বর্তমানে এলাকায় এসে পুনরায় এসব শুরু করছে। নিজের বউ এবং তার বোনকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মিথ্যা মামলা দিয়ে কেউ হয়রানির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিবো।