“পরকীয়া” আমাদের সমাজের এক নীরব মহামারীর নাম!

আখতার হোসাইন রাফিদ, চট্টগ্রাম ট্রিবিউন:
“পরকীয়া” আমাদের সমাজের এক নীরব মহামারীর নাম হল পরকীয়া।প্রতিদিন কত শত স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে এই পরকীয়ার নিষ্ঠুর কষাঘাতে!

স্বামী তার স্ত্রীকে ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে, স্ত্রী তার স্বামীকে ভাসিয়ে দিচ্ছে হতাশার এক অতল গহ্বরে,সন্তানদের ছোট করছে সমাজের মানুষের কাছে এই পরকীয়া নামক সামাজিক ব্যাধি।

এমনকি এই নোংরামীতে মোহগ্রস্ত হয়ে মা/বাবা তাদের আপন সন্তানদের হত্যা করতেও পিছ পা হননা,এমন ঘটনাও আমরা দেখি পত্রিকার পাতা উল্টালে।

পরকীয়ার শুরুটা সাময়িক আনন্দের নামে হলেও তার শেষটা হয় নৃশংসতার মধ্য দিয়ে।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
জীবনের এমন কোন দিক নেই এতে আলোচিত হয়নি।নখ কাটা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিষয় পর্যন্ত তার আলোচ্য বিষয়।

কোন মানবিক ধর্মই পরকীয়ার মত নোংরামিকে সমর্থন করতে পারেনা,করবেওনা।ইসলামও করেনি।

ইসলাম যেখানে পরনারীর দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করেছে সেখানে নিজ স্বামী স্ত্রী ছেড়ে দিয়ে অন্য স্বামী স্ত্রীর সাথে অবৈধ মেলামেশা করাকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠেনা।

নারীদের চরিত্র সংরক্ষণে ইসলাম তাঁদের কন্ঠেরও সীমারেখা এঁকে দিয়েছেন।

ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোনও ধরণের সম্পর্ক কিংবা বিবাহবহির্ভত‚ প্রেম, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?

এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।

এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম।

ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।

অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে।

পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।

পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২) ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন,‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর, ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(০১)তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(০২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে
(০৩) এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

★★★আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,
(০১) সে আল্লাহর অসন্তোষ,
(০২) কঠিন হিসাব
(০৩) ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮) কখনো দেখা যায় দেবরের সাথে জমে ওঠে পরকীয়া।

ইসলাম দেবরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’

এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)

হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ।

এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ যেন এধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।

দুনিয়া ও আখেরাতের কথা চিন্তা করে সুন্দর সংসার ও সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আসুন, পরকীয়া মুক্ত জীবন গড়ি। কোরআন-হাদিস মেনে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন আমিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here