পটিয়া হাসপাতালে প্রহরী মনছুর এখন ভয়ংকর সার্জারী ডাক্তার
ডেক্স রিপোটঃ চটগ্রামের পটিয়া উপাজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা প্রহরী মনছুর এখন ভয়ানক সার্জারী ডাক্তার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কোন রোগী এলে নিজেকে সার্জারী ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অপারেশন এর কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতিদিন ভয়ংকর সার্জারী করে এই নিরাপত্তা প্রহরী মনছুর। তার ভয়ংকর সার্জারীর কারণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ প্রায় বিশের অধিক পটিয়া উপজেলার মানুষ পঙ্গু হয়ে বসবাস করছে। তারপরও প্রতিদিন জরুরী বিভাগে কী ভাবে সার্জারীর কাজ করে তার খুঁটি জোর কোথায় তা রোগী পটিয়াবাসী জানতে চাই।
সূএে জানা গেছে ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ১২ তারিখ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী মোঃ জসিম কাজ করতে গিয়ে দুইটি কাচের টুকরা পায়ের মধ্যে ঢুকে যায়। সে উপজেলার মধ্যম গৈড়লা সামশুল আলমের ছেলে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১৭ই জুলাই চিকিৎসা সেবার জন্য পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে মোঃ মনছুর সার্জারী ডাক্তারের পরিচয় দিয়ে মোঃ জসিমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে জসিমের পায়ে ভয়ংকর সার্জারী শুরু করেন। তার ভয়ংকার সার্জারীর জন্য জসিমের বাম পা পঙ্গু হয়ে যায়। বর্তমানে জসিম পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে কষ্টে দিন পার করছে। আরো জানা গেছে ২০১৭ সালে ৬ই জানুয়ারী ক্ষতিগ্রস্থ মোঃ জসিম মাননীয় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বরাবরে এই নিরাপত্তা প্রহরী মনছুরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই লিখিত অভিযোগের উপরে পটিয়ার এমপি হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তৎকালীন ওসি বরাবরে এই প্রতারক সার্জারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও রহস্যজনকভাবে থানা কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় নি। একই বছরের চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন বরাবরে ভোক্তাভোগী জসিম উদ্দিন একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই লিখিত অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং ২০১৮ সালে জানুয়ারী মাসের ৪ তারিখে তদন্ত কমিটি চন্দনাইশ উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আইয়ুব নবী তার তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জন বরাবরে দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন নিরাপত্তা প্রহরী মোঃ মনছুরের বিরুদ্ধে অনিত অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে সত্য প্রমাণিত হল। নিরাপত্তা প্রহরী মোঃ মনছুরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ব্যতীত সার্জারীর মত কাজে নিজ উদ্দ্যোগে গ্রহণ করায় একটি দন্ডনীয় অপরাধ। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিরাপত্তা প্রহরী মোঃ মনছুরকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অন্য উপজেলায় বদলীর আদেশ দেন। বদলীটি ৬/৭ মাস পর আবারও টাকার বিনিময়ে পটিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে আসেন ভয়ংকর সার্জারী ডাক্তার মনছুর। এত বড় অপরাধ করার পরও মনছুর কিভাবে পুনরায় পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে আসে, কারা তাকে ব্যবহার করে, তার খুঁটির জোর কোথায় সাধারণ রোগী ও পটিয়া বাসীর মনে প্রশ্নও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
আরো খবর নিয়ে জানা যায় রোগীদের সাথে এই রকম প্রতারণা করে তার নিজ জেলা নোয়াখালীতে বিলাস বহুল বাড়ী জমি সহ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে গেছে নিরাপত্তা এই প্রহরী। ভোক্তাভোগী মোঃ জসিম জানান পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে গেলে মনছুর নিজেকে সার্জারী ডাক্তার পরিচয় দেয়। আমাকে অপারেশন করবে বলে জানান। তার কিছুক্ষণ পর তিনি আমার বাম পায়ের তালুর উপরে অংশে ভয়ংকর সার্জারী শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ হাত গ্লাস বিহীন কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে আমার পায়ের তালুর উপরের অংশ কাটেন এবং ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ঘাটাঘাটি করে অনেক রক্তক্ষরণ ও যন্ত্রনা দেওয়ার পর আমার পায়ে ব্যান্টিস করে দেন। পরবর্তীতে তিনি বলেন আমার পায়ের ভিতরে কিছু পাওয়া যায়নি। আমি যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় মনছুর কোন সার্জারী ডাক্তার নয়। সে হাসপাতালে নিরাপত্তা প্রহরী। এই সংবাদ জানার পর আমি স্থানীয় পার্শ্ববর্তী একটি প্রাইভেট ক্লিনিক এ গেলে সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার পা পুনরায় সার্জারী করে দুইটি কাচের টুকরা বের করেন। এই মনছুরের ভুল সার্জারীর কারণে আমার পা এখানো পর্যন্ত ভাল হয়নি। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টের দিন কাটাচ্ছি। এই ভয়ংকর সার্জারী ডাক্তার মনছুরের শাস্তি দাবী করছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মাননীয় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী কাছে। সরেজমিনে গিয়ে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায় প্রতিদিন নিজেকে সার্জারী ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মোঃ মনছুর সার্জারী করে হাজার হাজার টাকা প্রতারণা করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায় মনছুর বিভিন্ন রোগীদেরকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রাহ প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডাক্তাদের ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করে।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে আবাসিক অফিসার ডাঃ মোঃ ওয়হিদ উল্লাহর সাথে মনছুরের বিষয়ে কথা বললে তিনি এই নিরাপত্তা প্রহরী প্রতিদিন জরুরী বিভাগে কাজ করার কথা স্বীকার করে বলেন পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্য উপজেলার চাইতে রোগীর সংখ্যা বেশী হওয়ায় জরুরী বিভাগে ডাক্তার কম থাকায় নিরাপত্তা প্রহরী মনছুর ডাক্তারদের সাহায্য করে আসছে।