পটিয়া প্রতিনিধি:
পটিয়ায় ভুয়া সাপুড়ে বৈদ্যের চিকিৎসায় সাপে কাটা মাশফি (৪) নামে এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। মাশফি পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রামের মহিউদ্দীনের পুত্র। তার মা শারমিন আক্তার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। অন্যদিকে মাশফি’র মৃত্যুর তিনদিন পর তার প্রাণ এখনও আছে তাকে চিকিৎসার মাধ্যমে জীবিত করা যাবে এ ধরনের ভুয়া বৈদ্যের মিথ্যা আশ্বাসে মাশফি’র লাশ গত বুধবার রাতে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতারক বৈদ্য পালিয়ে যায়। যার ফলে লাশ উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে মহিউদ্দিনের শিশু সন্তান মাশফি তাদের পাকা ঘরের সামনে বসে খেলা করছিল।
এমন সময় একটি বিষধর গোখরা সাপ মাশফি’র সামনে আসলে মাশফি খেলার ছলে সাপটির ধরার চেষ্টা করে। এতে সাপটি মাশফি’র হাতের ছোবল মারে। এসময় মাশফি চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন বাহির হয়ে সাপ দেখে আতংকিত হয় এবং সাপটিকে মেরে ফেলে। তখন মাশফি’র মা ও ফুফু মাশফি’কে নিয়ে পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের বাক্খালী গ্রামের সর্প চিকিৎসক সর্পরাজ তাপস বড়ুয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। তাপস বড়ুয়া মাশফি’র হাত ব্লেইড দিয়ে কেটে রক্ত বের করে এবং লবণ পড়া দেয়। এভাবে হাতুড়ে চিকিৎসা করার পর তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে এবং ২ ঘণ্টা পর মাশফি’কে খেতে দিতে বলে। সকাল ১০টায় মাশফি’র মা মাশফি’কে খেতে দেয়। খাওয়ারের পর তার অবস্থার অবনতি দেখা দিলে পুনরায় তাকে তাপস বৈদ্যের কাছে নিয়ে আসে। মাশফি’কে তাপস বৈদ্য দেখে বলে যে, সে সুস্থ আছে তার গায়ে সাপের বিষ নেই। এমন আশ্বাসে মাশফি’কে পুনরায় বাড়িতে নিয়ে আসলে সকাল ১১টায় তার অবস্থার আরো অবনতি হয়। এমন সময় এলাকার আরেক হাতুরে ডাক্তার মাহাবুব নামের একজন কে দেখালে তিনি জরুরি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কর্নফুলী এলাকায় পৌঁছলে মাশফি মারা যায়।
এব্যাপারে সর্পরাজ তাপস বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার পৈত্রিক পাওয়া তন্ত্রেমন্ত্রে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সর্প কাটা রোগীর চিকিৎসা করে আসছেন। পূর্বের রোগীদের যেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেভাবে উক্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যু হলে আমার কিছু করার নেই। সাপ এবং সাপের বিষ সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা বললে লবণ পড়ায় অনুমান করে সাপের বিষ সম্পর্কে জানেন বলে জানায়। তবে সাপের বিষে কি পদার্থ আছে তিনি তা জানেন না বলে জানান। এই চিকিৎসা যদি হাতুড়ে চিকিৎসা হয় ভবিষ্যতে তা ছেড়ে দেবে বলে স্হানীয় সাংবাদিকদের বলেন।
মাশফি’র পিতা মহিউদ্দিন জানান, সে কোন বৈদ্যকে লাশ তোলার জন্য বলেননি, শুধু আরেকবার দেখার জন্য তার পুত্রের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি চেয়ে হুজুরের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি কোন অনুমতি দেন নাই বলে লাশ তোলেননি। স্থানীয় লোকজন জানান ভুয়া বৈদ্যের কারণে সাপে কাটা শিশুটি মৃত্যু হয়েছে। সাপে কাটা পর সাথে সাথে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে শিশুটি প্রাণে রক্ষা পেত। এ সকল ভুয়া বৈদ্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দীন জানান, বৈদ্যের দ্বারা সাপে কাটা লাশের চিকিৎসা করা হবে জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে একদল পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। তবে ভূয়া বৈদ্যকে না পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি পুলিশি ভয়ে সাপে কাটা শিশুর কবর থেকে লাশ তুলতে পারেনি।