ধর্মীয় উগ্রতায় উত্তাল উপমহাদেশ: কোন পথে আমরা?

জসিম মুহাম্মদ রুশনী:
বিশ্বপরিস্থিতি শান্ত নয়। ডান-বামের শক্তিগত ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে। ‘বিশুদ্ধ গণতন্ত্র’র বৃটেন আর গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা আমেরিকা নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই ‘পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ’ করবার উদগ্র স্পৃহা দেখিয়ে চলেছে। এরমধ্যেই প্রকটভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে অশান্ত এশিয়া।

এশিয়ার বৃহত্তর রাষ্ট্র ভারত। এর প্রভাববলয়েই রয়েছে উপমহাদেশ। সেই কলোনিয়াল যুগের সংস্কার অনুসারে এখনও এই অঞ্চলকে ‘ভারতোপমহাদেশ’ নামেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই বৃহত্তর ভারত তথা মহাভারতের রয়েছে সমৃদ্ধ এক নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস। নানাবর্ণ আর বহুধর্মের সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান এ অঞ্চলকে বিশেষায়িত রেখেছে।

বিশেষায়িত ভারতের রাজনীতি বরাবর -ই আবর্তিত হয় ধর্মীয় বলয়ে। পরধর্মসহিষ্ণু সদ্ধার্মিক, পরধর্মবিদ্বেষী বদ্ধার্মিক – এ দুটো প্রজাতি -ই রয়েছে এখানে। সুদীর্ঘ কালের মুসলিম শাসন এখানে ভিন্নধর্মের পৃষ্টপোষকতা যেমন করেছে, তেমনি গোঁড়াপন্থী হিন্দু শাসকদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদদে মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপর গণনিপীড়িনও চলেছে। প্রাচীন যুগের বৌদ্ধ শাসন আর মধ্যযুগের মুসলিম শাসন এ অঞ্চলকে হানাহানির দিকে নেয়নি। অথচ আধুনিক ভারতের চিত্রটা ভিন্নতর।

আধুনিক ভারত বলতে আমরা স্বাধীন ভারতকেই বুঝি। দুইশ’ বছরের ইংরেজি শাসন সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছে, স্বাধীন ভারত সে বীজের তলস্পর্শী বৃক্ষ পেয়েছে। তাই পরাধীন ভারত যতোটা অসাম্প্রদায়িক সেজেছিলো, স্বাধীন ভারত ঠিক ততোটাই সাম্প্রদায়িক রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে বিশ্বইতিহাসে। উদারপন্থী কংগ্রেসের শাসনে মাঝেমধ্যে সেটা অবদমিত থাকলেও উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপির শাসনে সেটা আরও সর্বগ্রাসী হয়ে পরিস্ফুটন ঘটিয়েছে। সমকালীন মোদিপর্ব সেই নগ্নতার বীভৎস চিত্রটা একদম খুল্লামখোলা করেছে।

উপমহাদেশের কর্তাবাবু হিসেবে ভারতের কালচার পার্শ্ববর্তীদেরও সংক্রমণ করেছে। তার সবচে বেশি প্রভাবটা পড়েছে বার্মায়। সেটা এতোবেশি শক্তিশালী – গৌতম বুদ্ধের অহিংস মতবাদও সেখানে কলুষিত হয়ে গেছে। ধর্মীয় উগ্রতা ও আভিজাত্যবাদের নগ্ন থাবায় বার্মার একটি পুরনো নৃগোষ্ঠী তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছে। আবার তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী সংস্থাগুলো সরবও রয়েছে। অতিসম্প্রতি তার স্বাক্ষরও পড়েছে হেগ’র আদালতে গাম্বিয়ার মামলার মাধ্যমে।

ভারতের পেটে বাস করা বাঙলাদেশ কোন্ পথে যাবে এবার? রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জর্জরিত একটি ছোট্ট রাষ্ট্র। মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা নব্বই শতাংশ মানুষ মুসলিম হলেও সাম্প্রদায়িকতার প্রকোপ নেই এখানে। কিন্তু ভারত বার্মার আগুনের হলকাটা তো গায়ে লাগে সবসময়। সে আগুন মাঝেমধ্যে তাঁতিয়েও দিচ্ছে। তবে কোন্ পথে হাঁটবে ভবিষ্যতে? শঙ্কিত হয়ে ক্ষণ গুনি।

(জসিম মুহাম্মদ রুশনী // শিক্ষক, কবি ও কলামিস্ট।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here