ডিপ্লোমা কোর্স চার বছরের পরিবর্তে তিন বছর; কতোটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত!

সাফায়েত মোরশেদ, চট্টগ্রাম:
দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রতি বছর কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী দেশের সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রায় ২২০ টির মত সরকারি বেসরকারি পলিটেকনিক আছে। যেখানে প্রায় ছয় লক্ষ এর অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিকে অধ্যায়নরত। সম্প্রতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডঃ দীপু মনি ডিপ্লোমা কোর্সকে চার বছর থেকে তিন বছরের নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তের কথা বলেন, এবং এর কারণ হিসেবে তিনি অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয়ের দিকটিকে তুলে ধরেছেন।

ডিপ্লোমা কোড গুলোকে চার বছর থেকে তিন বছরের নামিয়ে আনা হলে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হল:
১. চাকরি ক্ষেত্রে বেতন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
২. বর্তমানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ১০ ম গ্রেডে চাকরি পেলেও , তা ১৩-১৬ তম গ্ৰেডে নেমে আসবে।
৩. বর্তমানে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও , পরবর্তীতে টেকনিশিয়ান/ফোরম্যান হিসেবে কাজ করতে হবে।
৪. পড়াশোনার মান থাকবেনা, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হবে এবং জ্ঞানের পরিধি হ্রাস পাবে।
৫ . সামাজিক অব
মূল্যায়নের সৃষ্টি হবে
৬. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মান কমে যাবে।

ডিপ্লোমা কোর্সকে চার বছর থেকে তিন বছরে কমিয়ে আনার ব্যাপারে আইডিইবি এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান সাংবাদিকদের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারদের একধাপ নিচে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা চাকরি পায়। কিন্তু ডিপ্লোমা কোর্স চার বছর থেকে তিন বছর করা হলে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারদের এক ধাপ নিচে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা চাকরি পাবে না এবং অবস্থানও থাকবে না। কারণ তখন ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পড়ালেখার ব্যবধান প্রায় তিন বছর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে চতুর্থ বিপ্লবের জন্য সরকার ছয়টি ক্ষেত্রকে নির্বাচন করেছে। যার মধ্যে এই ডিপ্লোমা ক্ষেত্রটি একটি। তাই কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ডিপ্লোমা কোর্সকে আরো আধুনিকায়ন করার জন্য নতুন কিছু কনটেন্ট যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে কারিগরি শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত দেশ, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

এ সময় তিনি আরো বলেন ডিপ্লোমা কোর্সকে কমিয়ে আনা হলে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মান কমে যাবে । বাংলাদেশের প্রতিবছর বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশ থেকে টেকনিশিয়ান এনে কাজ করাতে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এই খরচ ভবিষ্যতে আরও কয়েকগুন বেড়ে যাবে যদি ডিপ্লোমা কোর্স কে খাটো করা হয়।

এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলোতে শিক্ষা মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here