চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কারা?

আব্দুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর:
চট্টগ্রামে একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে পাল্টাপাল্টি কথার যুদ্ধ। বিষয়টি হলো নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া নিয়ে।

তবে এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি। কেননা মঞ্চে কে বসবেন কে বসবেন না সেটি নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যে বর্ধিত সভা হয়েছিল সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতি ছাড়া কেউ মঞ্চে বসবেন না। আর সেখানে হাসিনা মহিউদ্দিন নিজেই উপস্থিত ছিলেন।

মঞ্চ থেকে নামা নিয়ে হাসিনা মহিউদ্দিন কোনো কথা না বললেও বিষয়টিকে নিয়ে কেউ কেউ ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাররা এ ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশেরও ডাক দিয়েছে। এনিয়ে অনেকেই বলেছেন, এতে কি প্রয়াত চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সম্মান জানানো হচ্ছে নাকি তাকে অপমান করা হচ্ছে। বাড়াবাড়ি যারা করছেন তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্য কি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল, বিভেদ সৃষ্টি করা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা বিভিন্ন সময় সমালোচিত, বহিস্কৃত কিছু ব্যক্তি বিষয়টিকে নিয়ে ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে মাঠে নেমেছে। কারণ সুষ্ঠুভাবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেটি তারা সহ্য করতে পারছেন না। বিভেদ কলেহ সৃষ্টি করে একটি অরাজাকতা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে তারা। এছাড়া আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে টার্গেট করে নাছিরবিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে হয়তো এবিষয়কে বেছে নিয়েছেন এ বির্তকিতরা।

২০১৩ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কমিটি গঠনের পর দুই নেতার মধ্যে কদাচিৎ মত ভিন্নতা থাকলেও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কোনো বিরোধ ছিলো না। আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ সকল সাংগঠনিক কাজে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের মধ্যে ছিলো গুরু-শিষ্যভাব। এর ফলে এ কমিটিকে অতীতের যেকোনো কমিটি থেকে শক্তিশালী আখ্যা দিয়েছিলো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সঙ্গেও সাংগঠনিক কোনো মতবিরোধ নেই সাধারণ সম্পাদকের। আবার কমিটিতে প্রায় ৯০ শতাংশ নেতাই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক কোন্দল থাকলে তো অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সমস্যা হতো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার প্রতিনিধি সভায় বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক সুসংগঠিত। এরপরও কারা চক্রান্ত করছে? কি উদ্দেশ্য তাদের তা খুঁজে বের করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন নিজ দল থেকে। অনুপ্রবেশকারী দলের জন্য ক্ষতিকর এবং যারা দলে বিভেদ সৃষ্টি করে তারাও ক্ষতিকর।

প্রতিনিধি সভার বিষয়ে মেয়র নাছির বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত (শনিবার) রাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বসে সিদ্ধান্ত নেন মঞ্চে কারা বসবেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে- কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিবর্গ, দলের সংসদ সদস্য এবং ৬ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সকল সহ-সভাপতিবৃন্দ মঞ্চে বসবেন।এর বাইরে সবাই বসবেন মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে। কারা কারা বক্তব্য দেবেন সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত নেতা। এখানে মহিউদ্দিন ভাইকে টেনে আনা সমীচীন নয়। অহেতুক খোঁচা দেওয়াও সমীচীন নয়। এটা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here