সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫

গর্জনিয়ার সাধারণ মানুষের ভাবনা, কেমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাই?

আপডেট:

এম.মোবারক হোসাইন, স্টাফ রিপোটার:
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবারও দেশব্যাপী ধাপে ধাপে ভোট করার চিন্তা আছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির। সেই সাথে এলাকাজুড়ে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রাতিরা প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। অপরদিকে সাধারণ মানুষের মনে নানান রকম জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। কেমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান বানালে এলাকার ন্যায্য অধিকার পাবে? সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে বেশকিছু চাওয়া তুলে এনেছি। সাধারণ ভোটারের চাওয়া গুলো নিচে উপস্থাপন করা হলো।

১. কৃষকদের অধিকার নিশ্চিত করণঃ
কৃষির ওপর নির্ভরশীল এ রম্যভূমি কৃষকদের দুর্দশা আর কতদিন চলবে। এ প্রশ্ন রম্যভূমির নীতিনির্ধারকদের কাছেই রইল। একটি বিষয় স্পষ্ট করে বুঝতে হবে, শুধু কৃষিতে ভর্তুকি, সার, বীজ সরবরাহ করলেই হবে না, একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য যেন কৃষক পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষক কৃষিকাজ করে যে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে তা থেকে যদি সে লাভবান হয় তাহলেই কৃষি উৎপাদন বাড়বে। তাই দেশে যথাযথ খাদ্যের সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে হবে। আর তাদের বাঁচাতে হলে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এবং এ ভর্তুকি যাতে প্রকৃত কৃষক পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কৃষক তার মেধা ও শ্রম দিয়ে উৎপাদন করে দেশের সামগ্রিক গতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কৃষকের অধিকার খর্ব হলে তার চেয়ে পরিতাপের আর কিছু হতে পারে না। রম্যভূমি গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার কৃষক অধিকাংশ গরিব। তাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে টেক্সের নামে চাঁদাবাজি করে। হ্যাঁ, টেক্স নেওয়া হোক। তবে সেটি যেন এমন না হয় কৃষককে কৃষি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। আগামির বৃহত্তর গর্জনিয়াতে কৃষকদের অধিকার রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা দানকারীদের চেয়ারম্যান হিসেবে চাই।

বিজ্ঞাপন

২.রাস্তা -ঘাট সংরক্ষণ ঃ
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য রাস্তাঘাটের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। রাস্তা যেন এমন না হয় সুস্থ মানুষ একবার যাতায়াত করলে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। যে ব্যক্তি রাস্তা -ঘাট সংরক্ষণ করার জন্য বদ্ধপরিকর আগামিতে এমন ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান হিসেবে চাই।

৩.মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ঃ
আজ বৃহত্তর গর্জনিয়াতে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নাই বললে চলে। জনসংখ্যার তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কম। এমনকি একটা উচ্চমাধ্যমিক(কলেজ) প্রতিষ্ঠান নেই। বৃহত্তর গর্জনিয়ার শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ঝরে পরে যাচ্ছে প্রতিবছর। তাই আগামিতে এমন ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান হিসেবে চাই যারা সাধারন ছেলে-মেয়েদের জন্য উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ নিচ্ছিত করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

৪.খেলাধুলার জন্য সুব্যবস্থা ও ক্রিড়া স্কুলের ব্যবস্থা গ্রহণ ঃ
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ও জাতিগঠনে চাই উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ।
মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস ফেলবার অধিকার শিশুটির জন্মগত অধিকার। শিশু কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে খোলা জায়গার প্রয়োজনীয়তা অনেক। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে সেখানে অবসরে একটু বসা যায়, কথা বলা যায় সমমনস্ক কারো সাথে, প্রকৃতির সাথে একাত্ব হয়ে মন হালকা করা যায় তেমন একটু খোলা জায়গার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মাদক থেকে রক্ষা করার জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। আগামির গর্জনিয়াকে মাদক মুক্ত করার জন্য খেলাধুলার প্রশিক্ষণ সহ নানান উদ্যোগ গ্রহণ কারি ব্যক্তিদেরকে আগামির দ্বায়িত্বশীল হিসেবে পেতে চাই।

৫.জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ ঃ
গর্জনিয়া একটি বন্যাবাহি এলাকা এই এলায় সবচেয়ে বড় নদী বাঁকখালী নদী এই নদীর পারের অসংখ্য পরিবার জায়গা হারিয়েছে, ঘর হারিয়েছে। আর যেন ঘরবাড়ি, জায়গা জমি হারাতে না হয় কোন পরিবারকে। সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বদ্ধপরিকর ব্যক্তিদেরকে আগামির গর্জনিয়ার দ্বায়িত্ব দিতে চাই।

৬.চিকিৎসার সুব্যবস্থা গ্রহণ ঃ একটা এলাকার সবচেয়ে বড় অধিকার হচ্ছে তাদের জন্য সু- চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ। জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্য ক্লিনিক খুবই নগণ্য। তাই আগামির গর্জনিয়াতে এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাই যিনি এলাকার প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করবে ।

৭.জন্ম নিবন্ধন,চেয়ারম্যান সনদ, মৃতু সনদ সহ সাধারণ সেবায় ভোগান্তি দূরীকরণঃ
জন্ম নিবন্ধন সরকারের জাতীয় নীতিমালা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই সেবা গ্রহণের সুযোগ ও তার গ্রহীতার সংখ্যার মধ্যে যে বিস্তর ব্যবধান তাতে জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি হোঁচট খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাত্র ৩৭ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন হয়েছে। যার মানে দাঁড়ায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী এক কোটি শিশু সরকারি হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে।সরকারি নিয়মে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নবজাতকের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হয়। অথচ বেশিরভাগ মা-বাবাই এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। তারা ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার সময়, সাধারণত শিশুর বয়স যখন ছয় বছর সে সময় জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন।কীভাবে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে হয় সে বিষয়েও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ চিত্র আবার শহর ও গ্রামভেদে ভিন্ন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকারি দপ্তর পর্যন্ত এসে সনদ নেওয়ার যাতায়াত খরচই অনেক বাবা-মায়ের জন্য মাথাব্যথা।সেবাটির ব্যাপারে নারী ও মূলত কিশোরী মায়েরা তেমন অবগত নন। জন্ম নিবন্ধন হয়নি এমন শিশুদের পাঁচজন মায়ের মধ্যে মাত্র তিনজন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানেন। কিন্তু তারপরেও উদাসীনতা শিশুর আইনি সুরক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।জন্মনিবন্ধন না থাকলে শিশু শ্রম আর বাল্য বিয়ে থেকে শিশুদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। শিশু অপরাধীও জন্ম সনদ ছাড়া শিশু হিসেবে আইনি সুবিধা পাবে না। তাই আগামীতে এমন চেয়ারম্যান হোক যিনি শিশু,কিশোর সহ সকলের অধিকার নিচ্ছিত সহ সাধারণ সেবায় ভোগান্তি দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

৮.সঠিক বিচার ব্যবস্থা তৈরিঃ
“গ্রামে হবে সালিস, আদালত হোক উপজেলায়” এই উক্তিটির সঠিক ভাবে প্রতিফলন করা খুবই জরুরি। কারণ সাধারণ মানুষদের যদি সামন্য বিষয়ের জন্যও থানায় যেতে হয় গ্রাম আদালত নামে আদালত থাকার কোন প্রয়োজন নেয়। সঠিক ও সুবিচার ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব। অন্যতায় মারামারি হানাহানি হিংসা বিদ্বেষ চরম পর্যায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের চাওয়া এমন ব্যক্তিই চেয়ারম্যান হিসেবে আসুক যিনি গ্রামকের বিচার গ্রামেই সালিস করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত