আরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:
চলতি মাসে হঠাৎ দেশে হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার৷তবে সংক্রমণের হার বাড়লেও বাড়েনি সচেতনতা। তাই করোনা মহামারি ঠেকাতে সরকার ইতিমধ্যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে।এর মধ্যে করোনার ঊর্ধ্বগতির ফলে জনসমাগম রোধে সারাদেশে গণপরিবহনে ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আর তাতেই চরম ক্ষোভ ও বিপাকে সাধারণ মানুষ।
সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোতে গনপরিবহনের বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হলেও অধিকাংশ গণপরিবহনেই উপেক্ষিত ছিলো স্বাস্থ্যবিধি।আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলেও এর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় নি।বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও চোখে পড়েছে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর দৃশ্য।এদিকে সকাল থেকেই যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি ছিলো যানবাহন সংকট। ফলে কর্মজীবী সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
গণপরিবহনের এক যাত্রী মোশতাক আহমেদ বলেন,ভাড়া বাড়ার সাথে সাথেই অনিয়ম শুরু।যাত্রী ওঠা-নামা ৫ টাকার ভাড়া এখন ১০ টাকা। আর এই সুযোগে বিশেষ করে টেম্পু গুলা একটা স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজের সামনে গেলে আর যাবে না বলে গাড়ি খালি করে পুনরায় যাত্রী তুলে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ লুফে নিচ্ছে।আগে ৩ টি স্টপেজ একসাথে গেলে ১০ টাকা ভাড়া নিলেও এখন প্রতিটি স্টপেজে এ বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। এছাড়া গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের ভোগান্তি কমতি নেই।
আরেক গণপরিবহন যাত্রী জাহেদুল হক বলেন,এমনিতেই করোনায় থমকে গেছে সাধারণ মানুষের জনজীবন। নিম্নআয়ের মানুষের বন্ধ হয়ে গেছে আয়- রোজগারের পথ।এছাড়া মধ্যবিত্তের অনেকেই জীবিকা হারিয়ে বিপাকে। তাই একদিকে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি ও অন্যদিকে গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্ত জনদুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷মহামারি ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ থাকলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা ও দুর্ভোগ বিবেচনায় গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক সেটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন,পরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রথম দিনেই গাড়ি চালকরা অনিয়ম করছে৷ কিন্তু প্রশাসনের এ ব্যপারে তৎপর না।ফলে
দূর্ভোগ পোহাচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। গণপরিবহনে যাত্রী কমিয়েই কি মহামারি ঠেকানো যাবে?দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোচিং বাণিজ্য ঠিকই চলছে। এছাড়া মিছিল-মিটিং, সমাবেশ,হাট-বাজার, অফিস-আদালত সহ বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও মাস্কের ব্যবহার এখন ও নিশ্চিত হয়নি। সরকারের উচিত মহামারি ঠেকাতে সর্বপ্রথম মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা৷ শুধু গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করলেই চলবে না,সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে গণপরিবহন চালকদেরও অযুহাতের শেষ নাই।অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যাত্রীরা মানছেন না বলে অভিযোগ চালকদের।
প্রসঙ্গত,স্বাস্থ্যবিধি জোড়ালো করতে আজ থেকে গণপরিবহনে ৬০শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি শুরু হলেও মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও অনিয়ম বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি।