কক্সবাজার পিএমখালীর মহিলামেম্বার খালেদা আক্তারের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির সংবাদে তোলপাড়

কক্সবাজার প্রতিনিধি,
১৪ সেপ্টেম্বর, চট্রগ্রামের বহুল প্রচারিত অনলাইন নিউজপোর্টাল চট্রগ্রাম ট্রিবিউনের “মেম্বার দম্পতি বেপরোয়া” পিএমখালীর মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তারের লাগামহীন ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ” শিরোনামে অনুসন্ধানমুলক তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় তোড়পাড় সৃষ্টি হয়।

উক্তসংবাদ প্রকাশ হলে এ দুনীর্তিবাজদের বিরুদ্ধে এলাকায় মানুষের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বেরিয়ে আসছে তাদের একের পর এক দুর্নীতির অজানা কাহিনী। আর খুলে যায় তাদের পুরনো ঘুষদুর্নীতির খতিয়ান বইও। এরপর জানা যাচ্ছে তাদের নিত্য ঘুষ দুর্নীতির তরতাজা খবরা খবর। একটি সুত্র জানান যদি এই মহিলা মেম্বার কর্তৃক বাস্তবায়িত কোন প্রকল্প খতিয়ে দেখা হয় তাহলে কোথাও স্বচ্ছতা পাওয়া যাবেনা।এমন কোন প্রকল্প বা খাত নেই সে দুর্নীতি করেনি। এমনকি ১০ টাকা চালের কার্ড বিতরণের সময় ৫০০/১০০০ টাকা করে জনপ্রতি নিয়েছে আর এখন এক জনের কার্ড অন্যকে দিয়ে নিচ্ছে টাকা। যেকোন ভাতার বই করে দেয়ার নামে নিচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। টাকা নিয়েও কাউকে দিচ্ছে আবার কাউকে বছরের পর বছর ঘুরাচ্ছে। প্রতিবার বয়স্কভাতা দেয়ার সময় জনপ্রতি নিচ্ছে ২০০ শত টাকা করে।(এটা আবার ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রত্যেক মেম্বারেরা নাকি নেয়)। গর্ভবর্তী ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমে নিয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা করে। এরপর যতবার ভাতা দেওয়া হয় ততবারই ব্যাংকে গিয়ে জোর করে নিতেছে ১১০০ টাকা টাকা করে (অফিসের বাবত ১০০ টাকা + নিজের জন্য ১০০০ টাকা)। গত কুরবানি ঈদের ৩/৪ দিন আগে গর্ভবর্তী মহিলারা ভাতা উত্তোলন করার পর ব্যাংকে গিয়ে অধিকাংশ মহিলার কাছ থেকে প্রতি বারেরমত ১১শত টাকা করে নিয়েছে। এসময় কয়েকজন টাকা না দিয়ে চলে আসলে তাদেরকে ফোন করে করে গালমন্দ করেছে এবং পরর্বর্তিতে কোন টাকা তুলতে দিবেনা বলে হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে বলে জানা যায়।

এই কাহিনী এলাকায় জানাজানি হলে এ ঘটনা তদন্ত পুর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোরদাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল। সুত্রে আরো জানা যায় অত্র এলাকার অসংখ্যা মানুষের নাম ও ঠিকানা যাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে জালজালিয়তি করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত না করে বছরের পর বছর তাদের সাথে প্রতারণা করে আসছে।যে কারণে এলাকার মানুষ তাদের নানান মুখরোচক কথা বলা শুরু করছে। উক্ত মেম্বার দম্পতি কর্তৃক এলাকার অসংখ্যা ভুক্তভোগী মানুষ বছরের পর বছর প্রতারণার স্বীকার হলেও লাজ লজ্জায় তাদের নানান অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ভিত্তিত ভাতার বই, সরকারি ঘর, গর্ভবর্তী ভাতা, ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার প্রলোভনে ফেলে এলাকার সহজ সরল গরীব দুস্থ বিধবা পঙ্গুসহ সহায়সম্বলহীন মানুষের নিকট থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার শতঅভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের দুর্নীতির খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকা তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তাদের বাড়িতে সকাল বিকাল মানুষের সারির লম্বা লাইন লেগে যায়। কয়েকজন পাওনাদারকে মেম্বারের স্বামী ফরিদুল আলম গালমন্দ করছে। আবার কজনকে ৩/৪ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সুত্র জানায়,বিত্তশালী পরিবার, তারা বয়স্কও নয়, আবার বিধবাও নয়। এমন পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অহরহ ভাতার বই করে দিচ্ছে এ মেম্বার দম্পতি। এরকম অসংখ্যা মানুষকে বই করে দিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকার আপামর জনতার। অগ্রাধিকার ভিক্তিতে সরকারি সুযোগ সুবিধা যাদের পাবার কথা তারা বরাবর পিছিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাহীন গরীব মানুষকে মিথ্যা প্রলোভনে ফেলে কৌশলে টাকা নিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি করছে আর বিত্তশালীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ এ প্রতারক দুর্নীতিবাজ মেম্বার দম্পতির বিরুদ্ধে।

সরেজমিন জানার জন্য ছনখোলা এলাকায় গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তার ও স্বামী ফরিদুল আলমের ব্যাপারে জানতে চাইলে মধ্য বয়সি এক ভদ্রলোক বলেন সে তার মাকে নিয়ে বয়স্কভাতা তোলার জন্য ব্যাংকে গিয়ে দেখেন তার এলাকার কয়েকজন পুরুষ/মহিলা ভাতার টাকার জন্য লাইন ধরিয়ে আছে অথচ তারা সবাই বিত্তশালী। তাদের নিকট থেকে জনপ্রতি ১২ হাজার টাকা করে নিয়ে বই দিয়েছে মহিলা মেম্বার। তন্মধ্য দেখা যায় ছনখোলা নয়াপাড়া এলাকার গুল বাহার স্বামী নুরুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম নুরুল হক। একই পাড়ার রহিমা বেগম ও আবদুর রহিম দম্পতি। মাদলিয়া পাড়ার দিনমজুর মৃত কালুর পুত্র ছবুর থেকে নিয়েছে ৩ হাজার টাকা।

আবার অনেকের নাম জানা গেছে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সেবা দেয়নি। এরকম অভিযোগের শেষ নেই। আর চরম প্রতারণার স্বীকার:- ছনখোলা পশ্চিমপাড়ার আনজুরু ঘোনা এলাকার অহায় বিধবা মহিলা তাহামিনার কাছ থেকে (বিধবা ভাতার বই) নিয়েছে ৩ বছর আগে ৫ হাজার টাকা,পশ্চিম পাড়ার রখম আলীর ছেলে কবির আহাম্মদের কাছ থেকে ২ বছর আগে নিয়েছে ২ হাজার টাকা। খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে পঙ্গু বদিউল আলম বস্তা বদি থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। নয়াপাড়ার মৃত ছফর হাজীর স্ত্রী থেকে নিয়েছে ৪ হাজার টাকা। মাজের পাড়ার মৃত মুফিজুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে তিন বছর আগে নিয়েছে (বিধবা ভাতার বই) ৩ হাজার টাকা। পশ্চিমপাড়ার মৃত আবদুস ছোবহান এর মেয়ে স্বামী পরিত্যত্ত মহিলা বীর কমলার কাছ থেকে তিন বছর অাগে ৩ হাজার টাকা নিয়ে এবছর ভিজিডি কার্ড দিয়েছে। আবার ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন ভাতার বই করে দিলেও নানান জাল জালিয়তি করে অনেকের বই থেকে ৬ মাসের টাকা গোপনে উত্তোলন করেছে বলেও গুরুতর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। এমন প্রতারণার স্বীকার হয়েছে সদ্য নতুন বই পাওয়া ছবুরসহ অনেকে। এ ব্যাপারে ছবুর জানান সে অশিক্ষিত মানুষ, নতুন বই নিয়ে টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে সে পেয়েছে ৩ হাজার টাকা। অন্য মানুষ কিন্তু ৬ হাজার টাকা করে তুলছে। আমাকে ৩ হাজার টাকা কেন? বলে ব্যাংকের এক অফিসারকে জানালে কে বা কারা আগে ৬ মাসের টাকা তুলে নিয়েগেছে বলে সে জানতে পারেন। তিনি বলেন যাগ্গে লাভ না হলেও আজ আসল টাকা পেয়েছে সে। অর্থাৎ বই নিতে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিল, সে টাকা হলেও পেয়েছে। না হয় পরের বার থেকে লাভ হবে। এই মেম্বার দম্পতির বিরুদ্ধে এরকম শতঅভিযোগ এলাকার মানুষের।

তাদের এসব লাগামহীন ঘুষ দুর্নীতির কারণে পরিষদর বদনামি হচ্ছে। এদের দেখাদেখি অন্যরাও তাদের পথ অনুসরন করে তারাও সুযোগ খুঁজবে। গোটা সমাজ বা দেশ কলোষিত তো হচ্ছেই। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে জানার জন্য মেম্বার খালেদা আক্তারের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে নিউজ না করার অনুরুদ করেন। প্রতিবার গর্ভবর্তী মহিলারা ভাতা নেয়ার সময় অফিসের কথা বলে ১১শত টাকা দিতে হয় মেম্বার খালেদা আকতারকে, এ ব্যাপারে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুব্রত বিশ্বাসের নিকট জানতে চাইলে বলেন আমার অফিসের কথা বলে কে কার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে তা আমাদের জানার বিষয় না। অফিসের কোন লোকতো টাকা নিচ্ছেনা। বাইরের কেউ গোপনে নিলে আমার কি করার আছে। তারপরও তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। আর সামনে থেকে কেউ যেন এমন অভিযোগ তুলতে না পারে সেদিকে সুনজর রখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here