কক্সবাজার প্রতিনিধি,
কক্সবাজারের সদর থানার প্রভাবশালী তকমা লাগানো দালালদের মধ্যে একজন আব্বাস উদ্দিন। বলতে গেলে দালাল খ্যাতি হলো তার একমাত্র পুঁজি। জনৈক আব্বাসের হয়রানিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। আব্বাস উদ্দীন পিএমখালী ইউনিয়নের গোলার পাড়া এলাকার মৃত কালুর পূত্র।পেশাদার এ দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। তার খপ্পড়ে পড়ে অসংখ্য নিরীহ মানুষ মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ আব্বাস উদ্দিন যেকোনো মানুষের সমস্যা সমাধান করে দিবে বলে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব নেন। অতপর ভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।এভাবে সে দিনের পর দিন নানার কৌশলে সরকারি বিভিন্ন অফিসারদের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদেরকে দেওয়ার অজুহাতে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে তার দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়িত প্রতারিত হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টদের কাছে। তার কাছে জমাকৃত টাকা চাইতে গেলে উল্টো বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। তার অদৃশ্যে ও আকাশচুম্বি ক্ষমতা নিয়ে এলাকার সচেতন মানুষ রীতিমতো হতবাক।
আবার সাধারণ মানুষের মাঝে একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আসলে তার এত ক্ষমতার উৎস কোথায়। তার ইচ্ছে ও অলিখিত নির্দেশ ছাড়া কক্সবাজার থানায় কোন কাজ করা যায় না বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নাম্বার ওয়ার্ড দক্ষিণ ঘোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সরকারি হাসপাতালে আয়া পদে কর্মরত শূনিল দাশের স্ত্রী নেপালি দাস (৬০) জানান তারা ক্রয় সূত্রে একটি জমিতে ঘর তৈরি করে দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকায় নিজেরা ও অন্যকে ঘর ভাড়া দিয়ে বসবাস করে আসছি।
এর মধ্যে সুবীর পাল নামে এক ভাড়াটিয়াকে ঘর ভাড়া দিয়েছিলাম। তারা ছয় মাস পর্যন্ত ঠিকমতো ঘর ভাড়া দিয়েছিল। কিন্তু ছয় মাস পর থেকে ভাড়া দিতে গড়িমসি করতে থাকে ভাড়াঠিয়া সুধীর পাল। এরমধ্যেই ২/১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে তার কাছে ভাড়ার টাকা চাইতে গেলে সে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। (অবশ্য সে গোপনে জানতে পারে আমার বাড়ি ভিটার জমিটি খাস জায়গা)। সে সুবাদে আমার দুর্বলতার সুযোগে এক পর্যায়ে আমার ভিটাসহ পুরো ঘর তার দাবী করে বসে।
এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিনকে জানালে সে বিচার সালিশের মাধ্যমে অবৈধ দাবিদার ভাড়াঠিয়া সুধীর পালকে ঘর ছেড়ে দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন। এরপরেও সে বাড়ি ছেড়ে না দিয়ে কমিশনার হেলালের বিচার অগ্রাহ্য করেন। এরপর আমরা সমাজের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ অনুযায়ী কক্সবাজার সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। ওই অভিযোগের তদন্ত করেন এসআই সনজিৎ বড়ুয়া।এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ থাকাকালীন ধুরন্ধর সুধীর পাল আমাদের নামে গোপনে উল্টো সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা রুজু করেন।এ বিষয় নিয়ে আমরা থানায় গেলে আব্বাস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হলে সে বলে থানা কোর্টের যে কোন অফিসার তার খুব কাছের, তারা আবার তার কথা শুনেও, একথা বলে সে আমাদের বিচারটি সমাধান করে দিতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেন। অফিসারদের ম্যানেজ করার নামে টাকা চাইলে আমরা সরল বিশ্বাসে তাকে প্রথমে 50 হাজার টাকা প্রদান করি।এর ভিতর আবার অভিযুক্ত সুধির পালের সাথেও মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে দালাল আব্বাস। গোপনে তাদের দ্বারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা রুজু করান। এমনকি ওই মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলা আমাদের নামে হয়েছে বলে থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে আব্বাসউদ্দীন আমাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় সাত লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। পরে তার চালচাতুরী আমাদের সন্দেহ হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। কিছুদিন পর এক লক্ষ টাকা ফেরত দেন। এখন টাকা, বাড়ি ভিটে তো গেছে উল্টো তার কাছে টাকা চাওয়ায় সম্পূর্ণ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলার আসামি বানিয়ে দালাল আব্বাস উদ্দীন আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমি টাকা ফেরত পাওয়া সহ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগ উঠেছে দালাল খ্যাত আব্বাস উদ্দিন মন্ত্রী, এমপি কিংবা রাজনৈতিক দলের কোন নেতা নন, নন কোন শিল্পপতি বা সরকারি কর্মকর্তা। তার একটিই পরিচয় সে কক্সবাজার থানা ও কোর্টের পেশাদার দালাল। আর ওই একটি পরিচয় তাকে করেছে সম্রাট, অসীম ও আকাশচুম্বি ক্ষমতার মালিক। তার অদৃশ্যে ক্ষমতার কাছে সবকিছুই তুচ্ছ, সে ইচ্ছে করলে দিনকে রাত ও রাতকে দিন বানাতে পারে। ইচ্ছে করলে মাদকসেবী ও দুধর্ষ সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে পারে আবার ইচ্ছে করলে নিরিহ সাধারণ মানুষকে যে কোন মামলায় ফাঁসাতে পারে। কিন্তু তার অদৃশ্যে ক্ষমতার দাপট কমে না।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, এই পেশাদারি দালাল সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দালালি করে আব্বাস এখন শাহেনশাহ বনে গেছে। তার সাথে রয়েছে কক্সবাজার থানার বিভিন্ন পদবীধারী অফিসারদের সাথে সখ্যতা ও নিয়মিত উঠাবসা। পুলিশের এ ক্ষমতা ব্যবহার করে উক্ত যুবক মাদক ও পতিতা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। কিন্তু অদৃশ্যে ক্ষমতার এ যুবক পুলিশের চোখে এখনও ভালো লোক।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্বাসের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযেগ করা হলেতিনি বলেন টাকা নিয়েছি এমন কোন প্রমান নেই যদি থাকে তাহলে লিখতে পারেন আর বিষয়টি নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবগত আছেন এবং তিনি বিচার করে দিয়েছেন।কিছু জানার থাকলে ওনাকে বলতে পারেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন উক্ত বিষয়টি নিয়ে থানায় একবার বিচার হয়েছিল। সমাধান করতে প্রয়োজনে আবার উভয়পক্ষকে ডাকা হবে।কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধী যত বড় ক্ষমতাধর হোক আইনের আওতায় আনা হবে।