রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫

কক্সবাজারে সরকারি নিয়ম অমান্য করে এলজিইডির এইচবিবি সড়ক নির্মাণ

আপডেট:

এম এ সাত্তার, কক্সবাজার:
দেশের প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হেরিং বোন (এইচবিবিকরণ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। কক্সবাজার সদরস্থ পিএমখালীর ছনখোলা নয়াপাড়া এলাকায় চলমান

হেরিং বোন (এইচবিবিকরণ) প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছে সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়। এ সড়ক নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি  প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ছনখোলা নয়াপাড়া সড়কের পিএইচ-০০ হইতে ১৩০০ মিটার ইটের সলিং কাজে এ অনিয়ম করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে সিডিউল অনুযায়ী সড়কটি নির্মাণকাজে রোলার ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও প্রকল্প দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এলজিইডি সংশ্লিষ্টদের মৌখিক অনুমতিতে এ রাস্তা নির্মাণকাজে রোলার ব্যবহার না করে দায়সারাভাবে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অনিয়মের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া নির্মাণকাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

দরপত্র অনুযায়ী আগে বালু ব্যবহার করে রোলার দিয়ে সমান করে ইটের সোলিং এরপর একটি ইট খাড়া করে দেওয়ার কথা থাকলেও বালু দেয়ার পর রোলার না করেই ইট বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোলার না করার ফলে রাস্তার বিভিন্নস্থানে গর্ত দেখা দিয়েছে। এইচবিবি দ্বারা নয়াপাড়ার গ্রামীণ এই রাস্তা নির্মাণে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি এবং রোলার ব্যবহার না করে রাস্তা নির্মাণ করার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

দেখা যায়, ঠিকাদারের নিযুক্ত শ্রমিকরা সড়কে সলিং করে বালু দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। পাহাড় কাটার মাটি ১/২ গজ পরপর স্তুপ করা আছে। বালির বদলে এ পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করছে। যানবাহন চললে রাস্তা ডেবে যাওয়ার ছক (চিহ্ন) দেখা গেছে।

একটি সূত্র জানায়, পিএমখালী রেঞ্জ দীঘিরঘোনা বন বিটের লোকজনকে ম্যানেজ করে এ রাস্তা কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে পাহাড়ের মাটি সংগ্রহ করে দিচ্ছে স্থানীয় কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি। মাসিক মাসোহারা চুত্তি থাকাই পাহাড় কেটে মাটি ও বালি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন বা বনবিভাগের লোকজন। উল্টো ইনফর্মার কারীদের তথ্য ফাঁস করে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ কারবারিদের লেলিয়ে দেন বনবিভাগের লোকজন।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা শেষে রাস্তার কাজ শুরু হলেও রাস্তাটি কতদিন টিকবে তা বলা মুশকিল। রাস্তা নির্মাণে রোলার তো ব্যবহার করছে না, নিম্নমানের ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে আবার পাহাড়ের মাটি। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার মাটি ধুয়ে যাবে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাফ জবাব ঠিকাদার আমাদের কাজের জন্য যা সরবরাহ করছেন আমরা তা দিয়েই কাজ করছি।

নয়া পাড়ার বাসিন্দা তাজ উদ্দিন ড্রাইভার বলেন, দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদারকে কাজ করতে বলা হলে এলাকার মানুষের কোন কথায় কর্ণপাত না করে পাহাড়ের মাটি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ডাম্পার গাড়ি নবনির্মিত রাস্তা দিয়ে যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে রাস্তার ৩/৫ ইঞ্চির নিচে ডেবে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পান। রোলার ব্যবহার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। সেজন্য সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখার তাড়া দেয়া হয়। এখবর এলজিইডি অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানুষকে ভুলভালিয়ে জানান দেয়, সিডিউল অনুযায়ী এ রাস্তার কাজে রোলার ব্যবহারের কথা থাকলেও এই মুহূর্তে রোলার পাচ্ছে না। তাই আপাতত রোলার ছাড়া এভাবেই কাজ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানায়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় ২০২০ অর্থবছরে পিএমখালীর ছনখোলা নয়াপাড়া সড়কের ১৩০০ মিটার সলিংয়ের জন্য প্রায় ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওআর এন্ড সন্স সম্প্রতি সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করেন।

২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, সড়কটি নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ শুনে তিনি সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পেয়ে এর প্রতিবাদ করেন। এ বিষয়ে রাস্তা কাজে দায়িত্বরত এলজিইডি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ  করলেন। সে রোলার পাচ্ছে না বলে অপারগতা প্রকাশ করে আপাতত কাজ করে যেতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানায়।

মো. সেলিম, সিরাজ উদ্দিন ও শাহ আলমসহ একাধিক এলাকাবাসী জানায়, সড়কটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কোন কর্মকর্তাকে কাজটি তদারকি করতে দেখা যায়নি। যে কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোলার ব্যবহার না পাহাড়ের মাটি দিয়ে রাস্তার কাজ করছে। তাদের অভিযোগ, কাজটির তদারকিতে থাকা কর্মকর্তা ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই জগন্যতম অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এ সময় এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের কাছে অনিয়মের মাধ্যমে করা এ কাজ বন্ধ রেখে সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানার জন‌্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মাসুদ পারভেজের মুঠোফোনে কল করলে রিং হলেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

অনিয়মের বিষয়ে এলজিইডি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন এইচবিবি রাস্তা নির্মাণে কোথাও রোলার ব্যবহার করা হয় না। এমনকি অনেকে পানি পর্যন্ত ব্যবহার করেনা। এখানে রাস্তায় পানির ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তা দেবে গেলে বা কোথাও নষ্ট হয়ে গেলে কন্টাক্টারের মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হবে।

উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মং এমং মার্মা মং জানান, সে একটি অভিযানে অলরেডি রয়েছেন। ওখানেও যেকোন সময় অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ ডাম্পার ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জড়িতদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) তহিদুল ইসলামকে বিষয়ে অবহিত করা হলে সে মিটিংয়ে আছে জানিয়ে ফোন রেখে দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার সুমাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, যে কোন কাজে পাহাড়ের মাটি বালি দেওয়ার অনুমতি কাউকে দেয়নি সরকার। রাস্তা নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত