কক্সবাজারে বিক্রি হচ্ছে সরকারি নিষিদ্ধ ওষুধ রেনিটিডিন

এম এ সাত্তার, কক্সবাজার: 
রেনিটিডিন গ্রুপ জাতীয় ঔষধে ক্যান্সারের জীবাণু উৎপাদনের উপস্থিতি থাকার কারণে তার উৎপাদন ও বেচা বিক্রি না করার জন্য সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কক্সবাজারে ফার্মেসীতে প্রকাশ্য বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাস্ট্রিকের (রেনিটিডিন নামীয়) ওষুধ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও শহরের সর্বশ্রেণী পেশার শতকরা ৮০% মানুষ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ব্যাপক হারে এই ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন। ওষুধের জগতে জনপ্রিয় অতিপরিচিত একটি ঔষধের নাম রেনিটিডিন।

যে ঔষধ যে কোন মানুষ ফার্মেসীতে গিয়ে কোন প্রেসক্রিপশনছাড়া মুখে বলে বলে আমাকে এক পাতা গ্যাসের ওষুধ বা রেনিটিডিন দেন বলে কিনে খাচ্ছে যুগপৎ। এমন সহজলভ্য শস্তা ওষুধ ব্যাপারে হটাৎ সরকারিভাবে বেচাবিক্রি না করার নির্দেশনা দিলেও দেশের বাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেওয়াকে চ্যালেঞ্জ মনে করতেছেন অনেকে। তারা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে অহরহই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক কম দামের এ ওষুধটি। তাই দীর্ঘদিন রেনিটিডিনে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে সবার আগে। আর বর্তমান যে কোন ওষুধের মুল্য মানুষের নাগালের বাইরে। এ জাতীয় একটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ৫ টাকার নিচে নেই। সেই সাথে উক্ত ওষুধটি পারপিচ খুচরামূল্য ৩ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছিল। তার আবার এই ওষুধের বিকল্প কোন ওষুধ বের না করে হঠাৎ সরকারিভাবে এ ওষুধ বেচা বিক্রি ও উৎপাদন বন্ধ ঘোষনা করার কারণে সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে বলতে শোনা যায় দ্রুত এ ওষুধের বিকল্প ওষুধ বাজারে বের করে রেনিটিডিনের বিক্রি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার মনে করেন তারা।

আবার অধিকাংশ মানুষ তরিৎ সরকারি এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে দেশের সাধারণ অনেক মানুষ অকালে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবে বলে সরকারি নীতিনির্ধারকদের প্রতি সাধুবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে রেনিটিডিন ওষুধ খাওয়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার খবরে এক প্রকার আতঙ্কিত ও হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে সিংহভাগ মানুষ বা ক্রেতাই জানে না এ খবর।
বুকজ্বালা-পোড়া বা ‘গ্যাস্ট্রিক’ বলে প্রচলিত রোগটির জন্য যে ঔষধটি অনেকে নিয়মিত খেয়ে থাকেন সেই রেনিটিডিনের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে, এমন আশংকায় বিশ্বের অনেক দেশে ঔষধটি বাজার থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে।এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। একই সঙ্গে এই ঔষধটির মধ্যে সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) এক সতর্কতা জারির পর এই উদ্যোগ নিলো বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি খুচরো বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সিভিএস এরই মধ্যে এটির বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যানাডা এবং ফ্রান্স এরই মধ্যে জ্যানটাক নামে বিক্রি হওয়া রেনিটিডিন বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই ঔষধটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তদন্ত শুরু করেছে বিশেষজ্ঞরা এবং এসব দেশের কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঐ ঔষধটি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন ঝুঁকি নেই। তবে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রেনিটিডিনের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন ঔষধ গ্রহণ করতে বলছেন।

কেন এই সন্দেহ : এফডিএ এবং ইউরোপের ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) গত ১৩ই সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, রেনিটিডিন ঔষধটিতে ‘এন নাইট্রোসোডিমিথাইলামিনের (এনডিএমএ) উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখছে তারা ।এনডিএমএ নামের এই উপাদানটি মানুষের দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। এই উপাদানটি প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে এরকম একটা ধারণায় উপনীত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।পানি, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শাক-সব্জি সহ আরও অনেক খাবারে এনডিএমএ আছে স্বল্প মাত্রায়। তবে খুবই স্বল্পমাত্রায় এনডিএম মানুষের শরীরে সেরকম কোন সমস্যা তৈরি করে না।রেনিটিডিন ঔষধটি মূলত যারা পাকস্থলীর আলসার বা বুকজ্বালা-পোড়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য। যে কোন ঔষধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এটি কেনা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here