এম এ সাত্তার, কক্সবাজার:
কক্সবাজার সদর খুরুশকুলে তৈরি করা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ১৩৯ টি ভবনের মধ্যে ২০ টির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে চলমান ২০টি ভবনের কাজ শেষ হলে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ২ শত ৫৪ একর জমিতে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে থাকছে ৫ তলা বিশিষ্ট ১৩৯ টি ভবন ও ১০ তলা বিশিষ্ট ১ টি শেখ হাসিনা টাওয়ার। এখানে আশ্রয় পাবে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার। এছাড়া আরো থাকছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারি পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল, স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনোদনের জন্য পার্ক।
পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায় নির্মিত হবে একটি শুটকি পল্লী।
খুরুশকূল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মূল শহরের সাথে সংযোগের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।
সম্প্রীতি খুরুশকূল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বিমান বাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত,কক্সবাজার সদর-রামুই আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমান, পিআইসি কমিটির সভাপতি ও খুরুশকূল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
পিআইসি কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় খুরুশকূল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ৫ তলা বিশিষ্ট ২০টি ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি ভবনে ৩২টি করে ২০টি ভবনে মোট ৬৪০ টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত রয়েছে। একটি পরিবারকে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্ধ দেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মিত এসব ফ্ল্যাটে আশ্রয় পাবে ৬৪০ পরিবার। পুরোদমে চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ১০ তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা টাওয়ারসহ অন্যান্য ভবন নির্মাণের কাজও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিমান বন্দরটি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বিমানবন্দরের আশেপাশের সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত নাজিরারটেক, কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খুরুশকূলে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবনগুলোতে এসব এলাকার খাস জমিতে বসবাসকারি পরিবারগুলোকে সরকার আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
গত ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বাঁকখালী নদী মোহনার পাশে প্রায় ২ শত ৫৪ একর জমিতে এই ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সরকার। পরে ২০১৭ সালের মার্চে কার্যাদেশের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুত এগিয়ে চলছে এ প্রকল্পের কাজ। ইতিমধ্যে মধ্যে মাটি ভরাট, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ২০ টি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আশপাশের খাস জমিতে বসবাসকারি লোকজন ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও তারা সরকারের নিকট তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান। এ অবস্থায় তাদের সব দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে তাদেরকে স্থায়ী বসবাসের পাশাপাশি আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে সব ব্যবস্থা যখন চালু হবে তখন তাদের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। নির্মিত ভবনগুলো যে কোন সময় উদ্বোধন করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য,গত ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও চকরিয়াসহ জেলার উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার কক্সবাজার বিমানবন্দরের আশাপাশের এলাকায় খাস জমিতে বসবাস করে আসছিল। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার ফলে এসব পরিবার যাতে আবারো উদ্বাস্তু না হয় এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের কয়েকটি বিভাগ যৌথভাবে কাজ করছে।