রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫

অবশেষে টাকা দিয়ে ধামাচাপা, বেচেঁ গেলে ভুয়া ডাক্তার সেলিনা

আপডেট:

আনোয়ারা প্রতিনিধিঃ
আনোয়ারা উপজেলার কর্ণফুলী থানাধীন দক্ষিণ বন্দর মহালখান বাজার এলাকার এক ভুয়া গাইনি ডাক্তার পরিচয়ে দীর্ঘকালযাবত বিভিন্ন মহিলাদের নরমাল ডেলিভারি এবং সিজারের মত কাঁটাছুরি দিয়ে সিজার অপারেশনের নামে অপচিকিৎসা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অনেক অভিযোগ!

গতকাল ৮ জানুয়ারি বুধবার দুপুরবেলায় তার অপচিকিৎসায় একজন প্রসূতি মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

ঘটনা সুত্রে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে, সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ভুয়া গাইনী ডাক্তার সেলিনার গেইটে ডাক্তার সেলিনা নামের একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে৷ ভিতরে ঢুকতেই একটি গোয়াল ঘরের মত একটি রুম৷ এই রুমেই হাতুড়ে ডাঃ সেলিনা ডেলিভারি করেন ছলিমা আক্তার(৩১)নামের এক প্রসূতির ৷ নোংরা রুমের ভেতর সিটে পড়ে থাকতে দেখা যায় ছলমার লাশ ৷ পাশের রুমে রক্তভর্তি পেয়ালা ও ইনজেকশন সহ কিছু ধরালো সিজারের মতো যন্ত্র ও হাতুড়ি দেখা যায়।

ছলিমা আকতার (৩১) আনোয়ারার জুইদন্ডী খুরুসকুল এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের হাজির বাড়ির ফোরক আহমদের স্ত্রী। তিনি সাড়ে ৪ মাসের গর্ভবতী ছিলেন বলে জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

মৃত ছলিমা আকতারের ভাই মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন,আমি এবং আমার বোন ছলিমা আক্তারের স্বামী ফোরক আহমদ ছলিমাকে নিয়ে উনার কাছে গেলে উনি রোগী দেখে ডেলিভারি করানোর জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করলেও পরে সাড়ে তিন হাজার টাকায় নরমাল ডেলিভারি করতে রাজী হন । পরে আমাদেরকে বাহিরে রেখে আমার বোনকে রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ৩০ মিনিট পরে উনি এসে জানান ছলিমা অজ্ঞান হয়ে গেছে তাকে তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ তিনি একটি কাগজও লিখে দেন।।

নিহতের স্বামী ফোরক আহমদ জানান,আমার স্ত্রী ছলিমাকে আল্ট্রাসন করালে সাড়ে চারমাস বয়সী থাকা অবস্থায় বাচ্চা মারা গেছে বলে জানা গেলে আমরা সুস্থভাবে উনার এখানে এসেছিলাম,উনি ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাওয়ার ৩০মিনিট পর বের হয়ে রোগী অজ্ঞান বলে আমাদেরকে তাড়াহুড়ো করে চট্টগ্রাম মেডিকেল যেতে বললেও আমরা শিকলবাহা কলেজ বাজারের একটা ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা ছলিমা মারা গেছে এবং তার পেঠে বাচ্চা নেই বলে জবাব দেন।

শেষমেশ স্থানীয় প্রতিনিধি এবং উভয় পক্ষের সালিশি বৈঠকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার সমাধানে নগদে ৫০ হাজার ব্যাংকের চেকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে গতকাল রাত ১১.৩০ মিনিটের দিকে ছলিমার লাশ এম্বুলেন্স করে জুইঁদন্ডীর খুরুস্কুল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন আজ তার জানাযা সম্পন্ন হবে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ভুয়া ডাক্তার সেলিনা আকতার (৬৫) পরিবার পরিকল্পনার অবসরপ্রাপ্ত মাঠকর্মী ছিলেন বলে জানা যায়।স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি নিজেকে গাইনি ডাক্তার বলে পরিচয় দেন এবং নিজেরমত করে অপচিকিৎসা অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সে ডাক্তার পরিচয়ে তার অপচিকিৎসায় এক বছর আগেও এক প্রসূতির মৃত্যু হয়৷ ওই মহিলার ভাই বারশত ইইউনিয়নের বাসিন্দা হাফেজ শফিউর রহমান বলেন চার বছর আগে আমার বোনকে মেরে ফেলেছেন ঐ ভুয়া ডাক্তার সেলিনা। আজ আবারো এক জন মহিলাকে মেরে ফেলছে তারপরেও তাকে কোন শাস্তি না দিয়ে ভুল করতেছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ আপনারা কিছু একটা করুন এবং ডাক্তার নামধারী সেলিনার সকল চিকিৎসা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি, আশা করছি প্রশাসন যথাযথ ব্যাবস্থা নিবেন।

এ ব্যাপারে কথিত গাইনি ডাক্তার সেলিনা বলেন, আমি পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মী ছিলাম। দুইজন পুরুষ আমার কাছে একটি মহিলাকে আনার পর চেক করতে গিয়ে দেখি সে জ্ঞান হারিয়েছে। তার স্বজনদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বললে তারা না নিয়ে এখানে আমার জন্য সালিশ ডেকেছে।

এমবিবিএস চিকিৎসক না হয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে নোংরা পরিবেশে ডেলিভারী করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন আমি আজকে অনেক বছর যাবত এখানে ডেলিভারি করে আসতেছি,কিন্তু ওনাকে আমি স্পর্শ করিনি,আপনারা এখানে এসে আমার বিরুদ্ধে কেন লেগেছেন।

ডেলিভারি না করালে রুমে স্যালাইন ব্যাগ, পেয়ালাভর্তি রক্ত এবং হাতুড়ি কেন দেখা যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে চলে রুমে যান।

বন্দর পুলিশ ফাড়িঁর এস আই শাহ আলম সুমন জানান,কোন ব্যক্তি ৯৯৯ ফোন দিলে আমাদের কাছে এক ভুয়া চিকিৎসক ডেলিভারি করতে গিয়ে রোগি মারা যান বলে খবর আসে,আমরা ততক্ষণাত গিয়ে উত্তেজিত সবাইকে শান্ত করে,ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং দুপক্ষের স্থানীয় গণ্যমান্য প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে বিষয়টি সমাধান করি৷ এই ঘুটনায় কোন মামলা হয়নি।তবে তার ডেলিভারি রুম সিলগলা করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত